কিছুতেই থামছে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মায়ের আহাজারি। নুসরাতকে অগ্নিদগ্ধ করার ১৭ দিন অতিবাহিতহলেও নুসরাতের মমতাময়ী মা শিরিন আক্তারের কান্নায় আকাশ-বাতাশ ভারি হয়ে উঠছে। তার কান্নায় চোখ ভিজে উঠছে নুসরাতের স্বজন ও সমবেদনা জানাতে আসা মানুষের।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নুসরাতের শয়ন কক্ষে তার খাটের উপর বসে এবং শুয়ে আহাজারি করছেন শিরিন আক্তার। তোরা আমার নুসরাতকে আনি দে, ও আমার বুকের মণি নুসরাত, ও আমার চোখের মণি রাফি, আমার শূন্য বুকে ফিরে আয়, ও আমার রাফি তুই কই, ও আল্লাহ আমাকে নিয়ে আঁর নুসরাতকে ফিরিয়ে দাও। চোখে ঘুম এলে আর নুসরাতে দেখি। আঁই ঘুম যাইতান্ন, তোরা আঁর নুসরাতকে ফিরিয়ে দে- এমন বিল্প করতে করতে কাঁদতে থাকে।
ওই কক্ষে নুসরাত ছাড়া তার কাপড়-ছোপড়, বই খাতা, আসবাবপত্র, সবই আছে। শুধু নেই নুসরাত। আর তারই কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। নুসরাতকে বুকে জড়িয়ে এ কক্ষেই তিনি ঘুমাতেন। মায়ের বুকে ঘুমানোর সময় নুসরাত বলতেন নানা গল্প। সেই খাটে শুন্য বুকে রাত্রি যাপন করছেন শিরিন আক্তার। কিছুতেই ঘুম আসেনা তার। হাজারো স্বজন এসে তাকে শান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই কেউ তার কান্না থামাতে পারছেননা।
শিরিন আক্তার বলেন, চোখে ঘুম এলেই যেন নুসরাত তাকে মা বলে ডেকে উঠে। তখনই তিনি নুসরাতকে খুঁজতে থাকেন। কিছুতেই ভুলতে পারছেননা নুসরাতের অতীত স্মৃতি আর পোড়া শরীরে দু:সহ যন্ত্রণার কথা। নুসরাতের পোড়া গন্ধে যেন আজও তার নাকে লাগছে। এসব বলতে বলতে নুসরাতের স্মৃতি স্মরণ করে বুক থাবড়িয়ে থাবড়িয়ে আবারো বিলাপ করতে থাকেন তিনি। আত্মীয় স্বজনেরা যেন তাকে শান্তনা দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন।
গত ২৭ মার্চ যৌন নিপীড়নের পর ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে নুররাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার লোকজন। টানা পাঁচ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়ে ১০ এপ্রিল বুধবার রাত নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি। পরদিন সকালে ময়তদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকালে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।
এখন পর্যন্ত আটজন আদালতে নুসরাত হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এদের মধ্যে নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রুহুল আমীন, পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদাক মাকসুদ আলমসহ ২০জনকে জনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি







