অবশেষে সিসি ক্যামেরার আওতায় এসেছে বহুল আলোচিত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা। পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্তে গত শুক্রবার মাদরাসা ক্যাম্পাসে ১০টি সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পুরো মাদরাসাটি সিসি ক্যামেরার আওয়তায় আসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
দীর্ঘদিন ধরে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবী উঠলেও সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নানা টালবাহনায় এটি স্থাপন করেন নি। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী মাদরাসা সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত হলেও মাদরাসা তহবিলে আর্থিক সংকটের অজুহাত তুলে সাবেক অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাহ একক সিদ্ধান্ত নিয়ে সিসি ক্যামেরা লাগাননি।
এদিকে সোনাগাজী ইসলামিয় ফাজিল মাদরাসায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে। তাদের দাবী এটি আরো আগে স্থাপন করা হলে মেধাবী ছাত্রী নুসরাতের প্রাণ বিসর্জনসহ অপরাপর শিক্ষার্থীরা নিপীড়নের শিকার হতো না। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্যদিয়ে অপরাধ প্রবণতা কিছুটা কমলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে বলে জানান তারা।
আলমগীর হোসেন নামের ওই মাদরাসার সাবেক এক ছাত্র জানান, সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ছাত্রীদের যৌন হয়রানিসহ মাদরাসা ক্যাম্পাসে যে কোন ধরণের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। তবে মাদরাসায় এটি আরো আগে স্থাপন করা উচিত ছিলো। এছাড়াও সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করার দাবী জানান তিনি।
সোনাগাজী পৌরসভার কান্সিলর ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য শেখ আবদুল হালিম মামুন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাব করি। ওই প্রস্তাব সভায় পাশ হলেও অধ্যক্ষের একক সিদ্ধান্তে তা লাগানো হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ওই সময় মাদরাসা সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হলে নুসরাতের মত মেধাবী ছাত্রী নৃশংসভাবে অগ্নিদ্বগ্ধ হয়ে মরতে হতোনা। দেরীতে হলেও মাদরাসাটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আসায় তিনিও স্বস্থি প্রকাশ করেন।
মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে মাদরাসাটি পুরোপুরি সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এখন থেকে মাদরাসায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ ও সংরক্ষণ করা হবে। আর কেউ অপরাধ করেও পার পাবেনা।
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে। এ ঘটনায় নির্যাতিতার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে ওইদিনই তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পবর্তীতে ওই মামলা তুলে নিতে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সহযোগিরা। তারা ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি