‘পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ কে’- গুগলে এমন প্রশ্নের খোঁজ করলেই যার নাম সবার আগে চলে আসে, তিনি মেথিউ রিকার্ড। তিব্বতী এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে বিজ্ঞানীরা এমন উপাধিতেই ভূষিত করেছেন। উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ধ্যান এবং সমবেদনার ওপর দীর্ঘ ১২ বছর যাবত একটি গবেষণায় অংশগ্রহণ করার পরই রিকার্ডকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞানীরা এই উপাধি দেন। রিকার্ডের বয়স এখন ৭৪ বছর।
এসব উপাধি নিয়ে মাথাব্যথা না থাকলেও নিজেকে ‘সুখী’ মানতে আপত্তি নেই রিকার্ডের। শুধু তাই নয়, সুখী হওয়ার কিছু রহস্যও প্রকাশ করেছেন তিনি। রিকার্ড মনে করেন, অপরের স্বার্থে জীবন নিয়োজিত করার মধ্যেই প্রকৃত সুখ লুকিয়ে থাকে। অন্যদিকে, সারাক্ষণ নিজের কথা ভাবা, নিজের চিন্তা করা মানুষের মনে আসলে চাপ ও ক্লান্তি এনে দেয়। আর শেষ পর্যন্ত তা ডেকে আনে অশান্তি।
রিকার্ডের পরামর্শ, আপনি যদি সুখী হতে চান, তাহলে আপনার মনে ‘হিতৈষী’ মনোভাব জাগিয়ে তুলতে হবে। সেটি শুধু আপনার জীবনই নয়, অন্যদের জীবনকেও আনন্দময় করে তুলবে।
‘আপনার মন যদি হিতৈষী ভাবনায়- অনুরাগ ও সংহতিতে পূর্ণ থাকে, আপনার মনের অবস্থা তখন এতটাই ভালো থাকবে, আপনমনেই ছড়াতে থাকবে উপকারের ফল,’ বলেন রিচার্ড। ‘এর ফলে আপনার মানসিক অবস্থা আরও উন্নত হবে। আপনার শরীর আরও সুস্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠবে।’
রিচার্ড বিশ্বাস করেন, সবার মনেই ইতিবাচক বোধের বসবাস থাকে। তবে মেরাথন দৌড়বিদেরা যেমন একটানা ২৬ মাইল দৌড়ানোর জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ করেন, প্রতিটি মানুষেরই নিজের মনের সেই রকম প্রশিক্ষণ করা উচিত বলে মনে করেন এই সন্ন্যাসী।
‘মনের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমরা আমাদের সুখের মাত্রাকে একটা ভিন্ন পর্যায়ে উন্নীত করতে পারি,’ বলেন রিকার্ড। ‘এটা আসলে দৌড়ানোর মতো। আমাকে যদি দৌড়াতেই হয়, ম্যারাথনেই দৌড়াব। অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন হয়তো হতে পারব না, তবে প্রশিক্ষণ নেওয়া আর না নেওয়ার মধ্যে একটা বিশাল ফারাক রয়েছে। তাহলে সেটা কেন আমরা আমাদের মনের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করব না?’
দিনে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট নিজেকে সুখী ভাবার চর্চা দিয়েই প্রশিক্ষণ শুরু করা যায় বলে অভিমত রিকার্ডের। তিনি বলেন, এই ধরনের চর্চা মানুষের মনে আনন্দ ও ভালোবাসার অনুভূতি এনে দেয়। এভাবে ভাবনার প্রশিক্ষণ প্রতিদিন নিয়মিত করার মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই ইতিবাচক ফল পাওয়া সম্ভব বলে দাবি রিকার্ডের। ‘যদি ৫০ বছর ধরে এই চর্চা করে যেতে পারেন, তাহলে আপনার সুখের কোনো তুলনা থাকবে না,’ বলেন তিনি। সূত্র: দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট
সম্পাদনা: আরএইচ/ এনজেটি