নিজস্ব প্রতিনিধি>>
সাধু ও চলিত ভাষা একসাথে লেখা হয়না কেন ? ভাষা প্রতিযোগীতা না বলে ভাষা প্রতিযোগ কেন বলা হয় ? বাংলা ভাষায় আ আ কে আবিস্কার করেছেন । গামছার সন্ধি বিচ্ছেদ কি ? বাংলা বানান লেখার ক্ষেত্রে দীর্ঘইকার (ী) এর স্থলে ইশ্বই (ই) কেন হলো । এ ভাবে মঞ্চে উপবিষ্ট শিক্ষকেদেরকে কাছে বিভিন্ন প্রশ্ন করে উত্তর জানতে চায় শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার ফেনী অঞ্চলের এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ উৎসবে এ ভাবে নানা প্রশ্ন করে শিক্ষার্থীরা। উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ফেনী সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে চত্বরে। উৎসবে প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এই চারটি বিভাগে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলার মোট এক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।
সকাল নয়টায় উৎসব শুরুর কথা থাকলেও সকাল আটটা থেকেই দূর-দূরান্তর শিক্ষার্থীরা ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় উৎসবস্থলে জড়ো হতে শুরু করে। সকাল নয়টার মধ্যেই অনুষ্ঠান চত্বর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। প্রতিযোগে অংশ নিতে আসা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যেও ভাষা নিয়ে ছিল দারুন উচ্ছ্বাস-উন্মাদনা। দিনভর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ছিল উৎসবের আমেজ।
সকাল ৯টা বাজার সাথে সাথে শুরু হয়ে ব্যান্ডপার্টির বাদ্যবাজনা। সোয়া নয়টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ এবং ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অ্ধ্যাপক আ ফ ম দানীউল হক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক। পরে অতিথিরা ভাষা প্রতিযোগের স্মারক বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ বলেন, মেধাবিকাশে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রথম আলো এর আগেও গণিত উৎসবসহ নানা অনুষ্ঠান করেছে। ভাষা নিয়ে আজকের অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ফেনী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রথম আলোর আয়োজনে আজকের এই ভাষা প্রতিযোগের মতো এ ধরনের উৎসব শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহী করে তুলবে। এর মধ্য দিয়ে শুদ্ধ বাংলা চর্চা হবে এবং বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ হবে।
উদ্বোধনের পর শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধ ভাবে শ্রেণিকক্ষে গিয়ে নিজ নিজ আসনে বসে।এরপর প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত চারটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৪০ মিনিটের মূল্যায়ন ও শুদ্ধ বানান পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয় মাঠে স্থাপিত প্যান্ডেলে প্রথমা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক জাফর আহম্মদ রাশেদের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নর জবাব দেন কুমিল্লা সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুল হক, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি ড. আলী হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশিদ, শ্রীনগর সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক কুদরত-ই-হুদা, ফেনীর সরকারী জিয়া মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক এ এইচ আবু আহমেদ, ফেনী সরকারী কলেজের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. রেজাউল হক। শিক্ষার্থীদের পশ্নে উৎসব হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। প্রশ্নোত্তর পর্বে ভাল এবং বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করায় কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে উপহার হিসাবে বই তুলে দেয়া হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বের মাঝে ক্লোজআপ ওয়ান তারাকা মোহাম্মদ রাশেদ ছাড়াও কয়েকজন শিক্ষার্থী আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন।
ফেনী অঞ্চলের ভাষা প্রতিযোগ উৎসবে চারটি বিভাগে ৬০ জনকে বিজয়া করা হয়। অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে সনদ, পদক ও বই তুলে দেয়। বিজয়ীরা ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ভাষা প্রতিযোগ উৎসবে অংশ নেবে।
প্রতিযোগীতায় সেরা শিক্ষার্থী হয়েছে কুমিল্লার ফয়েজুন নেছা সরকারী বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনিহা সিদ্দিকা অহনা। ‘বানান বীর’ হয়েছে নোয়াখালী জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু জহর মাহবুব উদ্দিন। সমাপনী অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রথম আলো ফেনী প্রতিনিধি আবু তাহের, ফেনী বন্ধুসভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম।
অনূষ্ঠানের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল প্রথম আলো ফেনী বন্ধুসভা।
সম্পাদনা: আরএইচ
ফেনীতে প্রথম আলো’র ভাষা প্রতিযোগ অনুষ্ঠিত
