২০১৭ এর অক্টোবরে শক্তিশালী সাউথআফ্রিকার সাথে তাদের মাঠেই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিলো, পরবর্তীতে টি২০ সিরিজেও ছিলেন । শেষ ম্যাচে প্রথম তিন ওভারে হাশিম আমলা ও এভিডি ভিলিয়ার্স এর উইকেট নিলেও ৪র্থ ওভারটিতেই দুঃস্বপ্নের আবির্ভাব। ডেভিড মিলারের ব্যাট সেদিন ইচ্ছার সবটুকুই প্রতিফলন ঘটিয়েছিলো । ডেলিভারির সব ভ্যারিয়েশনেই মিলারের ব্যাট চলছিলো ক্রিকেট ব্যাকরণ ভুলেই। সেই ওভারে টানা ৫ টি ছয়, দেশের ক্রিকেটের “সোনার হরিণ” বোলিং অলরাউন্ডার এর আশার প্রদীপে যেনো এক ঝটকা ঝড়ো হাওয়া।
সেখানেই তার ক্যারিয়ারের ইতি টেনে ফেলেছিলেন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা, যেখানে ক্যারিয়ার তখনও শুরুই হয়নি ওভাবে। কিছুদিন ছিলেন জাতীয় দলের বাহিরে। কিন্তু বয়সভিত্তিক প্রক্রিয়ার নানা প্যাচ ঘুরিয়ে উঠে আসা এই তরুণ অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন নিজের পরিকল্পনায় ছিলেন অবিচল।
তাইতো তাকে প্রায় বলতে শোনা যেতো, “ঐ দিনের কথা খুব একটা মনে নেই, প্রস্তুতি ভালো ভাবে নিলেই ফলাফল ভালো আসবে, তখন বাকিরাও এসব ভুলে যাবে, পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের কাজ কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করা”।
সেই প্রমাণ করতে এরপর এইচপি দল, জাতীয় লীগ, সর্বশেষ বিপিএল, জিম্বাবুয়ে সিরিজে যখন যেখানে পারফর্ম করা প্রয়োজন সেসবের ষোলোকলা পূর্ন করে ঠিকই কক্ষপথে ফিরেছে এই পেইস অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপের ওয়ার্মআপ টুর্নামেন্ট আয়ারল্যান্ড এর সাথে নিজেকে ঝালিয়ে নিয়েছেন এবং টিম কম্বিনেশনে নিজেকে কার্যকর প্রমান করেছেন।
পেইস অলরাউন্ডার হলেও এই সময়টাতে প্রাপ্ত সুযোগে নিজেকে ভালো মানের ব্যাটসম্যান হিসেবেও ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছে সাইফুদ্দিন। টিম কম্বিনেশন এর কারণে খেলা হচ্ছে না উপরে উঠে, তাও সুযোগ পেলেই টুকটাক রানের ক্ষিদা ঠিকই বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
এবারের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পেয়ে বলেছিলেন একটি নিজস্ব লক্ষ্য ঠিক করেছেন, যা নিজের মধ্যেই রেখেছেন। টুর্নামেন্ট শেষে নাকি মিলিয়ে দেখবেন সেই লক্ষ্যের কতটা পূরণ হলো। তবে চলটি বিশ্বকাপের অর্ধেক অংশ শেষে অনেকটা আশার প্রতিফলন ঘটিয়েছে সাইফউদ্দিন। সেরা বোলারদের তালিকায় সাইফউদ্দিনএর নাম পাঁচ নম্বরে দেখে পাঠক কিছুটা ভেবে নিতেই পারেন কি লক্ষ্যে নিজেকে মেলে ধরছেন এই পেসার। দেশের বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯ উইকেট পেয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন নিজের গুরুত্ব। ৪ ম্যাচ খেলে ২৭.৫৫ বোলিং গড়ে ৯ উইকেট শিকার করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৪ ম্যাচে তিনি বোলিং করেছেন ৩৪ ওভার। রান দিয়েছেন ২৪৮। মেইডেন নিয়েছেন দুইটি। তবে সর্বোপরি খানিকটা খরুচে বোলিং করেছেন তিনি। ওভারপ্রতি গড়ে রান দিয়েছেন ৭.২৯। প্রথম পাঁচে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ইকোনমিই সবচেয়ে বেশি। রানের ফুলঝুরি ছোটা এই বিশ্বকাপ বোলারদের জন্যে যেনো আতঙ্ক। তাই ইকোনমি দেখেই বুঝবেননা কে কতটা ভালো জায়গায় বল ফেলছে। দলের প্রয়োজনে যেকোন সময়েই বল হাতে নিতে সদা প্রস্তুত থাকে এই পেইস বোলার। টাইগারদের ৪ টি ম্যাচেই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দিয়ে আন্তর্জাতিক মন্ডলে ইতিমধ্যেই আলোচনায় এই উঠতি অলরাউন্ডার। আইসিসি’র কাভার পেইজেও জায়গা করে নিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে আসা এই তরুণ।
জাতীয় দলে অভিষেকের দুই বছরের মাথায় বিশ্বকাপে সুযোগ পাওয়া, বিশ্বমঞ্চে নিজেকে মেলে ধরা, যেনো সব প্রাপ্তি ধরা দিচ্ছে এসে। তবে এটিতেই তৃপ্ত নয় এই চ্যালেঞ্জার ক্রিকেটার, বাকি ৫ টিতে দলের জন্য আরও উজাড় করে দিতে প্রস্তুত এই ইয়র্কার স্পেশালিস্ট। সেই চেষ্টায় কতটা সফল হোন এবং বিশ্বকাপ শেষে নিজের ঝুলিতে কতটা বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান এর উইকেট নিয়ে দেশে ফেরেন সেটির জন্যেই এখন প্রতীক্ষা।
লেখক: ক্রীড়া লেখক ও সংগঠক