আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই স্থায়ীভাবে মুহুরী কহুয়া নদীর টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের আশ্বাস দিয়েছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।
মঙ্গলবার (২ জুলাই) দুপুরে ফুলগাজী-পরশুরাম মুুহুরী নদীর ভাঙ্গনের স্হান পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা ও এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই স্থায়ীভাবে মুহুরী ও কহুয়া নদীর টেকসই বেড়িবাঁধের নির্মানের আশ্বাস দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, মুহুরী ও কহুয়া নদীর বেড়িবাঁধের ভাঙ্গনের বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত সময়ের মধ্যে টেকসই বাঁধ নির্মান শুরু করা হবে। এ সময় তিনি পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের মাঝে শুকনো খাবার তুলে দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার, ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার, ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজুমদার, ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়াসহ সরকারি উর্ধতন কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত তিন দিনের ভারি বর্ষন এবং ত্রিপুরা থেকে পাহাড়ি ঢলের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ৩টি স্থানে এবং পরশুরাম উপজেলার শালধর এলাকায় একটি স্থানে ভাঙ্গন সৃষ্টি দেখা দেয়। এতে লোকালয়ে পানি ঢুকে প্রায় ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত প্রায় ৩০ হাজার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার সন্ধ্যায় মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার ১৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। স্থানীয়রা জানায়, এক পর্যায় বাঁধ উপচিয়ে ফুলগাজী বাজারে পানি প্রবেশ করে ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কের ফুলগাজী বাজার অংশ এক হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় । সড়কের পাশে অনেকের দোকানে ঢলের পানি ঢুকে ব্যবসায়ীদের মালামাল নষ্ট হয়। সাময়িক ফেনী-পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি এলাকার উজানের পানিতে সোমবার দুপুর থেকে মুহুরী নদীর পানিপ্রবাহ বাড়তে থাকে। সন্ধায় নদীর পানি বিপৎসীমার প্রায় ১৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করে। উজানের পানির চাপে বাঁধের দুটি স্থান ভেঙে ছয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, বন্যায় গ্রামের মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। স্থানীয় লোকজন অনেক চেষ্টা করেও প্রবল স্রোতের কারণে বাঁধ রক্ষা করতে পারেনি। গ্রামীন সড়ক ও ফসলী জমি পানিতে তলিয়ে যায়। পুকুরের মাছ ভেসে যায়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে মুহুরী নদীর পানির প্রবাহ কিছুটা কমলেও গ্রাম সমুহে পানি তেমন কমছে না। বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার অনুষ্ঠিতব্য মঙ্গলবার এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করেছিলেন বোর্ড কতৃপক্ষ।
এদিকে সোমবার রাতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে কহুয়া নদীতে পড়ে মো. মামুন (২২) নামে এক তরুনের মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব ঘনিয়া মোড়া গ্রামের আবদুল মন্নানের ছেলে। স্হানীয়রা জানান, সোমবার রাত ৯টার দিকে বাড়ি থেকে জাল নিয়ে কহুয়া নদীতে মাছ ধরতে গেলে এঘটনা ঘটে। ফুলগাজী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সম্পাদনাঃ আরএইচ