সরকারি প্রণোদনায় ফেনীতে আবাদে ফিরছে  ৪ হাজার হেক্টর জমি • নতুন ফেনীনতুন ফেনী সরকারি প্রণোদনায় ফেনীতে আবাদে ফিরছে  ৪ হাজার হেক্টর জমি • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২৯ মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সরকারি প্রণোদনায় ফেনীতে আবাদে ফিরছে  ৪ হাজার হেক্টর জমি

নুর উল্লাহ কায়সারনুর উল্লাহ কায়সার
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৫:২৯ অপরাহ্ণ, ১২ জানুয়ারি ২০২১

ফেনীতে গত বছরের তুলনায় এবার চার হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বিভিন্ন রবি ফসল আবাদ করা হচ্ছে। সরকারি প্রণোদনা ও প্রদর্শনী বাড়ানোয় ফেনীতে চলতি রবি মৌসুমে আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ফেনীতে ১৩৪ কৃষি ব্লকে ৬৯ হাজার ৫৫২ হেক্টর চাষাবাদ যোগ্য জমি রয়েছে। এর মধ্যে রবি মৌসুমে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪৯ হাজার ৭৯১ হেক্টর। কিন্তু নানা জটিলতায় কৃষকরা রবি মৌসুমে অনেক জমি অনাবাদি রেখে দেন। গত মৌসুমে জেলায় ২৯ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। প্রণোদনা ও প্রদর্শনী পেয়ে এবার তা বেড়ে ৩৩ হাজার ৮৫৫ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রণোদনা অব্যাহত থাকলে আগামী রবি মৌসুমে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪৯ হাজার হেক্টরে গিয়ে দাঁড়াবে।

চলতি মৌসুমে বোরো ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম ও শীতকালীন সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলার ১৩ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে ৪৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার বীজ ও সার এবং ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার কৃষকের মাঝে বোরো ধানের হাইব্রিড বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ৯৩ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যয়ে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৮৩টি প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বিনা মূল্যে বীজ, সার ও প্রদর্শনী ব্লক পেয়ে অনেক কৃষক অনাবাদি ও পতিত জমিতে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করেছেন।

কৃষকরা বলছেন, রবি মৌসুমে যেকোনো ফসল আবাদের জন্য সেচের প্রয়োজন পড়ে। সরকার প্রণোদনা দিলেও সেচের ব্যবস্থা না থাকায় অনেক কৃষক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেন না। তাছাড়া কোনো কোনো বছর নভেম্বর ও ডিসেম্বরে অতিবৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা রবি মৌসুমে জমি চাষ করেননা।

কৃষি বিভাগ জানায়, ফেনীতে ৩ লাখ ৩১ হাজার ৩৮৪ পরিবারের মধ্যে ১ লাখ ৭২ হাজার ৩২০টি পরিবার কৃষি কাজের সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে ৬৪ হাজার ৮৭৮টি ক্ষুদ্র ও ৫৮ হাজার ৭২টি প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষি পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের বেশির ভাগ কৃষকই অসচ্ছল ও দ্ররিদ্র সীমার নিচে বসবাস করেন। রবি মৌসুমে ফসল আবাদে খরচ বেশি পড়ে। এজন্য গত বছরগুলোয় অনেক কৃষক চাষাবাদ থেকে বিরত থাকতেন। কিন্তু এবার প্রণোদনা ও প্রদর্শনী পেয়ে তারাও আবাদে ফিরেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিঠুন ভৌমিক জানান, চলতি রবি মৌসুমে বোরো, গম, ভুট্টা, সরিষা, সূর্যমুখী, চিনাবাদাম, মুগ চাষাবাদের জন্য ফেনীতে সাড়ে ১৩ হাজার ৫০০ কৃষকের মাঝে ৪৫ লাখ ১৪ হাজার টাকার বীজ ও সার বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬ লাখ ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে এক হাজার বিঘা জমিতে বোরো আবাদের জন্য এক টন বীজ ও ২০ টন সার বিতরণ করা হয়েছে। একইভাবে ৩ লাখ ২৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০০ বিঘা জমিতে গম চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। ৫০০ বিঘা করে ভুট্টা ও সরিষা চাষের জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। এক হাজার বিঘা সূর্যমুখী চাষ করার জন্য ১৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া চীনাবাদাম ও শীতকালীন মুগ চাষের জন্য জেলাজুড়ে ৩০০ কৃষকের মধ্যে ৩ লাখ ৯২ হাজার টাকার বীজ ও সার বিনা মূল্যে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে জেলাজুড়ে নির্বাচিত ১০ হাজার কৃষককে ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয়ে হাইব্রিড ধানের বীজ দেয়া হয়েছে।

এদিকে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন অফিসার কৃষিবিদ মো. জুলফিকার আলী জানান, কৃষক পর্যায়ে উন্নত জাতের ফসল উৎপাদনের জন্য জেলায় চলতি মৌসুমে ৯৩ লাখ ১২ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৩ জাতের ১ হাজার ৪৮৩টি প্রদর্শনী প্লট করা হয়েছে। এসব প্রদর্শনীতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। নতুন জাতের ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে এ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়।

ফেনী সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নের কৃষক আবদুল কুদ্দুস জানান, প্রায় এক যুগ ধরে তার বাড়ির পাশের তিন বিঘা জমিতে রবি মৌসুমে কোনো চাষাবাদ হতো না। কিন্তু এবার এক বিঘা জমিতে সরিষা চাষাবাদের জন্য তিনি বিনা মূল্যে সরকারি বীজ ও সার পেয়েছেন। তাই নিজ উদ্যোগে তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন।

তিনি বলেন, এলাকার আরো অনেক কৃষক প্রণোদনার সার ও বীজ পেয়ে বিভিন্ন রকমের ফসল আবাদ করেছেন। ফলে এবার অনাবাদি জমির পরিমাণ কমে গেছে।

ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বিথী জানান, সতর্কতার সঙ্গে তালিকা প্রণয়ন করে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। তালিকা প্রস্তুতকালে প্রকৃত চাষীদের নির্বাচন করতে পারায় গত বছরের তুলনায় এবার আবাদি জমির পরিমাণ বেড়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, কৃষকদের উৎপাদনে উৎসাহী করে ফসল উৎপাদন বাড়াতে সরকার ফেনীসহ সারা দেশে বিনা মূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করেছে। এছাড়া পাঁচ জেলা কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনী স্থাপনসহ নানা কার্যক্রমে জেলায় এক ফসলি জমিকে দোফসলিতে রূপান্তর ও দ্বিফসলি জমিকে তিন ফসলি জমিতে রূপান্তর করার প্রচেষ্টা চলছে।

জেলা প্রশাসক ও জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সরকার দেশের প্রতিটি আবাদযোগ্য মাটি উৎপাদনের আওতায় আনতে নানামুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছে।  তার অংশ হিসেবে কৃষকদের নানা প্রণোদনা দিয়ে অনাবাদি জমি আবাদে ফেরানোর চেষ্টা করছে। আমার ফেনীতে ১ ফসলি জমিকে ২ ফসলি ২ফসলি জমিকে ৩ ফসলি জমিতে রূপান্তর করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ফেনীতে কৃষি সম্প্রসারনের সহযোগিতায় নতুন নতুন ফসলের আবাদ শুরু হয়েছে যেমন, মালটা, সূর্যমুখী, কমলা, ড্রাগন। এছাড়াও সরিষার আবাদও আগের থেকে বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেনীতে জমি কম হলেও আমরা চেস্টা করছি সেগুলোকে ঠিকমত কাজে লাগাতে। এজন্য জেলা প্রশাসন থেকে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরকে নির্দশনা দেয়া আছে যাতে করে কৃষকদের ভোগান্তি পোহাতে না হয় সব রকম সহযোগিতা যেন তারা সহজে পায়। 

সম্পাদনা:আরএইচ/এনকে

 

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.