ঢাকা থেকে এ্যাম্বুলেন্সে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে করিম ভাইকে ফেনী নিয়ে আসছে। সারাটা পথ এ্যাম্বুলেন্সের সহযাত্রীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আর অশ্রু জলে ভাসছি। রাত আটটায় অপেক্ষমাণ ফেনী জেলা সদর হাসপাতালের চত্বরে। আমার সাথে সহকর্মী আতিয়ার সজল, মঞ্জিলা মিমি, জুলহাস তালুকদার, দুলাল তালুকদার ও ফেনী প্রস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া। হুটার বাজিয়ে এ্যাম্বুলেন্স ডুকলো। তখন অক্সিজেন স্যাচুরেশন পালস্ হার্ট বিট দ্রুত উঠা নামা করছিল। নেয়া হলো আইসিইউতে। তীব্র চেষ্টাও চললো। একসময় মনিটরে সব আস্তে আস্তে সরল রেখায় স্থির হতে শুরু করলো। চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে গেলে। আমার করার কিছু ছিলনা। অনুমতি দেয়া হলে সব খুলে নেয়া হলো। মরদেহ পাঠিয়ে দেয়া হলো উকিল পাড়ায় তাঁর বাসায়।
এদিকে আমি বারবার ভেঙ্গে পড়েছিলাম। তারপরও আল্লাহকে স্বরণ করে রাতে মানসিক জোর নিয়ে কাফন কিনলাম। খবর দিলাম দাফন টিমকে। সহকর্মী সজলকে নিয়ে ফেনী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানার বাসায় গেলাম। তিনি আমার হাতে তুলে দিলেন দাফন টিমের জন্য পিপিইসহ নিরাপত্তা সরঞ্জাম। কাফন ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম বুকে চেপে ছুঁটে গেলাম করিম ভাইয়ের বাসায়। আমার আগেই পৌঁছে গেছে জামশেদের নেতৃত্বে ফেনী দারুন নাজাত মাদরাসা দাফন টিম। তারা শেষ গোসল করালেন। ফেনী পৌর প্যানেল মেয়র আশ্রাফুল আলম গিটার ও স্থানীয় কাউন্সিলর সাইফু ভাই নিয়ে এলেন ফ্রিজিং গাড়ী। গোসল শেষে রাখা হলো সেখানে। সকাল সাড়ে ৯টা কাঁধে বয়ে নিয়ে গেলাম তাঁর আমৃত্য সভাপতিত্বের সেন্ট্রাল হাই স্কুল মাঠে। সেখানে শেষ ফুলেল শ্রদ্ধা ও যানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
করিম ভাই আপনি অক্সিজেন সাপোর্টেও যতক্ষণ স্বজ্ঞানে ছিলেন ততক্ষণ আমার সাথে দফায় দফায় কথা বলেছেন। আমি খাওয়া নিয়ে রাগ করেছি। মাফ করবেন। আপনাকে মানসিক সাহস ও সতর্ক করার প্রতি উত্তরে বারবার বলতেন আমরা এজমা পার্টনার। আগে নিজে সাবধান হও। বলতেন তাহের ভাই ও মীরুর খোঁজ খবর রাখিও। করিম ভাই আপনি জানতেও পারেননি মীরু ভাই অক্সিজেন সাপোর্টে। তাহের ভাইও ঝুঁকিতে। আমি সবার খোঁজ খবর রাখছি। করিম ভাই আমারে মাফ করে দিয়েন।
লেখক: ফেনী ব্যুরো ইনচার্জ, সময় টিভি