দুচোখে স্বপ্নের ঘনঘটা, কপালে চিন্তার ভাজ। হবে কি স্বপ্ন পূরণ? ১৮ বছর বয়সী তরুণী নুপুর যার স্বপ্ন ছিলো একদিন ব্যাংকার হবে। অসচ্ছল পরিবারের দুঃখ গোছাবে। কিন্তু বাস্তবতা বড্ড নির্মম হয়ে হানা দিয়েছে নুপুরের জীবনে।
ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান ও পারুল আক্তারের একমাত্র মেয়ে নুপুর। বাবার ছোট্ট একটা পান দোকানই পরিবারের আয়ের উৎস। একবছর আগে রিপোর্টে ধরা পড়ে নূপুরের দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারটির মাথায় তখন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। সন্তানকে বাঁচাতে পাগলের মত এক হাসপাতাল থেকে অপর হাসপাতালে মা ছুটে বেড়াচ্ছেন। এক পর্যায়ে জায়গাজমিন সব বেছে দিয়েছেন।
ডাক্তার পরামর্শ দিলো একটা কিডনি লাগালে সে আবার স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে। তার মা-বাবা এবার সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়ে কিডনি লাগানোর প্রাণপন চেস্টা করছেন। পড়লেন দালালের খপ্পরে। মেয়ের কিডনি লাগাবে বলে ওনাদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দালালচক্র। আর তা নাকি নিজস্ব কারো মাধ্যমেই হয়েছে। আবার কোথাও থেকে সাহায্য আসলে ওটাতেও নাকি ভাগ বসায় দালালচক্র। টাকা নিয়েছে ঠিকই কিন্তু লাগানো হয়নি কিডনি। আর তার ফলস্বরূপ ডায়ালাইসিস মেশিনের সাথে জীবন নিয়ে যুদ্ধ করছেন নুপুর। প্রতি সপ্তাহে দুইটা ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে তাকে।
নুপুর জানায় ডায়ালাইসিস পরবর্তী সময় খুব যন্ত্রণা কাটে তার জীবন। সে আরো বলে, রাতে আমার ঘুম আসে না তাড়িয়ে বেড়ায় এক অজানা চিন্তা। হয়তো এই চিন্তা দুনিয়াতে আর বেশীদিন নেই আমি।
নুপুরের মা পারুল আক্তার নতুন ফেনীকে জানায়, আমার একমাত্র মেয়ে নুপুর। তার স্বপ্ন ছিলো ব্যাংকার হবে। সে হিসেবে তাকে আমরা পড়াশোনা করাচ্ছিলাম। নুপুর ২০১৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলো। অসুস্থ থাকায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয় সে। গত ১ বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়াতে আমরা হাসপাতালে ভর্তি করি সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা জানতে পারি তার দুটো কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। আমরা প্রথমে জেলা হাসপাতাল গুলোতে চিকিৎসা করাই পরে ঢাকায় নিয়ে যাই সেখানে উন্নত চিকিৎসা করাই। বর্তমানে সে সমরিতা হাসপাতালে প্রফেসর আবদুল হামীদ এর তত্বাবধায়নে চিকিৎসা নিচ্ছে।
নুপুরের বাবা আবদুল মান্নান জানায়, আমার স্বল্প আয়ে এমনিতেই সংসার চলে না তার উপরে মেয়েটার জন্য এ পর্যন্ত শেষ সম্বল ধানী চাষের জমিটুকু বিক্রি করে চিকিৎসা করে দিয়েছি। এ পর্যন্ত আমার মেয়ের জন্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা চিকিৎসা ব্যায় করেছি। আরো প্রায় ১০-১৫ লক্ষ টাকা প্রয়োজন। এখন মেয়ের চিকিৎসার জন্য আর কোন অর্থ সম্বল নেই।তিনি বৃত্তবানদের প্রতি দয়ার আহ্বান জানান। তার ব্যংকের একাউন্ট নাম্বার(AB Bank ৪১৩৭২০৫৬৭৬৩০০) বিকাশ নাম্বার- ০১৮২৩১৭২১৩৬(পারসোনাল)
তিনি অভিযোগ করেন কবির নামক এক প্রতারক ভারত নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবে বলে কয়েক কিস্তিতে ৮ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। যার ব্যাংক হিসাব(ডাচ্ বাংলা ব্যাংক- ১২৬১১০২৯৯৭৯ শান এন্টারপ্রাইজ) তিনি আরো বলেন প্রতারক কবিরকে তারা ভালো ভাবে ছিনতেন না শুধু এ টুকু জানতেন তার বাড়ি কুমিল্লা। স্থানীয় এক প্রভাবশালী প্রতিবেশীর মাধ্যমে কবিরের সাথে তাদের যোগাযোগ হয়। উল্লেখ্য তারা ভয়ে প্রতিবেশির নাম উল্লেখ করতে রাজি হননি। এবং কি আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন কিনা জানতে চাওয়া হলে তারা জানায়- দালালদের ভয়ে এবং আর কোন অর্থ ব্যয় করার মত অবস্থা তাদের নেই বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেননি।
ফুলগাজী থানার অফিসার ইনচার্জ কুতুব উদ্দিন এর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা এখনো কোন অভিযোগ পাননি। যদি কোন লিখিত অভিযোগ পান তাহলে তারা এ ব্যাপারে সর্বোচ্ছ আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।
সম্পাদনা:আরএইচ/এসআই