বজলুর রহিম ভূঁইয়া সুমন।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হককে লিখেছিলাম ছোট্ট এক টুকরো চিঠি। যতটুকু মনে পড়ে চিঠিতে লিখা ছিল –
শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ভাইয়া,
সালাম ও শুভ কামনা রইল। বেশি কথা লিখে অজ্ঞতার পরিচয় দেবোনা, কেননা আপনি একজন ব্যস্ত ও কাজের মানুষ। আপনার মনে আছে কিনা জানিনা আমার বাড়ী দাগনভূঞায়। আমি আপনার দাগনভূঞার সংবর্ধনায় ছিলাম, কিন্তু দেখা করা হয়নি। কারণ আমি তখন পেশাগত দায়িত্বকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। আপনার বক্তব্য থেকে জাতীকে ম্যাসেজ দিতে চেয়েছিলাম। পরে অবশ্য চেষ্টা করেও একজন স্বপ্নবান্ধব মেয়রের ভক্তদের ভিড়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম। প্রশাসনের প্রটোকলও সেদিন বাঁধ সেঁধেছিল আমার চেষ্টায়।
ইতি
আপনার ছোট ভাই
সুমন
২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে মেয়র আনিসুল হকের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছিল। তাঁর মালিকানাধীন মোহাম্মদী গ্রুপের কর্পোরেট অফিসে। অফিসটি উত্তরা লোটাস কামাল টাওয়ারের ৮ তলায়। তখন দুপুর ঘনিয়েছে। আমি ওয়েট করছিলাম তাঁর সাক্ষাতের। আমাকে সাক্ষাৎ দিতে তাঁকে ফোন করেছিল তাঁর এক নিকট আত্বীয় ও বন্ধু। দুপুর সোয়া একটায় তিনি অফিসে ঢুকলেন। প্রবেশপথের পাশেই ভিজিটর ওয়েটিং রুম। তিনি হঠাৎ ওয়েটিং রুমের সামনে এসে দাঁড়ালেন, আমাকেই জিজ্ঞেস করছিলেন তুমিই সুমন? আমি উত্তর দিলাম-জ্বি স্যার। আমাকে ইশারা করলেন আর অমনিই আমি তাঁর পেছন পেছন মৃদু দোঁড় দিলাম। তাঁর কক্ষে (অফিসে) প্রবেশ করলাম। তিনি বললেন স্যার নয়, আমাকে ভাই সম্ভোধন করলেই বেশি খুশি হই। এরপরই বললেন অযু করে নাও। আমরা আগে নামায আদায় করবো, তারপর কথা হবে, কেমন? আমি বললাম, জ্বি স্যার। চশমার ওপর দিয়ে আমার দিকে তাকালেন, মৃদু হাসলেন। আমি লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে গেলাম।
প্রায় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ১টা ৩০ মিনিটে জামাতে জোহরের নামায আদায় করলেন। আমি আবার ওয়েটিং রুমে গিয়ে বসে পড়লাম। অফিসে গিয়ে আনুমানিক ১৫ মিনিট পরেই আমাকে ডেকে পাঠালেন। কথা শুনলেন, বললেন। ব্যক্তিগত কাজটি তাৎক্ষনিক করে দিলেন। খেতে দিলেন, খেলাম; অতপর ফিরে আসার অনুমতি চাইলে বললেন আমি বেশিরভাগই দেশের বাইরে থাকি। আমিও একটি টিভি চ্যানেল করবো। তুমি যোগাযোগ রাখবে, আসবে; তবেই সম্পর্ক দৃঢ় হবে।
২০১৫ সালে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর আনিসুল হককে দাগনভূঞায় সংবর্ধনা দেয় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ। দৈনিক ফেনীর সময়ের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে ওই সংবর্ধনা কভারেজের দায়িত্ব পাই আমি। খুবই চ্যালেঞ্জিং এ্যাসাইনমেন্ট হওয়ায় আমি খানিকটা দূরে থেকে তাঁর সংবর্ধনা কভারেজ করি। পরে চেষ্টা করেও ভিড়ের কারণে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারিনি।
পরদিন পত্রিকায় “জীবন গড়তে স্বপ্ন দেখার প্রয়োজন হয়” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে তাঁর অফিসের ঠিকানায় দুই কপি পত্রিকা পাঠালাম। সঙ্গে ৫ লাইনের ছোট্ট এক টুকরো ঠিঠি। নিউজ ছিল এরকম- জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে চারিদিক মুখরিত। তবুও যেন ক্লান্তি নেই নেতা-কর্মীদের। হঠাৎ ভারী শ্লোগানে গর্জে উঠল আশপাশ। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রটোকল বেস্টিত জাতীয় পতাকাবাহী কালো রঙের একটি গাড়ী এসে থামল মঞ্চের খানিকটা দূরে। তখন বিকেল ৫টা বেজে ১৮ মিনিট। আয়োজকদের তোড়জোড় আর শ্লোগান পাল্টা শ্লোগান’র মধ্যে অতিথিবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক কদম হেঁটে সংবর্ধিত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক উঠেন মঞ্চে। একদিকে আয়োজকদের চোখে মুখে ভেসে উঠে স্বস্তি। অন্যদিকে সংবর্ধিত ঢাকার মেয়র’র স্বভাবসুলভ হাসিই বলে দিচ্ছে তিনি যেন সংবর্ধনা আয়োজনকারী আর দাগনভূঞাবাসীর কত কাছের। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। একের পর এক ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন সংবর্ধিত অতিথি।
যা তিনি পেয়েছেন, পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর বন্ধুকে। প্রশংসাও করলেন আমার এমনটি জানালেন তাঁর সেই বন্ধু। অনেকদিন ধরে ভাবছি আবার তাঁর নিকটে যাবো, দেখা হবে; কথা হবে প্রিয় স্বপ্নবান্ধব বড় ভাই আনিসুল হকের সাথে। যিনি চলে গেছেন গগনের জগতে। যেখানে যাওয়া যায় কিন্তু ফেরা যায়না।
লেখক : স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক ফেনীর সময়