আশেকে রাসুল নোমানি। বয়স ৫৫। সৌদিআরব প্রবাসী। রিয়াদ প্যালেসের শেফ। অর্থাৎ রাজ পরিবারের রাষ্ট্রীয় অতিথিদের বাবুর্চি। ৩৬ বছর ধরে ঐ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। গ্রামের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভার মাষ্টার পাড়ায়। স্বপরিবারে সৌদিআরব থাকেন। ২/১ বছর পর পর ছুটিতে দেশে বেড়াতে আসেন।
২৪ বছর পূর্বে কোন এক রাষ্ট্রীয় অতিথির জন্য চিংড়ী মাছ পাকানোর তিকালে চিংড়ী মাছের শুঁড় হাতের আঙ্গুলে ঢুকে যায়। এর পর ইনফেকশন ছড়াতে ছড়াতে দুরারোগ্য একজিমার রূপ ধারণ করে। এত বছর ধরে প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতা এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় দেশ বিদেশের নামকরা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের প্রেসক্রিপশনে বিশ্বের দামি দামি কোম্পানির ঔষধ ও ক্রিম ব্যবহার করে আসছেন। স্থায়ী চিকিৎসা হচ্ছেনা। যতদিন ঔষধ ব্যবহার করেন ততদিন কিছুটা উপশম পান। ঔষধ ব্যবহার বন্ধ করলে রোগ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। রোগীর বড় কষ্ট হল রোগ তার পেশাকর্মের সাথে মানায়না। প্রতিষ্ঠানের নিয়মঅনুযায়ী হাতে গ্রাভস লাগিয়ে কাজ করার পরও নিজের কাছে অস্বস্তি লাগে। বেশ কয়েকবার চাকুরী ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান তাকে ছাড়তে রাজি হয়না। তাই রোগী শেষবারের মত হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিতে চায়।
নোমানি সাহেবের অসহায়ত্ব দেখে মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে চিকিৎসা দিতে রাজি হলাম। রোগীকে বললাম আপনার রোগের পূর্ণ বিবরণ জানাতে সহায়তা করুন। রোগী বললেন রোগের বিবরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টে আছে। এই এপর্যন্ত যত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখেছেন তারা প্রায় সবাই পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ঔষধ দিয়েছন। এর বাহিরে কি কথা জানতে চান?
আমরা বললাম প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি থেকে আমাদের চিকিৎসা পদ্ধতি কিছুটা ভিন্ন। যেমন প্রচলিত এলোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে সাধারণত পরীক্ষায় যে রোগ চিহ্নিত হয় ঐ রোগের ক্ষেত্রে সকল রোগীর একই ঔষধ হয়। কিন্তু হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ধরুন একজিমার ক্ষেত্রে রোগের কারণ, লক্ষণ, মানসিক অবস্থা, রোগের হ্রাস-বৃদ্ধি, আবহাওয়াগত পছন্দ অপছন্দ এমনকি খাদ্যদ্রব্যের প্রিয় অপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে একই রোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ঔষধ হবে। এটাই হোমিওপ্যাথির বৈশিষ্ট্য। হোমিওপ্যাথির এই বিশেষত্বসূচক বৈশিষ্ট্য নোমানি সাহেবের খুবই পচন্দ হল। এতে তার পূর্নাঙ্গ রোগীলিপি প্রদানের আগ্রহ বেড়ে গেল।
রোগী জানালেন তার এই একজিমা সারা বছর আছে। প্রথমে ডান হাত তারপর বাম হাতে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচন্ড চুলকায়। চুলকানোর পর ফেটে যায়, আক্রান্ত অংশ মোটা হয়ে যায়, সেখান থেকে আটা আটা স্রাব নির্গত হয়। রাত্রে, গরমে, এলার্জী খাবারে বাড়ে। গরম পানিতে, শীতে, মুক্ত বাতাসে উপশম।
রোগী আরো জানালেন ২ বছর ধরে তার ডায়াবেটিস আছে। হাইপ্রেসারের সমস্যা আছে, টেনশনে বাড়ে। গ্যাষ্টাইটিস আছে। মায়ের এলার্জী, বাত, হাঁপানি আছে। বাবা স্টোক করেছিলেন।
গরম অসহ্য, ঘাম স্বাভাবিক। ঘুম কম।পায়ের তালুতে জ্বালাপোড়া আছে। খাবারে বাড়তি লবণ খায়। ঝাল, মাছ, ডিম, সবজি প্রিয়।টক, মিষ্টি, মাংস, দুধ অপ্রিয়। পিপাসা বেশী।ক্ষুধা রুচি স্বাভাবিক।
নোমানি সাহেব আরো জানালেন, মেজাজ খিটখিটে, তিনি আবেগ প্রবণ। আত্মপ্রত্যয়ের অভাব। স্মরণশক্তি, সাহস ভাল।সন্দেহ নেই। কাজে চালু। পায়খানা প্রস্রাব স্বাভাবিক। পরিশ্রমে খারাপ লাগে।
রোগীর রোগীলিপি নেওয়ার পর আমরা রোগের কারণ, বর্তমান লক্ষণ, হ্রাস-বৃদ্ধি, ইচছা-অনিচ্ছা, রোগীর কাতরতা, মানসিক অবস্থা প্রভৃতি বিচারে ঔষধ নির্ধারন করলাম গ্রাফাইটিস।
আমরা ১৫ দিনের ঔষধ দিয়ে খাওয়ার পর জানাতে বললাম। ১৫ দিন পর রোগী এসে জানালেন আমি ৫০% ভাল আছি। এরই মধ্যে নোমানি সাহেবের ছুটি শেষ। ৩ দিন পর ফ্লাইট। তাই ৩ মাসের ঔষধ দিযে ঔষধ শেষে অবস্থা জানাতে বললাম। ৩ মাস পর রোগী জানালেন আলহামদুলিল্লাহ। আমার হাতের একজিমা এখন আর নাই। তবে একথা ভেবে কুল পাচ্ছিনা ২৪ বছরের দুরারোগ্য একজিমা এত অল্প সময়ে ভাল হল কিভাবে। সৃষ্টিকর্তাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
২ বছর পর রোগী ছুটিতে দেশে বেড়াতে আসলে তার সাথে দেখা হয়।তিনি জানালেন বর্তমানে তিনি তায়েফ প্যালেসে কর্মরত আছেন। তার চিকিৎসায় বেশ সন্তুষ্ট।
লেখক: ডাঃ ছরওয়ার আলম
সেবা হোমিও ক্লিনিক, সমবায় সুপার মার্কেট, এসএসকে সড়ক, ফেনী।