এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই থেকে>>
মিরসরাইয়ে সওজের (সড়ক ও জনপদ বিভাগ) জায়গা দখল করে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে শত শত স্থাপনা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে সওজের জায়গা থেকে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর মহাসড়কের দুই পাশে সওজের জায়গায় ওই সব স্থাপনা তৈরি প্রতিযোগীতায় নেমেছে কিছু অসাধু মানুষ। সওজের জায়গা ছাড়াও উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলো ঘিরে আছে অবৈধ স্থাপনায়। কোন কোন জায়গায় ছড়া দখল করে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা। সওজ কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, তারা ইতিমধ্যে অবৈধ স্থাপনাগুলো তালিকা তৈরি শুরু করেছে। কোথাও কোথাও উচ্ছেদ কার্যক্রমও চালিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়কে চাললেন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সড়কের দুই পাশে সওজের জায়গা সংলগ্ন জায়গার মালিকরা অবৈধ ভাবে স্থাপনা তৈরি শুরু করে। কাঁচা, আধা পাকা ঘর ছাড়াও কোথাও কোথাও পাকা ভবন তৈরি করে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। মহাসড়কের সোনাপাহাড় ফিলিং স্টেশন এলাকায় দেখা গেছে, সড়কের পূর্ব পাশে একটি ছড়া দখল করে সওজের জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে দোকান। ছড়া দখলের ফলে ছড়া গতিপথ তৈরি হয়েছে মহাসড়কের পাশ দিয়ে। স্থানীয় সঞ্জয় চৌধুরী নাম একজন অভিযোগ করেন, ছড়াটি মহাসড়ক থেকে কমপক্ষে ২০ ফুট দূরে ছিল। এখন স্থানীয় লোকজন সেটি দখল করে ছড়া গতিপথ সড়কের পাশ দিকে করে দিয়েছে। বারইয়ারহাট পৌরসভার ট্রাফিক মোড়ে সওজের জায়গা দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন মীর হোসেন নামে এক প্রভাবশালী। এই বিষয়ে জানতে মীর হোসেনের ব্যক্তিগত মোবাইলে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় কল কওে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
মহাসড়কের পশ্চিম পাশে দেখা গেছে, সওজের জায়গা কমপক্ষে শতাধিক দোকান গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়া হাদি ফকিরহাট, ঠাকুর দীঘি, বারইয়ারহাট, বড়তাকিয়া, নিজামপুর কলেজ এলাকায় সরকারি জায়গায় অবৈধ ভাবে শত শত নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। মহাসড়কের উপর অবস্থিত বারইয়ারহাট পৌর বাজারের গোল চত্ত্বরে সওজের জায়গা পুরোটায় অস্থায়ী ব্যবসায়ীদের দখলে। ওই সব অবৈধ দোকানের কারণে যানবাহন ও যাত্রীদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। চৈতন্যের হাট-বারইয়ারহাট পুরাতন মহাসড়ক, বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে সওজের জায়গায় অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা দুই হাজারের ও অধিক। সওজের জায়গা ছাড়াও মুহুরি প্রজেক্ট, হাবিলদার বাসা, হিঙ্গুলী, বামনসুন্দর দারোগাহাট, সুফিয়া বাজার, দূর্গাপুর বাজার, কমর আলী, ভোরের বাজার, আবুতোরাব, আবুর হাট তেমুহনী, শান্তির হাট, বাংলা বাজার, গোলকেরহাটসহ আঞ্চালিক বাজার ও সড়ক গুলোকে ঘিরে সরকারি বিভিন্ন বিভাগের জায়গায় প্রতিদিন তৈরি হচেছ অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা।
বারইয়ারহাট পৌর বাজার উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেদায়েত উল্ল্যাহ্ জানান, দেশের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ও ব্যস্ততম মহাসড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনার কারনে প্রতিনিয়ত যানবাহন ও যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। মহাসড়কের দুই পাশে সরকারি জয়াগায় অপরিকল্পিত ও অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ব্যবসা প্রতিষ্ঠা ছাড়াও নির্মান করা হচেছ বাসভবন। বারইয়ারহাট পৌরবাজার এলাকায় সরকারি জায়গায় কমপক্ষে দুই শতাধিকের বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
বারইয়ারহাট পৌর সভার মেয়র নিজাম উদ্দিন অবৈধ স্থাপনা সম্পর্কে জানান, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কয়েকবার উগ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সমস্যার কারণে সম্ভব হয়নি। এখন সওজের কর্মকর্তাদের সাথে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সওজ ও পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে বাজারের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ওই সব স্থাপনার কারণে নানা ধরণের বিড়ম্বনা ও দুর্ঘটনার কথাও স্বীকার করেন তিনি।
মিরসরাই সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ কায়সার খসরু জানান, উপজেলায় সরকারি বিভিন্ন বিভাগের জায়গা রয়েছে। তবে খাস জায়গায় করা অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ প্রক্রিয়া আমরা চলমান রেখেছি। ইতিমধ্যে আবুতোরাব বাজারে অবৈধ স্থাপনা করা ব্যক্তিদের স্থাপনা সরানোর জন্য নোটিশ দেয়া হয়েছে। তারা না সরিয়ে না নিলে আমরা উদ্যোগ নিয়ে তা উচ্ছেদ করব।
সওজ’র চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জুলফিকার আহম্মদ জানান, মহাসড়কের দুই পাশে সওজের জায়গায় নির্মিত সবগুলো অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি সড়কের করেরহাট বাজারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এরপর বারইয়ারহাট পৌর বাজার থেকে শুরু করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমইউ