ফেনীতে চলতি আমন মৌসুমে ব্রি-৫১ জাতের ধানের চাষ করে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) থেকে নিন্ম জাত ও ভেজাল মিশ্রিত বীজ ক্রয় করে এখন জেলার হাজার হাজার কৃষক দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। ক্ষেতে ধান রোপনের ১৫ দিনের মাথায় কিছু ধান পেকে গেছে আবার কিছু ধানের শীষ বের হয়ে ভূষি হয়ে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায় কৃষকরা সংশ্লিষ্ট মাঠ কর্মকর্তাদের জানালেও দ্রুত কোন ফলাফল পাচ্ছেনা।
প্রান্তিক কৃষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানায়, এবার ফেনীতে বিএডিসি থেকে বীজ সংগ্রহ করে দুইশতাধিক একর জমিতে আমন চাষ করেছে কৃষকরা। বিএডিসি থেকে বীজ সংগ্রহকালে কৃষকদেরকে জানানো হয়, বিআর-১১ ও ব্রি ৫১ জাতের উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ১৪৫ দিনে ঘরে তোলা যায়। এতে করে কৃষকরা আর্থিক ভাবে লাভবান হবেন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা এ জাতের ধান জমিনে লাগানোর পর ১৫ দিনের মাথায় শীষ চলে এসেছে। অপর দিকে এসব শীষে ধানের বদলে রয়েছে ভূষি।
ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের বারাহীগুনী এলাকার কৃষক মাহমুদুল হক চিশতী জানান, তিনি বিএডিসি থেকে প্রতি প্যাকেট বীজ ৩১০ টাকা মূল্যে কিনে চলতি মৌসূমে ২০ একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। কিন্তু ১৫ দিনের মাথায় ধানের শীষ বের হয়ে সবগুলো ভূষি হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের অবহিত করা হলে তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। কিন্তু ঠিক কি কারণে এমন হচ্ছে অথবা এর সমাধান কি হবে সে ব্যাপারে কোন কিছু জানাতে পারেন নি। তবে প্যাকেটে অন্য জাতের বীজের মিশ্রন ও নিন্মমানের বীজ থাকায় এমনটি হতে পারে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে বিএডিসির সহকারী পরিচালক (বীজ বিপনন) প্রণব আনন্দ ভৌমিক জানান, বীজগুলো আমাদের ল্যাবে প্রত্যায়িত করা হয়। ৮০ শতাংশ বীজ গজালেই তা কৃষক পর্যায়ে বিক্রি করা হয়। এর চেয়ে কম গজালে সে বীজ বিক্রি করা হয়না। চলতি মৌসূমে ফেনী বিএডিসি থেকে ব্রি ৫১ জাতের ১৮ টন বীজ বিক্রি হয়েছে। যা দিয়ে কৃষকরা ১৮০ একর জমিতে চাষ করার কথা। কিন্তু গত কয়েকদিন ১৫ দিনে শীষ বের হওয়া ও ভুষি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমরা শুনেছি। কৃষক পর্যায়ে বিক্রির পর ৮০ শতাংশ বীজ না গজালে আমরা মাঠ পরিদর্শন করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি বলে জানান তিনি।
তবে বিএডিসির অন্যান্যরা জানান, বীজ গুলো আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে নেয়া হয়েছে এমনটি নিশ্চিত করা দরকার। কারণ কৃষকরা বাজার থেকেও বীজ সংগ্রহ করে থাকেন। যারা আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ কিনেন তাদেরকে মেমো দেয়া হয়। মেমো ও বীজের প্যাকেট দেখিয়ে অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক কৃষক জানান, বিএডিসি থেকে বীজ কেনার সময় তাদেরকে কোন প্রকার মেমো বা রশিদ দেয়া হয়নি। তবে বীজের প্যাকেটে বিএডিসির ট্যাগ ছিলো। কিন্তু বীজ জমিতে লাগানোর সময় ট্যাগগুলো সংগ্রহে রাখা হয়নি। এখন বিএডিসি বলছে মেমো ও ট্যাগ ছাড়া তারা কোন অভিযোগ নেবেন না।
দাগনভূঞা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাফিউল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানার সাথে সাথেই জরুরী ভিত্তিতে কৃষকের জমি পরিদর্শন করা হয়েছে। বিষয়টি সোনাগাজী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটকেও অবহিত করা হয়েছে। প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিত করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদনা: আরএইচ/ এনকে