সোনাগাজীতে বিয়ের সদাইয়ের জন্য গিয়ে নিখোঁজের প্রায় ১৪ বছর পর মোস্তাফিজুর রহমান খোকাকে (৪৪) ফিরে পেলো তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) রাঙামাটির তবলছড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় থেকে তাকে বাড়ী নিয়ে আসা হয়। মোস্তাফিজুর রহমান খোকা ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের পালগিরি গ্রামের জালাল মেম্বার বাড়ীর মৃত আবদুর রাজ্জাকের ছেলে।
দীর্ঘ ১৪ বছর আগে খোকা তার বিয়ের ও গায়ে হলুদের (বাজার-সদাই) কাপড় কেনার উদ্দেশ্যে ফেনীর দিকে যায়। বাড়ীতে ফিরে না আসলে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি। হারিয়ে যাওয়ার পর সোনাগাজী মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরিও করা হয়।
কক্সবাজার তাকে দেখা যায় এমন তথ্য তাদের দেয় প্রতিবেশী। এরপর খোকার মা নুরজাহান (৭০) ও তার বোন বিবি রহিমা নাজমা সহ কক্সবাজার খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কক্সবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এবং অনলাইন ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রচার করেও সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত মার্চ মাসে খোকার পাশের বাড়ীর জামশেদ মেস্ত্রীর দৌহিত্র আকাশ মার্কেটিং লাইনে কাজ করার সুবাধে রাঙামাটি এলাকায় মোস্তাফিজুর রহমান খোকাকে একটি চা দোকানে দেখতে পায়। বিষয়টি খোকার পরিবারকে জানালে তখন থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে খোকাকে ফিরে পেতে সহযোগিতা চেয়ে অনলাইনে প্রচার করে। এরপর আকাশকে ছবি ও ভিডিও করে দিতে বলা হলে সে ২৫ মে খোকার বসে থাকার ভিডিও পাঠায়। তারই ধারাবাহিকতায় ঠিকানা অনুযায়ী গিয়ে তাকে রাঙামাটি তবলছড়ি কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় পাওয়া যায়।
সেখানে মোস্তফা নামের এক ব্যক্তির বাড়ীতে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সদস্য আবু সুফিয়ান, নুর আলম, বিবি রহিমা নাজমা সহ ৮জন আইডিকার্ড ও তৎকালীন সময়ের ছবি নিয়ে যায়। তাবলছড়ি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে খোকাকে ৩০মে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ফেনীর সোনাগাজীতে নিয়ে আসা হয়।
জানাযায়, মোস্তাফিজুর রহমান খোকা ২০১০ সালে সমবায় বাজারে কনফেশনারী দোকান করতো। একই বছরের শেষের দিকে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের পালগিরি গ্রামের কমলা বেগমের সাথে বিয়ে ঠিক হয়। গায়ে হলুদের বাজার-সদাই করতে গিয়ে হারিয়ে যাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান খোকার জন্য ৩মাস অপেক্ষা করে ছিলো কমলা বেগম। পরবর্তীতে তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দে পরিবার। সেখানে তার দুইটি সন্তান রয়েছে। এরপরও খোকাকে৷ খুঁজে পাওয়ার সংবাদ শুনে দেখার জন্য আসে তারা। এছাড়াও খোকাকে একনজর দেখার জন্য দিনরাত এলাকাবাসী ভীড় জমাচ্ছে।
মোস্তাফিজুর রহমান খোকার হারিয়ে যাওয়ার পূর্বের কোন ঘটনাই বলতে পারছে না। পরিবারের ধারণা কেনাকাটা করার জন্য যাওয়ার পথে হয়তো অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে এ সমস্যা হতে পারে।
খোকার মাতা নুরজাহান বেগম বলেন, আমার কলিজার সন্তানের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। প্রতিদিন রাতে তার থাকার ঘরের খাটে বিছানা ঠিক কর দিতাম। আমার বিশ্বাস ছিলো। আমার খোকা আমার কোলে আসবে। আমি মনে করেছিলাম সে অনেক কষ্টে আছে। কিন্তু তাকে রাঙ্গামাটির ঐখানকার লোকজন খুব আদরে রেখে।
খোকার বোন বিবি রহিমা নাজমা বলেন, আমার ভাই তার বিয়ে ও গায়ে হলুদের মার্কেটিং করার জন্য ফেনী যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। সেসময় থেকে সকল জায়গায় খোঁজ করেছি। থানায় সাধারণ ডায়েরী করছি। ১৪বছর পর আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান খোকাকে পেয়ে আমরা পরিবারের সবাই আনন্দিত।
মোস্তাফিজুর রহমান খোকাকে খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ান নিশ্চিত করেছেন।
খোকার মামাতো ভাই নুর আলম বলেন, বিয়ের একদিন আগে হারিয়ে যান খোকা ভাই। তিনি এলাকায় সবার সাথে সুন্দর করে চলতো। আমরা তাকে তাবলছড়ি থেকে আনতে গেলে সেখানেও সবাই খোকা ভাইয়ের সুনাম করে।
তবল ছড়ি উপজেলার কন্ট্রাক্টর বাচ্ছু ভূইয়া বলেন, আমি বাজারে একটি কাজ করাতে গিয়ে খোকার সংবাদ পাই। এরপর তাকে আমি আমার সকল কাজে রাখতাম। সে ভালো কাজ করতো। কারো সাথে মন্দ আচরণ করতো না।
সম্পাদনাঃ আরএইচ/এএইচ