বাংলাদেশে কাজের ক্ষেত্রে নারীদের সামাজিক সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতার কথা বলতে গেলে ব্যাপক। বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ ও বড় বড় লেখক-কবিরা নারীকে সৃষ্টির অন্যতম সৌন্দর্য হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাঁদের লেখার মধ্য দিয়ে। কবির মতে, ‘পৃথিবীতে যা কিছু চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’।
নারী কখনো মা, কখনো বোন, কখনো স্ত্রী হিসেবে বিভিন্নভাবে পুরুষকে সঙ্গ দিয়েছে। নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক হলেও আমাদের সমাজে তাদের অধিকারকে সমানভাবে দেখা হয় না। সমাজে নারীদের এখনো প্রচুর বাঁধা বিপত্তি বিদ্যমান। যে কোন একটা কাজ করতে গেলে নারীদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এবং কি অনেক মফস্বল এলাকায় এখনো মেয়ে সন্তান জন্ম হওয়াটা পরিবারের বোঝা হিসেবে মনে করা হয়।
এ রকম শত সামাজিক প্রতিবন্ধবতা-প্রতিকূলতা ও সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে নারীদের। এটা ঠিক যে শহর এলাকায় শিক্ষার হার বেশি থাকায় এসব সমস্যাগুলো কম দেখা যায়। কিন্তু মফস্বল শহর বা গ্রামীণ সমাজে নারীদের প্রতিবন্ধকতা অনেক। যা বলে শেষ করা যাবে না।
বাংলাদেশে এখনো অনেক মফস্বল এলাকায় বাল্যবিবাহ হচ্ছে মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবে। সে ক্ষেত্রে আমি তার পরিবার ও সমাজই দায়ী। তাদের মানসিকতাকে দায়ী করবো। তারা মনে করে ১৫-১৬ বছর হলে মেয়েকে বিয়ে দিলেই মুক্তি। তাছাড়া সমাজে কিছু মানুষ এসবকে প্রশ্রয় দেয়।
দেখা গেল, ছেলে পক্ষ বলল বিয়ের পর তারা মেয়েকে পড়ালেখা করাবে কিন্তু পরবর্তীতে বলা হয় মেয়েদের এত পড়াশোনা করে কি লাভ? চাকরি করবে নাকি? আসলে পড়ালেখা শুধুমাত্র একজন মানুষের ক্ষেত্রে কেবল চাকরীর জন্য নয়, একজন ভালো মানুষ ও আদর্শ জাতি তৈরি জন্য প্রয়োজন এটা তারা অনুধাবন করতে না পারায় এসব বলে। এভাবে অকালে জরে পড়ে অনেক মেয়ে। সে জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।
নারীদের পড়লেখা ও ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে তার পরিবারের সাপোর্ট বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সে সাথে নিজের সাহসিকতা ও মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক সময় দেখা যায়, বিয়ের পর হাজব্যান্ড চাকরি করতে দেয় না বা পছন্দ করে না। বিয়ের পর হাজব্যান্ড মনে করে সংসার, সন্তান, শশুরবাড়ী এসব সামলানো মেয়েদের কাজ। অন্য কাজ করতে গেলে সংসার জীবন কিছুটা সমস্যার প্রভাব পড়ে। শহর এলাকায় কেবল এই সমস্যা নয়, কিছু মফস্বল এলাকাতেও এই সমস্যাগুলো এখনো দেখা যায়।
তবুও মেয়েরা পিছিয়ে থাকছে না। বর্তমানে বহিবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নারী পুরুষ সমানভাবে কাজ করছে বা করতে চাচ্ছে। আমাদের দেশে নারীরাও কিন্তু শিক্ষা-দীক্ষা, চাকরি-বাকরি, রাজনীতি, অর্থনীতিতে, লেখালেখি-সাংবাদিকতাসহ অনেক কিছুতে ভালো ভূমিকা রাখছে। সে জন্য সবার আগে নারীদের সু-শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পরিবারের সাপোর্ট ও নিজের মানসিক শক্তি, সাহস বাড়িয়ে নিজের লক্ষ্য পৌঁছাতে হবে।
বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃনমূল পর্যায়ের মেয়েদের জন্য অনেক সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছে ও কর্মসস্থানের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা ও হস্তশিল্প, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। তাছাড়া আমাদের দরকার পিছিয়ে পড়া নারীদের নিয়ে দলবদ্ধভাবে কাজ করা। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন- ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবো অধিকার।’
তাই আমি মনে করি নারীদের ক্ষেত্রে ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা তৈরি করতে হবে আমাদের। কিছু পরিবারে মেয়েরা অনেক নির্যাতিত হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে সামাজিক সহায়তা থাকতে হবে। আইনগুলো কার্যকরী হওয়া দরকার। তাই আমাদের সবার প্রয়োজন- নারীদের নারী না ভেবে মানুষ হিসেবে ভাবা। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হোক। সবার আগে আমরা নারীদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। ভবিষতেও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে নারীরা। নারীদের জয় হোক।
লেখক: বিউটিশিয়ান।