নিঝুম রাতে নিঝুম দ্বীপে! • নতুন ফেনীনতুন ফেনী নিঝুম রাতে নিঝুম দ্বীপে! • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নিঝুম রাতে নিঝুম দ্বীপে!

সালেহ আব্দুল্লাহসালেহ আব্দুল্লাহ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:৫৩ অপরাহ্ণ, ২৫ নভেম্বর ২০২০

নিঝুমদ্বীপ নিয়ে অনেক দিনের একটা হাইপ ছিলো অবশেষে খুব ভালো ভাবে পূর্ণ হলো। দুই রাতের ক্যাম্পিং,সব তাবুর মাঝে আগুন জ্বলছে, বনের মাঝে আমাদের একমাত্র আলো দিচ্ছে চাঁদ মামা। সেই আলোতে আমরা বসে গেছি কার্ড নিয়ে, খেলার মাঝে চলছে চায়ে চুমুক দেয়া। পূর্ণিমা আসতে আরো ৩/৪ দিন বাকি তাই যত রাত বাড়ছে আস্তে আস্তে চাঁদ মামা মাথার উপর থেকে সরে গাছের আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে। আর আস্তে আস্তে অন্ধকার আমাদেরকে বনের মাঝখানে আবদ্ধ করে নিচ্ছে।

তাবুর ভেতরে কার্ড খেলা…

পরের দিন ভোরে উঠেই নিঝুমদ্বীপে দাপিয়ে বেড়াতে হবে তাই কিছুটা হলেও ঘুমের দরকার। সবাই যখন স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে ঘুমে ঢলে পড়েছে রাত তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে। চারপাশ একদম শান্ত, বনের ঠিক মাঝখানে ছোট্ট একটা তাবুতে শুয়ে আছি, বাতাস আসলেই গাছের পাতা নড়াচড়ার শব্দ আসছে কানে আবার বাতাস না আসলেও আসছে! গাছে বসে থাকা পাখিরা হয়তো মাঝে মাঝে নড়েচড়ে উঠছে বলেই শব্দের সৃষ্টি হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পরেই মনে হলো কেউ বুঝি তাবুর একদম গা ঘেঁষে দৌড়ে চলে গেলো। আরো সচেতন ভাবে কান খাঁড়া করে দিলাম আসল ব্যাপার বুঝার জন্য। চারপাশের নিরবতা দেখে বনের শিয়াল মামারা বের হয়ে এসেছে। রাতে বার্বিকিউ শেষে মুরগির হাড় চিবিয়ে ফেলেছিলাম সে সব খেতে এসেছে। ঠিক তখন পাশের তাবু নড়েচড়ে উঠলো। হয়তো কেউ ঘুমের মধ্যে একপাশ থেকে অন্য পাশে কাত হতে গিয়েছে আর তখনই শিয়াল মামারা আবার বনের মাঝে হারিয়ে গেছে।

নিঝুম দ্বীপের সকাল…

মোবাইলের এলার্মের শব্দেই ঘুম ভাঙলো। তাবুর জিপার খুলে দিতেই সূর্যমামা দেখা করতে হাজির হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ শুয়ে তারপর বসে বসে সূর্য মামার তেজস্বীতার যৌবন লাভ দেখলাম। জীবনের সেরা কিছু সময় নিজেকে উপহার দিতে পেরেছি মনে হচ্ছে।

সকালের নাস্তা সেরে নামার বাজার সী বিচে চলে গেলাম। সেখান থেকে ফিরে বাজারের আশেপাশে ঘুরে দুপরের খাবার খেয়ে এবার নৌকা ভাড়া করে বের হলাম কবিরাজের খাল এবং চৌধুরী খাল হয়ে হরিণেন পাল দেখার জন্য। নৌকা থেকে নেমে বনের ভেতর প্রায় দেড় ঘন্টা ট্রেকিং করে একটা পুকুর পেলাম যেখানে হরিণ পানি খেতে আসে। নাহ আমরা সেখানে হরিণ পাইনি। ঐ দিকে সন্ধ্যা নেমে আস্তে আস্তে বন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে৷ আমরা খবর নিয়েছি যে সন্ধ্যার সময় হরিণ পানি খাওয়ার জন্য পুকুর কিংবা খালে আসে তাই টর্চ লাইট সাথে নিয়ে গেছি। একেবারে হতাশ হতে হয়নি টর্চের আলোয় আমরা হরিণ দেখেছি ফেরার পথে।

লেখকসহ তার দল…

আরেকটা সুন্দর রাত আবার তাবুতে। পরের দিন সকালে উঠে এবার ফেরার তাড়াহুড়ো। নিঝুমদ্বীপ ছেড়ে আসলাম হাতিয়ার সর্বদক্ষিনের তুমুরুদ্দিন ঘাটে। সেখান থেকে বাইকে পুরা হাতিয়া দেখতে দেখতে হাতিয়ার উত্তর মাথার নলচিরা ঘাটে যেতে হবে। এক বাইকে দু’জন করে যাত্রা শুরু। মাঝ পথে একটা বাইক এক্সিডেন্ট করে বসে। হটাৎ একটা কুকুর এসে বাইকের নিছে ঢুকে যায়।
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে বড় বিপদ থেকে বেঁচে গেছে আমাদের দুই জন সহযাত্রী। হাত,পা এবং শরীরের কয়েক জায়গায় চামড়া উঠে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে নিতে আমরা সিট্রাক মিস করি। অগত্যা উপায় না দেখে বড় ইঞ্জিন বোটে চেয়ারম্যান ঘাটে আসি। আসার পথের ঐ এক্সিডেন্ট বাদে খুবই অসাধারণ একটা ভ্রমণ শেষ করে সন্ধায় মহিপাল পৌঁছাই।ভ্রমণের সব সহযাত্রী ছিলো একে অপরের প্রতি অনেক সহানুভূতিশীল।

পড়ায় মগ্ন লেখক…

খারাপ দিক- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সন্দীপ এর তুলনায় নিঝুমদ্বীপের মানুষ গরীব। তাদের বেঁচে থাকার উপায় চাষ আর মাছ ধরা। আবার অনেকেই জানেন হয়তো তারা একবার মাছ ধরতে সমুদ্রে গেলে ১০-১২ দিন থাকেন। ফিরে এসে আবার সুমুদ্রে যান ১০-১৫ দিন কিংবা আরো পরে। এই যে মাঝের সময়ে তারা নৌকা চালান। টেনেটুনে পরিবার চালান। এসব কারণেই হয়তো তারা পর্যটক দেখলেই চুরি নিয়ে জবাই করে দাড়িয়ে যায়, মানে ২০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা, ৮০০-১০০০ টাকার নৌকা ভাড়া ১৫০০-২০০০

চৌধুরী খাল…

এখানে নৌকা সমিতি আছে, বাইক সমিতি আছে কিন্তু কোনটাই কার্যকর ভূমিকা রাখে না বলে যে যেমন পারে তেমন দাম হাকায়। এ ছাড়া কারো থেকে জিজ্ঞেস করে সঠিক তথ্য পাওয়া মানে আপনি বিশাল সৌভাগ্যবান। সবাই নিজের লাভের কথা চিন্তা করে তথ্য দেয়। স্থানীয় পথের তথ্য দিবেই না বরং স্থানীয় পথের ভয় দেখিয়ে আপনাকে আলাদা পথে যেতে উৎসাহিত করবে যাতে করে তাদের নৌকা রিজার্ভ নেন।

আমি ফেনীর মানুষ। শতভাগ বিশুদ্ধ নোয়াখালীর ভাষায় কথা বলতে পারি তারপরেও টুপি পরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে তারা। এক কথায় নিঝুমদ্বীপের মানুষের আতিথিয়তা শতভাগ ব্যাবসার সাথে সম্পর্কিত।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.