নিজস্ব প্রতিনিধি >>
মহান স্বাধিনতা দিবসে ফেনীবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান। শনিবার গণমাধ্যমে প্রেরিত একটি বাণীতে মুক্তিযুদ্ধে ফেনীর অনসীকার্য অবদানের কথা উল্লেখ করে সকল শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
গণমাধ্যমে প্রেরিত বাণীতে জেলা প্রশাসক মো. আমিন উল আহসান বলেন, উদয়ের পথে শুনি কারবাণী ভয়নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই। প্রিয় ফেনীবাসী, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বাঙালী জাতীর জীবনে এক ঐতিহাসিক এক অবিস্মরণীয় দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিড়ে নিজ আত্ম পরিচয়ে মাথা উঁচু করে দাড়ানোর দিন। ১৯৭১ সালের ২৫ এ মার্চের কালরাত্রে অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র নিরিহ বাঙালীর উপর ইতিহাসের নৃশংসতম বর্বোরোচিত হামলা ও গণহত্যা চালায়। তাঁর বিররুদ্ধে জ্বলে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ। মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে পাকিস্তানি ট্যাংকের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলে অকুতোভয় বাঙালী। বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
দিবসের শুরুতেই আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী ত্রিশ লক্ষ শহীদ মুক্তি যোদ্ধাদের। স্মরণ করছি সেই দুই লক্ষ বীরঙ্গনা মা-বোন যাদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা। স্মরণ করছি জাতির সূর্য সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
১৯৫২-‘এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪-‘এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৮-‘এর মার্শাল’ল বিরোধী আন্দোলন, ৬৬-‘এর বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬- দফার আন্দোলন, ৬৯-‘এর রক্তঝরা গণঅভ্যুথানের পথ পেরিয়ে ৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন, আর ৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ- সবই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের একেকটি গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের মাইলফলক।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ফেনী জেলার রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। শহীদ বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লা কায়সার, জহির রায়হান, সেলিনা পারভীনসহ শত শহীদ আর মুক্তিযোদ্ধার আবাসভূমি এই ফেনী ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরেই ফেনীর আপামর জনগণ গড়ে তুলেছিল তীব্র প্রতিরোধ। বিলোনিয়ার সম্মুখ সমরে পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য এক ঘটনা।
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সশ্রস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই আমরা অর্জন করেছি বিজয়। পৃথিবীর মানচিত্রে প্রতিষ্ঠা করেছি লাল সবুজের পতাকা- স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে হবে- স্বাধীনতার চেতনাকে অন্তরে ধারণ করতে হবে।
বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। সোনার বাংলাগড়া গড়ার যে প্রত্যয় নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন- সেই সত্যিকারের সোনার বাংলা এখন আমাদের খুব কাছে। উন্নয়নের এই গতিধারায় ফেনী জেলাও পিছিয়ে নেই। অর্থনৈতিক অন্তর্ভূক্তিতে ফেনী জেলা এগিয়ে সবার আগে; সোনাগাজীতে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক জোন, মহিপালে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম সিক্স লেন ফ্লাইওভার। নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষে শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজাঝীর দীঘি আর বিজয়সিংহ দীঘি ঘিরে তৈরি হচ্ছে নান্দনিক পার্ক।
অবকাঠামোগত এই উন্নয়নের পাশাপাশি আমরা আমাদের তরুন প্রজন্মকে ফেনীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রতœতত্ত্ব সর্বপরি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোর সাথে হাতে-কলমে পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে এক আত্মবিশ্বাসী, দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে-যাদের দৃঢ় চিত্ত ও চেতনার জোয়ারে এদেশ থেকে চিরতরে দূর হবে মাদক, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস। আপনাদের সকলের সুন্দর জীবন ও সুস্বাস্থ কামনা করি। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
সম্পাদনা: আরএইচ