সৎ সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নুরুল করিম মজুমদার • নতুন ফেনীনতুন ফেনী সৎ সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নুরুল করিম মজুমদার • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১৬ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩ বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৎ সাংবাদিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নুরুল করিম মজুমদার

মো. শফি উল্লাহ রিপনমো. শফি উল্লাহ রিপন
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৪:০৮ অপরাহ্ণ, ০৭ জুলাই ২০২০

সাংবাদিক নুরুল করিম মজুমদারকে হারিয়ে মনে হল আমি একজন অভিভাবক হারিয়েছি। তার অসুস্থতা ও মৃত্যুর সংবাদে যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। এরই মধ্যে আমি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তবুও করিম ভাইকে নিয়ে কিছু স্থতি তুলে ধরতে চাই …

২০০৩ সালে সাংবাদিকতা করব ভেবে ফেনীতে একটি সাপ্তাহিকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পেয়ে আসি। কিন্তু পত্রিকার অফিস খুঁজে পেলাম না। যাওয়ার সময় বড় মসজিদের দোতলায় সাপ্তাহিক হকার্সের সাইনবোর্ড দেখে অফিসে গেলাম। দেখা হল সরোয়ার ভাইয়ের সাথে। তিনি বললেন, অপেক্ষা করেন করিম ভাই আসলে কথা বলুন। করিম ভাই এসে কি করি জানতে চাইলো, তারপর বলল, ঠিক আছে নিয়মিত নিউজ পাঠাও। হকার্স তখন ব্লকে প্রকাশিত হত প্রেসম্যান প্রিন্টাস থেকে। সেই থেকে শুরু।

করিম ভাই শিখিয়েছেন নিউজ কিভাবে করতে হয়। তখন একঝাঁক তরুণ সংবাদকর্মী হকার্সে কাজ করতাম। আমি, শাহজালাল ভূঁইয়া, সৌরভ পাটোয়ারী, আদিত্য আরাফাত, হুমাউন কবির, ফুলগাজী থেকে মুরাদুল আলম, ছাগলনাইয়ার মোস্তফা ভাই, পরশুরামের সুজন, দাগনভুঞা থেকে সিরাজ উদ্দিন দুলাল, সোনাগাজী থেকে আব্দুল আলীম। করিম ভাইয়ের ছেলে তারেক মজুমদার বেশীরভাগ অফিসে সময় দিতেন। পরবর্তীতে আরো অনেকে যোগ দিয়েছেন। পত্রিকা প্রকাশিত হবার পর তিনি নিউজ মূল্যয়ন করতেন। বস্তুনিষ্ট সংবাদ প্রকাশ ও সততার সাথে কাজ করার অনুপ্রেরণা দিতেন।

একবার ফেনী রেল স্টেশনে ভাসমান নারী মাদক ব্যবসায়ীদের উপর তথ্যবহুল নিউজ সংগ্রহ করলাম আমি ও তারেক। কিন্তু করিম ভাই তা ছাড়লেন না। বললাম কেন ভাই, তিনি বললেন, যাদের বিরুদ্ধে তুমি নিউজ করছ তাদের কোন মান-সম্মান নেই। কিন্তু কাল যখন তুমি ঐ পথে কলেজে যাবে তখন যদি কেউ তোমার ইজ্জতের উপর হাত দেয় কি করবা। উত্তর জানা ছিল না। তিনি এভাবে শিখিয়েছেন কখন, কোথায় কোন নিউজ করতে হয়।

মাঝখানে জীবিকার প্রয়োজনে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকলেও হকার্সের সবার সাথেই যোগাযোগ ছিল। করিম ভাই বিশেষ সংখ্যায় লেখা পাঠাতে বলতেন। দেশে আসার পর হকার্সে বেশী সময় দিতে পারিনি। তবুও তিনি যে কোন প্রয়োজনে ফোন করে জানাতেন। আসতে বলতেন। এরই মাঝে আরেক ঝাঁক নতুন সংবাদকর্মী তিনি তৈরী করে নিয়েছেন। নিউজের ক্ষেত্রে কারো সাথে তিনি আপোস করতেন না।

করিম ভাই অসুস্থ হবার খবর শুনতেই সহকর্মী শাহজালালকে নিয়ে ছুটে গেছি হাসপাতালে। করিম ভাই অনেকটা সুস্থ ছিলেন, বলেছি বাসায় ছলে যান। তিনি জানালেন ১৪ দিনতো কোয়ারেন্ন্টাইনে থাকতে দাও। করিম ভাইকে বললাম কাল শুক্রবার বাড়ী যাব আম্মাকে দেখতে। তিনি বললেন ঠিক আছে, তার খেয়াল রেখ। কিন্তু এক রাতেই তার অবস্থা শেষ করে দিল। শুক্রবার ফজরের পরই তারেকের ফোন, শফি কাকা আব্বুর অবস্থা খারাপ, সারারাত ঘুমোতে পারিনি। আব্বুর অক্সিজেন লেভেল নিচে নেমে যাচ্ছে। কি করব বুঝতে পারছি না। দ্রুত গিয়ে দেখি অবস্থা খুবই খারাপ। অক্সিজেন ছাড়া চলছেই না। অক্সিজেন সরালেই জ্ঞান হারান। এরই মাঝে লুজ মোশান। আমাকে বললেন, শফি ক্ষিদা লেগেছে, জিজ্ঞাসা করলাম কি খাবেন, বললেন স্যূপ, মাল্টা। তারাতারি তারেককে বাসায় পাঠিয়ে স্যূপ আনালাম। কিন্তু কষ্টের বিষয় তিনি তা খেতে পরেননি। মুখ থেকে অক্সিজেন খুললেই তিনি জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরলেই বলেন স্যূপ দাও সফি।

এরই মাঝে সহকর্মী আতিয়ার সজলকে করিম ভাইয়ের অবস্থা জানালাম। বললাম কিছু একটা করুন নতুবা বড় বিপদ হতে পারে। দ্রুতই সজল এলেন। ঢাকায় যোগাযোগ করে তাকে ঢাকায় নেয়ার ব্যবস্থা করলেন। এরই মাঝে তারেকের সাথে যোগাযোগ করে খোঁজ খবর নিচ্ছি, কিন্তু ভরসা পাচ্ছিলাম না।

শত চেষ্টা করেও বাঁচানো গেলনা করিম ভাইকে। আল্লার কাছে এই প্রার্থনা করি, তিনি যেন করিম ভাইকে জান্নাত দান করেন।
লেখক: ফেনী প্রতিনিধি, ইউএনবি

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.