মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত ও অন্যতম আসামি নুর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামিম স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রবিবার বিকাল ২টা ৫৫ মিনিট থেকে রাত ১টা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘন্টা সিনিয়র জুুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
পরে রাত ১টা ৫ মিনিটের দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশান (পিবিআই) এর স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন এন্ড অপারেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহেরুল হক চৌহান এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
এসময় তিনি বলেন, পিবিআই এ মামলার দায়িত্ব পাওয়ার চার দিনের মধ্যে (১০-১৪ এপ্রিল) আমরা ঘটনার মূল নায়ক যারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করেছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা আইনের মধ্যে থেকে বিজ্ঞ আদালতের কাছে তাদের হাজির করেছেন। আদালত দীর্ঘ সময় ধরে তাদের সিআরপিসির ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আসামীদ্বয় স্বতস্পূর্তভাবে বিজ্ঞ আদালতের কাছে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আসামীদ্বয় পুরো বিষয় খোলাসা করেছেন। হত্যাকান্ডটি কারা ঘটিয়েছে, কিভাবে ঘটিয়েছে, কি প্রক্রিয়ায় ঘটিয়েছে বিস্তারিত বলেছেন কিন্তু তা আপনাদের সামনে পেশ করবো না মামলার তদন্তের স্বার্থে।
তিনি আরো বলেন, আসামীরা অপরাধ স্বীকার করেছেন, তারা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। তারা জেলখানা (সিরাজ উদ দৌলা) থেকে হুকুম পেয়েছেন।
তাহেরুল হক চৌহান আরো বলেন এখনো পর্যন্ত এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ১৩ জনের নাম এসেছে। এছাড়াও বিক্ষিপ্তভাবে কিছু নাম এসেছে। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবো।
তিনি বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত যে চারজন তাদের সকলকে আমরা গ্রেপ্তার করতে পারিনি। দুইজন গ্রেপ্তার আছে, বাকী দুইজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। যেকোন সময় আপনাদের একটি ভালো খবর দিতে পারবো।
এর আগে বৃস্পতিবার রাতে ময়মনসিংহ ভালুকা থেকে নুর উদ্দিন ও পরদিন শুক্রবার সকালে মুক্তাগাছা থেকে শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনবেস্টিগেশন (পিবিআই)। নুর উদ্দিন নুসরাত হত্যা মামলার ২নং ও শাহাদাত হোসেন শামিম ৩নং আসামী।
সোনাগাজীর চাঞ্চল্যকর নুসরাত হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ছয় আসামি এবং এজাহারবহির্ভূত সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১১জন আসামি রিমান্ডে।
এর আগে ৯ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালত নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেন।
১০ এপ্রিল অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলাকে সাতদিন, আবছার উদ্দিন ও আরিফুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেন একই আদালতের বিচারক। ১১ এপ্রিল উম্মে সুলতানা পপি ও যোবায়ের হোসেনকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেন একই আদালতের বিচারক সরাফ উদ্দিন আহম্মেদ।
১৩ এপ্রিল শনিবার মামলার আরেক আসামী জাবেদ হোসেনকে ৭দিনের রিমান্ড দিয়েছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন।
গত বুধবার রাত ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি। পরদিন সকালে ময়তদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকেলে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদরাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে সে ওই বিল্ডিংয়ের তিন তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪/৫ জন ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। সে অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
সম্পাদনাঃ আরএইচ/ এনজেটি