অরিত্রির আত্মহনন ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হা • নতুন ফেনীনতুন ফেনী অরিত্রির আত্মহনন ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হা • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৮ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অরিত্রির আত্মহনন ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হা

রাশেদুল হাসানরাশেদুল হাসান
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৮

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রির আত্মহত্যার জন্য ঐ স্কুলের ৩ জন শিক্ষককে বরখাস্ত এবং এম পি ও বাতিল করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্হা নেয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এবার আসি মূল কথায়, এই ছাত্রীটি আত্মহত্যা করার জন্য কি শুধু ঐ তিনজন শিক্ষকই দায়ী নাকি সেই সাথে তার মানষিকতা, অভিবাবক এবং আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও দায়ী?

আমি নিজেও এখনো একজন ছাত্র সেই সাথে শিক্ষকতায়ও জড়িত। যে সকল শিক্ষকরা ছাত্রজীবনে কঠিন শাসনের মধ্যে রেখে পড়ালেখা আদায় করে নিয়েছেন তাদেরকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে হতো আর যারা পড়ালেখা পারলেও কিছু বলতোনা না পরলেও কিছু বলতোনা তাদেরকে সবচেয়ে বড় বন্ধু মনে হতো। আর এখন ঐ ধাপ অতিক্রম করার পর তাদের প্রতি সম্মানটাও বিপরীত মুখী হয়ে গেছে। যে শিক্ষক শাসন করে হলেও আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আদায় করে নিয়েছেন তাকে বড় বন্ধু আর যিনি নেননি তিনি এখন আমার সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিনত হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে আমার সকল সফলতা ঐ খারাপ শিক্ষকটার জন্য আর সকল ব্যর্থতা দায়িত্ব -জ্ঞানহীন ঐ শিক্ষকটার জন্য।

যাই হোক আবার মূল কথায় আসি, আমার মনে হয় শুধু ঐ ৩ জন শিক্ষককেই শাস্তি দিলে এই সমস্যার সমাধান হবে না। সেই সাথে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্হাকে ও ঢালাও ভাবে সাজাতে হবে এবং অভিবাবকদের তাদের সন্তানদের সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মানষিক দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং শিক্ষকদেরও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি ক্ষেত্র বিশেষ সহনশীল থাকতে হবে ও কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করে শ্রেণী শিক্ষায় আরো গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে হবে।

বর্তমান যুগ হচ্ছে প্রযুক্তির যুগ। এই প্রযুক্তির বিকাশের কারনে মানুষের জীবন-যাপন যেমন সহজ হয়েছে, তেমনী এই প্রযুক্তির অপব্যবহারের কারনে আমাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। তার অন্যতম হলো আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্হায় প্রযুক্তির অপব্যবহার। প্রযুক্তি যেমন আমাদের শিক্ষা-ব্যবস্হা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তেমনী এর অপব্যবহারের কারনে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

একটা বাচ্ছাকে জন্মের পর থেকে যেখানে আস্তে আস্তে বর্ণমালা শেখানোর কথা সেখানে অভিবাবকরা তা না করে বাচ্ছাদেরকে মোবাইল, কম্পিউটার কিংবা টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে দিচ্ছে এতে করে তারা ধীরে ধীরে পড়া-লেখা কিংবা কাজ কর্মের দিকে না ঝুঁকে প্রযুক্তির অপব্যবহারের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
এর পাশাপাশি এক শ্রেণীর অসাধু শিক্ষক কিংবা তাদের কর্মচারিরা অর্থের জন্য প্রশ্ন ফাঁসের মতো গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আর অভিবাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে এমন অন্যায়কে পশ্রয় দিচ্ছে। যাতে খুব সহজে তাদের বাচ্ছারা ভালো ফলাফল করতে পারে। আর সেই সাথে এক শ্রেনীর শিক্ষকরা শ্রেণী পাঠদানে সময় ব্যয় না করে অতিরিক্ত অর্থের লোভে শিক্ষার্থীদের কোচিং মুখী করে তুলছে।

সেই সাথে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার চেয়ে মোবাইল ফোনে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করছে এতে করে পড়া-লেখার সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে হতাশায় ভূগে আর এই হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কখনো কখনো আত্মহননের মতো পথ বেছে নিচ্ছে।

আর কতিপয় শিক্ষক তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তাদের পড়ালেখার দূর্বলতার দূর করার জন্য ক্ষেত্রে বিশেষ কঠোর অবস্হানে থাকে আর এই ধরা বাঁধা পড়া লেখা তাদের ভালো না লাগলে তারা ঐ শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অপ্র-প্রচার করতে থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আবেগ প্রবন হয়ে আত্মহননের মত পথ বেছে নিচ্ছে আর তার জন্য কোন কোন শিক্ষককে আইনের মারপ্যাঁচে পড়তে হয়।

তাই এখন কিছু কিছু সময় শিক্ষার্থী বাড়ির কাজ আদায় না করলেও শিক্ষকরা কিছু বলার সাহস পায়না। বলতে গেলে অনেক সময় ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় এই শিক্ষকদের। আর এতে করে কোন কোন শিক্ষার্থীরা খারাপ ফলাফল করলে ও বিভিন্ন জায়গায় জবাবদিহি করতে হয় এই শিক্ষকদের। তাই একজন শিক্ষক হিসিবে মাঝে মাঝে নিজেদের অসহায় মনে হয়। তারপরও আশা করবো ছোট-খাটো কোনো ব্যাপারে অরিত্রির মতো আর কেউ যেনো আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে না যায় আর কোন নিরীহ শিক্ষকও যেনো শাস্তি কিংবা অপমানিত না হয় সেই দিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারী কলেজ।

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.