বাংলাদেশের ঋতুতে শীতকালের ভালো প্রভাব পড়ে গ্রাম অঞ্চলে। মৌসুমী বিভিন্ন শাকসবজি, ফলমুলের পাশাপাশি খেজুরের রসের ব্যাপক চাহিদা থাকে। অন্যান্য জিনিসের তুলনায় খেজুরের রসের উৎপাদন কম থাকলেও এর চাহিদা অনেক বেশী থাকে। পৌষ ও মাঘ মাস রস সংগ্রহের সবচেয়ে সুন্দর সময়। রস সংগ্রহকে কেন্দ্র করে শীত শুরুর পূর্বেই পর্যাক্রমে খেজুর গাছ সাফাই করার দুই-তিন দিন পর গার্ড করেই নালি লাগিয়ে আবার দুই-তিনদিন পর রসের জন্য হাঁড়ি বসানো হয়।
প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকাল তিনটার মধ্যে হাঁড়ি বসানো হয় তা সারারাত গাছে ঝুলানো থাকে পরের দিন ভোরে গাছ থেকে হাঁড়ি নামানো হয়। এভাবে প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে একসাথে করা হয়। তা সূর্য উঠার পূর্বেই বাজারজাত করা হয়। দেরী হলে রসের মান ও স্বাদ নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এজন্য তাদের যাতায়াতের জন্য গাড়ি সহ যানবাহন পূর্বেই রেড়ি রাখতে হয়।
শীতের শুরুতে ১০-১৫টি গাছ মিলিয়ে এক কলস রস পাওয়া যায়। শীতের প্রকোপ বাড়ার সাথে সাথে রসের পরিমাণও বাড়তে থাকে। এবং শীতের পুরো মৌসুমে ২-৩ গাছেই পাওয়া যায় এক কলস। প্রতি কলসের পরিমান ১০-১২ লিটার। শীত শুরু ও শেষ মিলে প্রায় ৩মাস রস সংগ্রহ করা হয়। তবে তিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে সবচেয়ে বেশী রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। ৫০টিরও বেশী গাছ থাকা ব্যক্তিরা প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫টি কলস করে রস বিক্রি করেন। কলস প্রতি যার দাম ধরা হয় ৩-৫ শত টাকা।
শাহ আলম জানান, বছরের অন্য সময় বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও বাংলা সনের পৌষ ও মাঘ মাস অর্থাৎ শীতকালে পুরোপুরি সময় দেন খেজুরের রস সংগ্রহ ও বিক্রির কাজে। তার প্রায় ৬০টি ছোটবড় খেজুরের গাছ রয়েছে। এসব গাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ কলস রস সংগ্রহ করে তা বিক্রি করেন।
ফিরোজ মিয়াজী বলেন, শীতকালের পরিবারের সবার সহযোগিতায় খেজুরের রস সংগ্রহ করেই পারিবারিক চাহিদা মেটাচ্ছেন। তাদের বাড়ীর আশপাশের এরিয়ায় প্রায় ৮০টি খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে তা সোনাগাজী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেন নিজ দায়িত্বে। পাশাপাশি অর্ডার করা ফেনী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খেজুরের রস দিনের প্রথম প্রহরেই পৌছে দেয়া হয়।
সোনাগাজীর চরদরবেশ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আদর্শগ্রামের এলাকায় সজিব রায়হান, শহিদুল ইসলাম, সবুজ, বেলাল, কালাম, জাহাঙ্গীর, ডালিম, আব্দুর রহমান, কামাল সহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে ১৫০-২০০ কলস খেজুরের রস সংগ্রহ করে নিজেদের চাহিদার পাশাপাশি বাজারজাত করে থাকেন।
খেজুরের রস বিক্রি করে এমন অনেকই নিজের পারিবারিক চাহিদা মেটাচ্ছেন। শীতকালে অনেক পরিশ্রম করেই তারা তা বিক্রির জন্য যখন সোনাগাজী পৌর শহর সহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার জন্য রওয়ানা করেন তখন তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে রাস্তা নিয়ে। রাস্তার অবস্থার খারাপের কারণে প্রতিদিন কয়েক কলস রস পড়ে যায়। এবং দীর্ঘ সময় ক্ষ্যাপনের ফলে রসের মান ও স্বাদও নষ্ট হয়ে যায়। তাই সবাই ৮নং সুইজ পাকা রাস্তার মাথা থেকে আদর্শগ্রামের বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি মেরামত করার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ করেন।
প্রায় দুইহাজারের মত খেজুরের রস অর্ধশতাধিক ব্যক্তিরা সূর্যদয়ের পূর্বে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলে। এতে করে তাদের পারিবারিক চাহিদার পাশাপাশি বাজারজাতের কারণের এর সুফল অনেকেই পাচ্ছেন। এঅঞ্চলের খেজুরের রস অত্যন্ত সুস্বাদু এবং রসের সাথে তারা কোনো পানি না মেশানোয় এলাকার একটা পরিচিত লাভ করেছে। পাশাপাশি রস থেকে গুডও তৈরী করা হয়।
সম্পাদনা:আরএইচ/এএইচআর