মোঃ কামরুল হাসান >>
লুৎফুর জামান শামিম। একজন রুচিশীল ব্যবসায়ী। শখের বসে ছাগলনাইয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে তুলেছেন প্রাসাদসম দৃষ্টিনন্দন বাড়ী। প্রতিনিয়তই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে বাড়িটি দেখতে। সুন্দর নির্মাণ শৈলীতে গড়া বাড়িটি নিমাণে কত টাকায় ব্যায় হয়েছে এর কোন হিসেব নেই শামিম সিদ্দিকের কাছে। তিনি বলেন, শখের বসে বাড়িটি নির্মাণ করেছি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার উত্তর যশপুর গ্রামের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা প্রত্যন্ত অঞ্চলে এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য শখের বসে দৃষ্টি নন্দন বাড়ি তৈরি করেছেন সুপ্রিমকোর্টের সাবেক আইনজীবী প্রয়াত আবু বকর সিদ্দিক’র বড় ছেলেলুৎফুর জামান শামিম। তিনি ৫ বছর আগে ৬’শ’ শতক জায়গার উপর এই বাড়িটি গড়ে তোলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির চারা দিয়ে একটি ফুলের বাগান তৈরি করেন। বাড়ির যেদিকে চোখ যায় শুধু ফুল গাছ আর ফুল গাছ। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে বাড়ির সাজানো বাগান। পাশাপাশি বাড়ির চারপাশের বেলকোনেও ঝুলছে ঝুলন লতা। ফুটেছে নানান রঙের ফুল। শামিম তার পুরো বাড়িটিকে সাজিয়েছে ফুলের বাগান রুপে। ছোট বেলা থেকেই তার বাগান করার শখ ছিল। কিন্তু সময়ের অপ্রতুল্যতায় সেই বাগান করা হয়নি তার। এখন সে গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি যখনই সময় পান তখনই ছুটে আসেন তার এলাকায় নিজের হাতে গড়া প্রকৃতির কোলাহলময় নান্দনিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ফুলের বাগানটিতে। কর্মচারীদের সাথে তিনি নিজেও কোদাল, কাস্তে, নিড়ানি ও পানি দিয়ে এগুলোর পরিচর্যা করেন।
দৃষ্টিনন্দন এ বাগানে রয়েছে প্রায় শতাধিক প্রজাতির ফুল। এরমধ্যে গাঁদা, গোলাপ, ন্যাস্টারশিয়াম, প্যানজি, পিটুনিয়া, ভারবেনা, ক্যামেলিয়া, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কারনেশন, স্যালভিয়া, জারবেরা, এজালিয়া, কাঞ্চন (সাদা), জবা, কামিনী, করবী, অলকানন্দা বা অ্যালামন্ডা, জয়তী বা জ্যাট্রোফা, হাজারপুটিয়া, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী বা সন্ধ্যামণিসহ শতাধিক প্রজাতির ফুলের চারা। সীমান্ত ঘেঁষা এলাকায় এই দৃষ্টি নন্দন বাড়ি ও বাগানটি তৈরি হওয়ায় এর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন অনেক ফুলগাছ প্রেমী ভ্রমণ পিয়াসু মানুষ।
পাশাপাশি বাড়ির চারপাশে পেয়ারা গাছ, কলা, কাঁঠাল, আম, জাম, পেঁপে, বেল, স্ট্রবেরী, জাম্বুরা, আমলকী, জলপাই, ডালিম, আঁতাপল, লেবু, কাগজি সহ অর্ধ শতাধিক প্রজাতির ফলের চারা লাগানো হয়েছে। রাস্তার দু পাশে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে ঝাউগাছ। যা দেখে ভ্রমণ পিয়াসু দর্শনার্থীদের মন আকৃষ্ট করে। প্রত্যেক ভ্রমণার্থী কোন টিকেট ছাড়া অনায়াসেই ভিতরে প্রবেশ করতে পারে।
এছাড়াও বাড়ির ভিতরে শখের বসে একটি সবজি বাগান করেছেন। এখানে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, কাঁচা মরিচ, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, সিম, ঢেঁড়স, আঁকড়ি, ধনিয়াপাতা, টমেটো ইত্যাদি। বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার জন্য দুটি পুকুর খনন করে এগুলোর মধ্যে কই, মাগুর, শিং, রুই, পাবদা, কাতল, মৃগা, তেলাপিয়া, শোলমাছ, কার্পু সহ অনেক প্রজাতির মাছ চাষ করা হচ্ছে। এগুলো পরিচর্যা করার জন্য তিনজন কর্মচারী রয়েছে।
এব্যাপারে ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক মোঃ শামিম সিদ্দিক নতুন ফেনী’কে বলেন, ছোট বেলা থেকেই ফুলের বাগান করার প্রতি তার অনেক শখ ছিলো। কিন্তু সময়ের কারণে সেই বাগান করা হয়নি তার। এখন ব্যবসার পাশাপাশি শখের বসে ৬’শ শতক জায়গার উপর দৃষ্টি নন্দন বাড়ি ও বাগানটি গড়ে তোলেন। তিনি এগুলো সঠিকভাবে পরিচর্যা করার জন্য প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা ব্যায় করেন। প্রকৃতির এই কোলাহলময় নগরীতে নিজের গা ভাসিয়ে দিতে এখানে ছুটে আসেন অনেকে। বিনামূল্যে সকল শ্রেণীপেশার মানুষের প্রবেশাধিকারে উন্মুক্ত করা হয়েছে। যাতে মানুষ এখানে এসে কোলাহলময় জীবনে প্রবেশ করে সস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ