নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বহুমুখী তত্পরতা সত্ত্বেও দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ৬৬টি নারী, মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংগঠনের প্লাটফর্ম ‘সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি’। তারা বলেছেন, সম্প্রতি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদ্রাসা ছাত্রীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের পরিণতি। তারা বলেন, নারী নির্যাতনকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃশ্যমান শাস্তির ব্যবস্থা না করলে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ হবে না। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মিলনায়তনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আমাদের ক্লান্তিহীন ও ধারাবাহিকভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা হচ্ছে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। সোনাগাজীতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেখানে নারী সন্ত্রাসীও ছিল। এই অধ্যক্ষ একাধারে যৌন নিপীড়ক, সন্ত্রাসী এবং হত্যাকারী। তাঁর মতে, নারীর প্রতি সহিংসতাকে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে কেন এখনও পূর্ণ আইন তৈরি করা হচ্ছে না সে বিষয়েও প্রশ্ন রাখেন তিনি।
নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকার দেওয়া থাকলেও নারীরা সহিংস বৈষম্যের শিকার। নারীর প্রতি সহিংসতা বজায় রেখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করা যাবে না। তিনি হাইকোর্ট বিভাগ ২০০৯ সালে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে উত্ত্যক্তকরণ, যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন রোধের লক্ষ্যে যে নির্দেশাবলী জারি করেছিলেন তার বাস্তবায়নের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন এ্যাকশন এইড এর কাশফিয়া ফিরোজ, হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের দিলীপ কুমার সরকার, আইইডির সঞ্চিতা তালুকদার, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশনের সেলিনা আহমেদ, ব্র্যাকের হোসনে আরা ডালিয়া, বাংলাদেশ ইনডিজেনাস উইমেন নেটওয়ার্কের চঞ্চনা চাকমা, বাংলাদেশ ওয়াইডাব্লিউসিএ’র পূরবী তালুকদার, ব্লাস্টের ফারজানা ফাতেমা, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ফাহমিদা জামান, প্রতিবন্ধী নারীদের জাতীয় পরিষদের লাকী আক্তার এবং সেন্টার ফর মেন এন্ড মেসকুলিনিটিজ স্টাডিসের তাহিয়া রহমান প্রমুখ।
বক্তারা মাদ্রাসা ছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টাসহ সকল নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার তীব্র নিন্দা এবং রাষ্ট্রকে এই দায়ভার নেওয়ার দাবি জানান। তাঁরা আরো বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি সমাজে মানবিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি পেলে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি







