দীর্ঘ সময় ঝিমিয়ে থাকা কামার পল্লির মানুষ এখন কর্মচঞ্চল। দম ফেলানোর ফুসরত নেই তাদের। টুং-টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো এলাকায়। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ফেনীতে কামারদের ব্যস্ত সময় কাটছে। জেলার কয়েক’শ কামার পরিবার এ সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শহরের তাকিয়া বাজার, রেলগেট এলাকা, কাসেমপুর, পাঁচগাছিয়া, সদর উপজেলার লস্করহাট, দাগনভূঞা উপজেলার সিলোনিয়া ও সোনাগাজী উপজেলার শহরের প্রায় প্রতিটি কামার শালায় কামাররা বিরতিহীনভাবে কাজ করছেন। ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা শহর ছাড়াও গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কামারদের কাজের কমতি নেই। ঈদ উপলক্ষে মুসলমানরা কোরবানির পশু জবাইয়ের জন্য চোরা, দা, বটিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী লোনা পানিতে সান দেয়া এবং নতুন কিছু কেনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সে লক্ষ্যে কামাররা ও কোরবান আসলে পুরো বছরের অর্থ পুষিয়ে নেন।
লোহার মানভেদে স্প্রিং লোহা ৫শ’ টাকা, নরমাল ৩শ’ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ১শ’৫০ থেকে ২শ’টাকা, দা ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ টাকা, বটি সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৫শ’ থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানান কামাররা।
গ্রামগঞ্জ থেকে একসময় বিনা পয়সায় কয়লা পাওয়া গেলেও এখন টাকা দিয়েও মিলছে না এসব কাঠ কয়লা। আবার কিনতে গেলে তাদের দিতে হয় দ্বিগুণ দাম। প্রতি বস্তা কয়লা ২শ’ ৫০ থেকে ৩শ’ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। ফলে এসব জিনিস কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের।
ফেনী তাকিয়া বাজারের তপন কর্মকার নামে এক কামারশালার মালিক জানান, কামারদের কোন সংগঠন না থাকায় দাম পাচ্ছেন না তারা। কাজেরও নেই নির্দিষ্ট কোন রেট। ফলে কঠোর পরিশ্রম করেও ক্রেতাদের কাছ থেকে সন্তোষজনক মূল্য পাচ্ছেন না তারা। ফলে জেলার কয়েক শ’ কামার পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সোনাগাজী কামারশালার হারাধন কর্মকার (৬০) জানান, তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর কাজ করে তার জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তার পরিবারের সদস্যরাও এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এবার কত আয় হবে বলে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে অন্তত লাখ খানেক টাকা আয় হবে।
ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুর দারোগারহাট বাজারের দোলন কর্মকার বলেন, মেশিনে এসব যন্ত্রপাতি তৈরির কারণে বেচা-বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। কাজ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি