ডা. ছরওয়ার আলম।
জাহেদা বেগম (৬০)। বারইয়ার হাট, মিরশ্বরাই, চট্টগ্রাম। তার মেয়ের জামাই সাইফুল ইসলামকে সাথে নিয়ে আমাদের নিকট আসলেন তার হাতের একজিমা রোগের চিকিৎসার জন্য। রোগীনি জানালেন, অনেক বছর ধরে তিনি হাতের একজিমায় কষ্ট পাচ্ছেন। এই রোগের জন্য খাবারদাবারে, পারিবারিক কাজকর্মে খুব অসুবিধা হয়। অন্যেরা তাকে এড়িয়ে চলে, ভয় করে। তার নিজের কাছে এর জন্য খুব অসহায় লাগে।
তিনি জানান, শুরু থেকে তার একজিমার জন্য চর্ম রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে দেখিয়ে আসছেন। বিজ্ঞ চিকিৎসকেরাও আন্তরিকভাবে একজিমার জন্য দামি দামি ঔষধ ও ক্রিম (মলম) লিখে দেন। তিনি যতদিন ঔষধ সেবন করেন ও ক্রিম (মলম) ব্যবহার করেন ততদিন কিছুটা ভাল থাকেন। ঔষধ ব্যবহার ছেড়ে দিলে রোগ আবার আগের মত হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, তার এই রোগ স্থায়ীভাবে আরোগ্য হবার নয়। এর জন্য আজীবন ঔষধ সেবন ও মলম ব্যবহার করা লাগতে পারে।
রোগের স্থায়ী চিকিৎসা না হওয়াতে এবং দীর্ঘদিন ঔষধ সেবন করতে করতে রোগীনি বিরক্ত হয়ে এখন কিছুদিন ঔষধ সেবন বন্ধ রেখেছেন। এতে রোগ আবার আগের থেকে বেশি হয়ে দেখা দিয়েছে। অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন, হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করে দেখার জন্য। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় অনেক সময় রোগের স্থায়ী আরোগ্য হয়। তাই তিনি খোঁজ খবর নিয়ে আমাদের নিকট এসেছেন।
আমরা বললাম, চর্মরোগের মধ্যে একজিমা তুলনামূলক জটিল ও দুরোরোগ্য প্রকৃতির। তবে ইহা সাধারণত ছোঁয়াচে নয়। রক্তের সম্পর্ক ছাড়া, একসাথে থাকা, জিনিসপত্র ব্যবহারে ইহা ছড়ায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেনেটিক বা বংশগত কারণে দেখা দেয়। হোমিওপ্যাথিতে শুধু রোগের বিষয় চিন্তা না করে, লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করা হয়। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে একজিমা সহ অনেক জটিল রোগ সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হয়। আপনি যদি ইচ্ছা করেন আমরা পূর্ণাঙ্গ রোগীলিপি (রোগ বিবরণ) নিয়ে দেখতে পারি, হয়তো আল্লাহর রহমতে আপনি আরোগ্য লাভ করতে পারেন। রোগী এতে সন্তুষ্টচিত্তে রাজী হলেন।
আমরা জাহেদা বেগমের রোগীলিপি পর্যবেক্ষণ করে ঔষধ নির্ণায়ক যে লক্ষণ সমূহ পেলাম তা হলঃ উভয় হাতের আঙ্গুলে একজিমা, ভিতের ঘামাচির মত তরল পানি জমে, খুব চুলকায়, চুলকালে লালবর্ণ ধারণ করে, পুঁজ হয়না, পানিতে এবং ধুলাবালি ময়লা লাগলে বাড়ে, রাত্রে বাড়ে। গরমে উপশম। রোগী কাজে কর্মে চালু ও চঞ্চল প্রকৃতির, সব কাজে তাড়াহুড়া করে।
আমরা এই রোগীর একজিমার ক্ষেত্রে তার সকল লক্ষনাবলী মূল্যায়ন করে ঔষধ নির্বাচন করলাম “রাসটক্স”। উক্ত ঔষধ সেবনে সে অল্প সময়ে, বিনা কষ্টে, স্থায়ীভাবে ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে তার একজিমা রোগের আরোগ্য লাভ করে। তার দুরারোগ্য রোগের আদর্শ আরোগ্য হওয়াতে সে খুব খুশি এবং সৃষ্টিকর্তার নিকট কৃতজ্ঞ।
লেখকঃ সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক পরিষদ, ফেনী জেলা।







