ফেনীতে মৎস্য-কৃষি খাতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি • নতুন ফেনীনতুন ফেনী ফেনীতে মৎস্য-কৃষি খাতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি • নতুন ফেনী
 ফেনী |
২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেনীতে মৎস্য-কৃষি খাতে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি

নিজস্ব প্রতিনিধিনিজস্ব প্রতিনিধি
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৫৯ অপরাহ্ণ, ২৯ আগস্ট ২০২৪

ফেনীতে বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্ষতচিহ্ন। বন্যায় ভেসে গেছে সড়ক, ঘরবাড়ি, গবাদিপশু। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মৎস্য ও কৃষি খাতে। এ দুটি খাতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষেতে মাচা থাকলেও নেই সবুজ গাছ। পানির নিচ থেকে ভেসে উঠছে হলুদ, আদা, আউশ, আমন ও শীতকালীন আগাম বিভিন্ন সবজির ক্ষেত। দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ছয় উপজেলায় শুধুমাত্র কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৪৫১ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি। এতে প্রায় দুই লাখের বেশি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে বন্যায় জেলার অধিকাংশ পুকুর ও ঘেরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। বন্যায় মৎস্য খাতে রেণু, পোনা, বড় মাছ ও পুকুরের অবকাঠামোগত ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র জানায়, কয়েকদিনে জেলার ছয় উপজেলায় বন্যায় মাছ চাষিদের ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এ খাত সংশ্লিষ্ট ২০ হাজারের বেশি মানুষ। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে একক ও যৌথ মালিকা ১৮ হাজার ৭৬০টি পুকুর-দীঘি। এসব পুকুর থেকে ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বড় মাছ এবং ১৯৭ লাখ টাকার মাছের পোনা ভেসে গেছে। এছাড়া জেলায় খামারিদের ৫৪ লাখ টাকার অবকাঠামো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ফেনী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, মৎস্য খাতে ২৮ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আরও সময় লাগবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বন্যায় জেলার ৩০ হাজার ৩৫২ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা মোট ফসলি জমির ৭৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। তারমধ্যে এক হাজার ৮৬৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ২৬ হাজার হেক্টর আমন, এক হাজার ৮৫৪ হেক্টর আউশ, আবাদ করা ৫২৫ হেক্টর শরৎকালীন সবজির পুরো অংশ, ৬৯ হেক্টর ফল বাগান, ৭ হেক্টর আদা, ১৬ হেক্টর হলুদ এবং ১৬ হেক্টর আখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দাগনভূঞা ওমরাবাদ গ্রামের কৃষক আবু তাহের জানান, ফসল নষ্ট হয়েছে ঘরে থাকা ধান-চালও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছি।

ছাগলনাইয়া পৌরসভার কৃষক আমীর হোসেন বলেন, বছরের প্রথম দফায় বন্যায় আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপর আবার বীজ বপন করে আমন আবাদের কিছুদিন পর বন্যার পানিতে ভেসে যায়। দেড় মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফার বন্যায় সবগুলো ফসলি জমি এখন বালুর স্তূপ হয়ে আছে। কোনোভাবে আবাদ করে খাবো এমন পরিস্থিতি আর নেই।

অলি উল্লাহ নামে পরশুরামের আরেক কৃষক বলেন, ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছি। জমির ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি ঘরে থাকা ধান-চালও পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবাদ করার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

ফুলগাজী এলাকার মৎস্য চাষি মো. দুলাল বলেন, নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুকুরের চারপাশে যেটি জাল দিয়ে ঘিরে রেখেছিলাম। কিন্তু ভয়াবহ বন্যা সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, বন্যায় কৃষিতে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। আমাদের জেলা কার্যালয়ও বুক পানিতে নিমজ্জিত ছিল। তারপরও আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং তাদের নানা পরামর্শের মাধ্যমে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট থেকে টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফেনীতে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ অঞ্চলের মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়ে জেলার ১০৮ গ্রাম তলিয়ে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। এখন পর্যন্ত ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সম্পাদনাঃ আরএইচ

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.