১৪ জুন বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। স্বেচ্ছায় রক্তদান করা মানবিক মানুষদের উৎসাহ প্রদানে দিবসটি বিশ্বের ন্যায় সারাদেশে পালন করা হয়। এদিন রক্ত নিয়ে কাজ করা সংগঠন গুলো বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে রক্তদাতাদের যেমন উৎসাহ দেয়া হয় ঠিক যারা বিনামূল্যে রক্ত পেয়ে থাকেন তাদের রক্ত পাওয়ার গল্প শোনানো হয়।
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় স্বেচ্ছায় রক্তদান নিয়ে কাজ করছে ২১টি সংগঠন। অন্যান্য সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি রক্ত নিয়েও কাজ করছে এমন সংগঠনের সংখ্যা ১০-১৫টি। সব মিলিয়ে উপজেলায় ৩০টির অধিক সংগঠনের অন্তত ৫শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রক্তদান নিয়ে কাজ করছে। যার কারণে উপজেলায় যেকোনো সময় রক্তের প্রয়োজন হলে সহজে ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলায় রক্ত নিয়ে কাজ করা সংগঠন গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো। সোনাগাজী স্বেচ্ছায় রক্তদান ফাউন্ডেশন, সোনাগাজী ব্লাড ডোনেট অর্গানাইজেশন, ভোরবাজার ব্লাড ডোনেট ক্লাব, মানবতার ডাক, মাষ্টার পাড়া সমাজ কল্যাণ সংসদ, তাকিয়া বাজার ব্লাড ডোনেট অর্গানাইজেশন, সিদ্দিকিয়া ব্লাড ডোনেট এসোসিয়েশন, স্বপ্নচারী মানব কল্যাণ সোসাইটি, চৌরাস্তা স্বপ্নছায়া ব্লাড ডোনেট অর্গানাইজেশন, কুঠিরহাট ব্লাড ফাউন্ডেশন, কুঠির হাট ভরসা, উত্তর গুনক সামাজিক সংগঠন, কুঠিরহাট ব্লাড ডোনেট এসোসিয়েশন, মানব সেবা সংস্থা, বারো মিয়ার দিঘীর পাড়ের হেল্পিং হ্যান্ডস।
এছাড়াও এলাকা ভিত্তিক স্বেচ্ছায় রক্তদান করতে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক।
সংগঠন গুলোর সদস্যরা শুধু সোনাগাজী উপজেলার মানুষের জন্য রক্ত দিচ্ছে এমনটি নয়। তারা উপজেলার বাহিরে ফেনী শহর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে রক্ত দিয়ে আসছে। পাশাপাশি রক্তদাতা ও গ্রহণকারীদের সচেতন করতে বিভিন্ন কর্মসুচীও পালন করে আসছে।
প্রতি ৩-৪মাস পরপর রক্তদানে উদ্ভুদ্ধ করতে বিভিন্ন প্রচারণা করে আসছে। নতুন রক্তদাতা তৈরী করতে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কাজ করছে। সেখান থাকে রক্তদানে উৎসাহ দিয়ে তাদের বিভিন্ন গ্রুপে সংযুক্ত করে কারো রক্তের প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করে দেয়া হচ্ছে। নতুন রক্তদাতাকে সাহস যোগাতে স্বেচ্ছাসেবকরা রক্তদান করা পর্যন্ত সাথে থাকছে। নিজের অর্থ ব্যয় করে রক্তদাতাদের যাতায়াত ভাড়া ও খাবারের ব্যবস্থা করছে। অবশ্য কিছু কিছু রক্তের প্রয়োজন হওয়া পরিবার গুলোর পক্ষ থেকে যাতায়াত ভাড়া দিয়ে থাকে। আবার অনেকে রক্ত দেয়ার পর রক্তদাতার কোনো খোঁজও নেয় না। রক্তের প্রয়োজন হলে রক্তদাতাকে অসংখ্যবার কল দিলে রক্ত নেয়ার পর তাদের একবারের জন্যও খোঁজ নেয় না।
সোনাগাজীতে সর্বোচ্ছ ১৯বার রক্ত দিয়ে মুহাম্মদ ইয়াছিন মাহমুদ তিনি সোনাগাজী ব্লাড ডোনেট অর্গানাইজেশনের সভাপতি। অন্যের জন্য রক্ত কালেকশান করার পাশাপাশি নিজের শরীরের রক্ত দেয়ার মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। আলমগীর হোসেন সোনাগাজী স্বেচ্ছায় রক্তদান ফাউন্ডেশনের সভাপতি তিনিও ১১বার রক্ত দিয়েছেন। এছাড়াও ১৫বারের অধিক রক্ত দিয়েছেন রফিকুল ইসলাম রুবেল, কামরুজ্জামান আকিব, সাদ্দাম হোসেন, ছানা উল্ল্যাহ জীবন প্রমুখ।
সোনাগাজী স্বেচ্ছায় রক্তদান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের গ্রুপে শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রক্ত নিয়ে কাজ করছে। আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের মাধ্যমে রক্তদাতা কালেকশন করে তাদের মোবাইল নাম্বার নিয়ে রাখি। যখন কারো রক্তের প্রয়োজন হয় তখন গ্রুপ মিলিয়ে আমরা নাম্বার গুলোতে কল দিই। অনেক সময় একাধিক ব্যক্তিকে কল দিয়েও রক্ত ব্যবস্থা করতে সম্ভব হয়না। কিন্তু রক্তের প্রয়োজন হলে মানুষ যেভাবে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে পরবর্তীতে তার ব্যতিক্রম ঘটে। তারপরও আমরা মানবতার কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।
মানবতার ডাক’র সভাপতি আশিকুর রহমান আশিক বলেন, আমরা সামাজিক ও মানবিক সকল কাজ করে থাকি। তবে রক্তদানের বিষয়ে একটু বাড়তি সময় দিই। কারণ এটিতেই আমরা প্রশান্তি লাভ করি।
সোনাগাজী ব্লাড ডোনেট অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ বলেন, একজন রক্তদাতা প্রস্তুত করতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু কিছু রোগীদের অভিভাবক এমন আচরণ করে যেন তারা আমাদের কাছে রক্ত জমা করে রেখেছে। এবং টাকা দিয়েই সহজে রক্ত পাওয়া যায়। এককথায় বলা যায় স্বেচ্ছায় কাজ করা মানুষদের অবহেলা করে তারা।
রক্তশূণ্যতা রোগী রফিকুন নাহারের সন্তান আবু তৈয়ব বাবুল বলেন, আমার মায়ের কয়েকমাস পর পর রক্ত লাগে। যখনই সংগঠনের লোকদের কল তারা খুব দ্রুত ব্যবস্থা করে দেয়। তাই বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে সকল রক্তদাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।
চরচান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলন বলেন, আমার রক্তের গ্রুপ এ+। আমাকে সোনাগাজী স্বেচ্ছায় রক্তদান ফাউন্ডেশনের সভাপতি আলমগীর হোসেন কল দিলে আমার গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে ফেনীর রয়েল হাসপাতালে গিয়ে একজন মহিলাকে রক্ত দিয়ে ছিলাম। তখন আমার কাছে খুব ভালো লেগে ছিলো। তাই আমি সবাইকে বলেছি যখনই কারো রক্ত লাগবে যাতে আমাকে বলা হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ উৎপল দাস বলেন, স্বেচ্ছায় রক্তদান করার মানুষ গুলো রয়েছে বলে এখন রক্তের সংকটের কারণে রোগীকে মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ফেরানোর সুযোগ রয়েছে। একসময় রক্ত দেয়া লোকের খুবই স্বল্প ছিলো। উপজেলায়ও মোটামুটি রক্তের প্রয়োজন হলে কয়েকটি সংগঠনের লোকদের কল দিলে তারা যথেষ্ট সহযোগিতা করে থাকে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন বলেন, স্বেচ্ছায় রক্তদান করা নিঃসন্দেহে একটি মহৎকর্ম। এই কাজের সাথে যারা জড়িত তারাই সবচেয়ে বেশী মানতা প্রেমি। কারণ নিজের শরীরের রক্ত দিয়ে অন্যের উপকার করা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। রক্ত নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের যেকোনো প্রয়োজনে আমি তাদের পাশে থাকবো।
সম্পাদনাঃ আরএইচ