সফলতার হাতছানি রনির হাঁস পালনে • নতুন ফেনীনতুন ফেনী সফলতার হাতছানি রনির হাঁস পালনে • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২০ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সফলতার হাতছানি রনির হাঁস পালনে

মো. কামরুল হাসান, নিজস্ব প্রতিনিধিমো. কামরুল হাসান, নিজস্ব প্রতিনিধি
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১২:০০ পূর্বাহ্ণ, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

হাঁস পালনে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রত্যাশা করছেন পশ্চিম ছাগলনাইয়া গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা আজিজুল হক রনি। জীবন-জীবিকার তাগিদে এক সময় চলে যান সূদুর প্রবাসে। সফলতা ধরা দেয়নি বিদেশের মাটিতে। কিন্তু ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে এলেও দমে যাননি রনি। পরিবার থেকে আবার অন্য দেশে যাওয়ার কথা বললেও তিনি চিন্তা করলেন দেশের টাকায় বিদেশ না গিয়ে দেশেই কিছু একটা করার। ছোটবেলা থেকে হাঁস-মুরগী পালনের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন।

পড়াশোনায়ও বেশিদূর এগোতে পারেনি। বিদেশ যাওয়ার আগে পড়াশোনার পাশাপাশি বাড়িতে কিছু হাঁস পালন করতেন। এখন শখের বসে ও আর্থিক সফলতার লক্ষ্যকে সামনে রেখে এলাকার এক বড়ভাইয়ের পরামর্শ এবং ইউটিউব দেখে কলা-কৌশলের শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন হাঁস পালন। অল্প সময়ের মধ্যে বড় সফলতার হাতছানিতে রনির হাঁস পালন প্রকল্পটি এলাকায় ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অন্য উদ্যোক্তাদের মাঝে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পৌর শহরের পশ্চিম ছাগলনাইয়া গ্রামের মাহবুব আলম’র ছেলে রনি তার খামারে হাঁস পালনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন ফেনী’র এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে রনি বলেন, চার মাস আগে তাদের নিজ পুকুরের উপরে ঘর তৈরি করে হাঁস পালন শুরু করেন। আগে থেকে পোল্ট্রি ফার্মের উপর কিছু অভিজ্ঞতা থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব দেখে আধুনিক কলা কৌশল নিয়ে সোনাগাজী হাঁস প্রজনন কেন্দ্র থেকে জিম্পিং জাতের ছয় শতাধিক বাচ্ছা নিয়ে আসেন। বাচ্চা ক্রয় থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণসহ সবকিছু মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো। বর্তমানে তার খামারে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার মতো জিম্পিং জাতের হাঁস আছে। পালিত হাঁসের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য একটি জলাশয় তৈরির পাশাপাশি কিছু উঁচু মাটির টিলা সৃষ্টি করেন।

পুকুরের পানিতে ছোট বড় মাছের চাষ করলেও তা মূলত হাঁসের জলকেলি এবং এগুলোর খাদ্য হিসেবে ব্যাবহারের জন্য করা হয়। জিম্পিং জাতের হাঁস মাংসের জন্য বেশ উপযোগী। এই হাঁস ছয় মাস বয়স থেকেই ডিম দিতে শুরু করে। বছরে প্রায় ২’শ থেকে ২’শ’৫০ টি ডিম দেয়। এই হাঁসের মাংস মুরগির মতোই পুষ্টিকর। জিম্পিং জাতের হাঁস বেশ কষ্টসহিষ্ণু। এই হাঁস পালনে বেশি পানিরও প্রয়োজন হয়না। কেবল খাবার ও গলা ডোবানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেলেই এরা সহজ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তাই পুকুর বা অন্যান্য জলাশয় ছাড়াই এই হাঁস পালন সম্ভব। বাচ্ছা তোলার পর প্রথম ২৫ দিনে ডাক প্লে নামক একটি টিকা দিতে হয়। এর ১৫ দিন পরে ব্লু-স্টার ডোজ এবং ৭০ দিন বয়সে বাচ্ছাকে ডাক কলেরা দিতে হয়।

এছাড়াও খাদ্য হিসেবে প্রথম ১৫ দিন বয়লার স্ট্রাটার, ১৫ থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সোনালী গ্রোয়ার। এরপর থেকে ডিম পাড়া পর্যন্ত সয়ামিল, বুসি, গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, শামুক, শুটকির গুড়া ইত্যাদি খাদ্য খাওয়ানো হয়। তরুন এই উদ্যোক্তা আরো বলেন, আর্থিকভাবে সফলতা এবং এলাকায় বেকারত্ব দূর ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই হাঁস পালন করা। তার খামারে এখনো ডিম পাড়া শুরু হয়নি। ডিম পাড়া শুরু করলে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা আয়ের আশা প্রকাশ করেন। তিনি সরকারি পৃষ্ঠ-পোষকতা পেলে এবং হাঁস পালনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এ খামার থেকে প্রচুর মুনাফা অর্জনের আশা প্রকাশ করেন।

ইমাম হোসেন খোকন নামের এক নতুন উদ্যোক্তা নতুন ফেনী’কে বলেন, রনির হাঁস পালনে দ্রুত উন্নতি ও সফলতা দেখে আমিও আর্থিকভাবে সফলতার জন্য হাঁস পালনের উদ্যোগ নিয়েছি।

এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল নতুন ফেনী’কে বলেন, রনি’র এমন উদ্যোগ এখানকার বেকার যুবকদের মাঝে আশার আলো সৃষ্টি করেছে। তাকে অনুকরণ করে হাঁস পালন করলে আর্থিকভাবে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও তরুন এই উদ্যোক্তাকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।
সম্পাদনা: আরএইচ/ এমকেএইচ

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.