পরশুরাম প্রতিনিধি >>
ফেনীর পরশুরাম ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করেন পরশুরামের জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি তদন্তের পরশুরাম উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হুমায়ুন শাহরিয়ার ও চৌদ্দগ্রামের ইমাম হোসেন হারুন নামের এক মুক্তিযোদ্ধা বাদী হয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা যায়, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের তালগ্রামের মৃত আলী আকবর ভুঁইয়ার পুত্র জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়া দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তালগ্রামের বাড়িটি বিক্রি করে পরশুরাম পৌরসভার পূর্ব অলকা এলাকায় বাড়ি করেন। এরপরও তিনি চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ঠিকানা ব্যবহার করে ওই উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সকল সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছেন। একইভাবে তিনি পরশুরাম উপজেলা থেকেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার প্রদত্ত সকল সুবিধা ভোগ করে চলেছেন। জাল জালিয়তির মাধ্যেেম জয়নাল আবেদীন চৌদ্দগ্রাম ও পরশুরাম উভয় উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধদের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন। অভিযোগ থেকে জানা গেছে, জয়নাল আবেদীনের মন্ত্রণালয়ের সাময়িক সনদ নং- পরশুরামে ম-১১২৫৬৪, চৌদ্দগ্রামে ম-৬৮৮৯৮, বেসামরিক গেজেটে তার ক্রমিক নং পরশুরামে ৯৩৮, চৌদ্দগ্রামে ৬০১৫, পরশুরামে তার জন্মসনদ নং ০১৮৭২৪, জন্মতারিখ ১২/০২/১৯৫১, চৌদ্দগ্রামে জাতীয় পরিচয়পত্র নং ১৯৫১১৯১৩১৪৭৫২৩৭৩৯, জন্মতারিখ ১২/০১/১৯৫১। পরশুরামে তার মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বই নং ২৫৮ এবং সোনালী ব্যাংকে ভাতা গ্রহণের হিসাব নং ৪০১৪১০০০২২৭৪৫, চৌদ্দগ্রামে মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বই নং ৩২৩ এবং সোনালী ব্যাংকে ভাতা গ্রহণের হিসাব নং ১৩০৭১০০৫০০৪৪২। তিনি উভয় উপজেলায় সোনালী ব্যাংক থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঋণ নিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকার কর্তৃক পাকা বাসগৃহ নির্মাণ কার্যক্রমের আওতায় তিনি উভয় উপজেলায় বাড়ি বরাদ্দ নিয়েছেন। এছাড়া তিনি পরশুরাম ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিআরডিবি থেকেও ঋণ নিয়েছেন।
একই ব্যক্তি দুই উপজেলা থেকে সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জয়নাল আবেদীন ভুঁইয়ার চাচাতো ভাই মাহফুজুর রহমান আজম নতুন ফেনী’কে বলেন, জয়নাল আবেদীনের কোন জায়গা না থাকায় আমি তাকে দুই গন্ডা জায়গা দান করি। তিনি সেখানে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। তবে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন পরশুরাম ও চৌদ্দগ্রাম থেকে ভাতা উত্তোলন করেন বলে তিনি স্বীকার করেন।
এসব বিষয়ে মতামত জানতে মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীনকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ফোন করলে তিনি বলেন, আমাকে একটু সময় দিন। আমি মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাবো। একথা বলেই তিনি কল কেটে দেন। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে।
সোনালী ব্যাংক চৌদ্দগ্রাম শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবাদ হোসেন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন স¤পর্কে জনৈক এক ব্যক্তি একটি অভিযোগ দিয়েছেন। সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলেই আমি ব্যবস্থা নিব।
পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রুহুল আমিন জানান, সরকারি বিধি অনুযায়ী একই ব্যক্তি দুই জায়গা থেকে মুক্তিযোদ্ধার সুবিধা গ্রহন করতে পারে না। এটা একটি অপরাধ। এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এসএইচএম