বঙ্গবন্ধু ছড়িয়ে পড়ুক সকল শিশুর হৃদয়ে • নতুন ফেনীনতুন ফেনী বঙ্গবন্ধু ছড়িয়ে পড়ুক সকল শিশুর হৃদয়ে • নতুন ফেনী
 ফেনী |
৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গবন্ধু ছড়িয়ে পড়ুক সকল শিশুর হৃদয়ে

হোসাইন আরমান, সিনিয়র সাব এডিটরহোসাইন আরমান, সিনিয়র সাব এডিটর
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:১১ অপরাহ্ণ, ৩০ মার্চ ২০২১

সেদিন ছিল ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। তখন ঘড়িতে সময় বিকেল ৫.৩০ হবে। হেল্প ফর টুডে’র আয়োজনে ফেনী রেল স্টেশনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আয়োজিত একটা অনুষ্ঠান অংশগ্রহন করেছি। হঠাৎ চোখে পড়লো রেল লাইনের ওপাশে বস্তিতে আমাদের স্বাধীনতার প্রতিক লাল-সবুজের একটি পতাকা উড়ছে। পশ্চিমাকাশে হেলান দেয়া সূর্যের রশ্নিটা লাল-সবুজের বুকে আচড়ে পড়েছে। কৌতুহলবশত গেলাম সেখানে । জিঙ্গেস করলাম পতাকাটা কে লাগিয়েছে? কেন লাগিয়েছে? সবাই মনে হয় একটু লজ্জা পেলো কোন উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। বসে থাকা একজন মহিলা বললো তার স্বামী লাগিয়েছে। কিন্তু কেন লাগিয়েছে তিনি কার কারন জানেনা। তার স্বামী রেলওয়ের তৃতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী। তার স্বামীকে খুঁজে না পেয়ে সেখানে থাকা শিশুদেরকে জিঙ্গেস করলাম এই জাতীয় পতাকা উড়ানোর কারন কী?

প্রথমেই দেখা হলো মনির সাথে । সে স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীতে পড়ে। পাশের বস্তিতেই থাকে। তাকে জিঙ্গেস করলাম আজকে কি দিবস? কার জন্মদিন তুমি জানো? সে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো না। বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেছে কিন্তু এর বেশি কিছু জানেনা। তার পাশে দাড়িয়ে ছিলো বৃষ্টি। বয়স ১০ বছর হবে। সে নাকি কোন দিন বঙ্গবন্ধুর নামই শোনেনি! শুনেছে হয়তো কিন্তু মনে রাখতে পারেনি। পারবে কিভাবে কোন দিন যে স্কুলের বারান্দায় পা পড়েনি তার।

তাদের সাথে কথা বলতে দেখে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এলো নিজাম। ভেবেছে আমি বোধহয় কিছু উপহার দিচ্ছি। বয়স ৬-৭ বছর হবে। সে বলে কিসের জন্মদিন? কার জন্মদিন? কিছুই জানেনা। বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারন করতে বললাম করতে না পেরে হাসতে হাসতে দৌড় দিয়েছে।

শিহাবের বয়স ১১-১২ বছর হবে। বুঝ হবার পর থেকেই নাকি এই স্টেশনে চায়ের দোকানে কাজ করে। বাবা-মার খোঁজ জানা নেই । নিজ বাড়ি চাঁদপুর হলেও শহরের একাডেমী এলাকায় নানীর সাথে থাকে। ট্রেন যখন স্টেশনে থামে যাত্রীদের কাছে সিংগারা, চমুচা, পরটা, ডিম, ভাজি বিক্রি করেন। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। মাসে ৩ হাজার টাকা মাইনে পায়। তা দিয়ের নানী-নাতির সংসার চলে। তাকে যখন জিঙ্গেস করলাম বঙ্গবন্ধুর নাম শুনেছো? কিছুক্ষন ভেবে কিছু বলতে পারলোনা। তার পর বললাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুনেছো? বললো টিভিতে শুনছে। কিন্তু আজকে যে সেই মহা মানবের জন্মদিন সেটা জানেনা। বললাম তুমিতো এখনো শিশু আজকেতা শিশু দিবস এটা কি জানো? এর মধ্যই ট্রেনের হুইসেল পড়লো। ডাক দিলেন মালিক কিছু না বলেই চলে গেলো।

দেখতে যেমন মাসুম চেহারা । তেমনি তার নামটাও মাসুম । জিঙ্গেস করলাম কি করো? অকপটে স্বীকার করলো ভিক্ষা করি। অচিনতলা এক বস্তিতে থাকে। স্কুলে কোনদিন যায়নি। মা-বাবাই তাকে পাঠায় এখানে ভিক্ষা করতে। দৈনিক ২০০-৪০০ টাকা ভিক্ষা করে পায়। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুদিবস নিয়েই কোন কথাই সে বলেনি। এই হলো একটা রেলস্টেশনের কয়েকজন শিক্ষার আলো বঞ্চিত শিশুর অবস্থা। এমন চিত্র বাংলাদেশের অনেক জায়গাই দেখা যায়।

যাদের জন্য এই শিশু দিবস অথচ সেই শিশুরাই জানেনা শিশু দিবসের কথা! মুজিব শতবর্ষে এসেও মুজিব পৌছাতে পারেনি এ প্রজন্মের সকল শিশুদের হৃদয়ে। যার জন্য এই দেশ পেলাম, এই পতাকা পেলাম সেই দেশের অনেক মানুষ এখনো জানেনা আজকে কেন পতাকা উড়ছে সবখানে! শেখ মুজিব সারা জীবন মেহনতি, অবহেলিত মানুষের পাশে ছিলেন। তাদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করছেন আজীবন। সেই মানুষটির জন্ম শতবর্ষে এসেও এখনো অবহেলিত মানুষদের কাছে অনেকটাই অচেনাই রয়ে গেলেন তিনি। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তিতে এসেও দেখতে হয় সুবিধা বঞ্চিত মানুষের হাহাকার। বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন সেটি বাস্তাবায়ন হলে আজ হয়তো কোন শিশুর মুখ থেকে শুনতে হতোনা আজকে কার জন্মদিন তারা জানেনা।

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে আজকে সকাল-রাত পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নানা শ্রেণী-পেশার সংগঠন বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান আয়োজিত হলেও সেখানে স্থান পায়নি সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা। কেউ যায়নি তাদের কাছে। কেউ তাদেরকে শুনায়নি এক মহা মানবের গল্প কথা। তাহলে তারা জানবে কিভাবে? এর দায় রাষ্ট্র, সমাজ কেউ এড়াতে পারবেনা।

বঙ্গবন্ধুর ১০২ তম জন্মবার্ষিকীতে যেন কারো মুখ থেকে শুনতে না হয় আজকে তার জন্মদিন কিন্তু তারা জানেনা সেই প্রত্যাশাটাই রাখি। বঙ্গবন্ধু কোন দলের নয়, কোন সম্প্রদায়ের নয় তিনি সবার। তাই সবাইকে জানতে হবে, জানাতে হবে এই রাজনীতির কবির সাহিত্য। আর জানানোর দায়িত্ব কেবল রাষ্ট্রের নয়। আমার, আপনার, আমাদের সকল বাংলাদেশীর। বঙ্গবন্ধু ছড়িয়ে পড়ুক ৭১ হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি কোণায় কোণায়। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.