ফেনীর কৃষকদের মাঝে আগাম জাতের ধান চাষীরা ফসল ঘরে তুলার কাজে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবার কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শে তারা বীনা ধান-৭ চাষ করে ১১০ দিনে মাথায় ফলন তুলতে পেরে খুশি। এছাড়াও আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় ফলন ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় খোশ মেজাজে রয়েছেন বীনা ধান-৭ চাষীরা। এখন ধান তুলেই তারা ওই জমিতে শীতকালীন সবজি চাষাবাদ শুরু করে দিতে পারবেন। এতে করে এক বছরে একই জমিতে ৪ বার ফলন পাবেন তারা। তবে ফেনীতে এখনো অন্য জাতের ধান পাকা শুরু হয়নি।
ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়নের মধ্যম মাছিমপুর এলাকার কৃষক নিজাম উদ্দিন জানান, তিনি কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শে এবার পরীক্ষামূলকভাবে বীনা ধান-৭ এর আবাদ করেছেন। এজন্য তিনি কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ, সার ও ধানের বীজ বিনামূল্যে পেয়েছেন। আবাদের ১১৩ দিনের মাথায় তার জমিতে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে ধান কর্তন করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার ধান কর্তনকালে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জয়েন উদ্দিন, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকতা আবু নঈম মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ফেনী সদর পরিসংখ্যান কর্মকর্তা প্রেয়সী ভট্টাচার্য্য, উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মতিউর রহমান, জুনিয়র পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এ এম খালেদ, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা ইয়াসমিন, পলাশ চন্দ্রন দাস ও আশপাশের কৃষক-কৃষাণীগণ উপস্থিত ছিলেন। মাড়াইয়ের পর দেখা যায় প্রতি শতকে তিনি ১৪ কেজি ধান পেয়েছেন। অন্য কোন জাতের ধান চাষ করলে ১০ কেজির উপর ধান পাওয়া যায়না। এখন তিনি তার ওই জমিতে শীতের সবজি মুলা চাষ করবেন। তিনি জানান, শুরু দিকে আশপাশের চাষীরা এ ধান চাষে তেমন উৎসাহী ছিলোনা। কিন্তুু এবার তার জমিতে সবার আগে ধান কাটা হয়েছে। ফলনও বেশি। বাজারে দামও ভালো। আবার শীতের সবজিও চাষ করা যাবে। এমন লাভ দেখে অনেকেই আগামী মৌসূমে বীনা-৭ জাতের ধান চাষাবাদ করবেন বলে জানিয়েছেন।
লেমুয়া ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের কৃষক আবদুল মতিন জানান, বীনা ধান-৭ কেটে তিনি ইতিমধ্যে ঘরে তুলেছেন। বেকার নিয়ে আলু চাষ করার জন্য তিনি জমি প্রস্তুুত করে ফেলেছেন। কিন্তুু আশ পাশের কৃষকরা এখনও ধানও কাটতে পারেনি।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু নঈম মো: সাইফুদ্দিন জানান, ফেনী সদর উপজেলায় চলতি আমন মৌসূমে ৫০ হেক্টর জমিতে বীনা ধান-৭ আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে অন্যান্য কৃষকদের উৎসাহ দিতে ৩০টি প্রদর্শনী করা হয়েছে। প্রণোদনার জন্য কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে সার, বীজ প্রদান করা হয়েছে।
অন্যান্য প্রকারের ধান ১৪০ থেকে ১৫০ দিনে কর্তন যোগ্য হলেও বীনা ধান -৭ ফসলটি ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। এবার ফেনীতে প্রতি হেক্টরে বীনা ধান-৭ চাষীরা সাড়ে ৪ টনের বেশি ধান পেয়েছে। এখন বীনা ধান-৭ এর চাষীরা তাদের জমি তৈরী করছে শীতকালীন সবজি চাষাবাদের জন্য। অথচ অন্য জাতের ধান চাষীরা এখনও তাদের ধান কর্তন শুরু করতে পারেনি। তিনি আরও জানান, বীনা ধান-৭ চাষ করলে ওই জমিতে বছরে ৪ বার ফসল ফলানো যায়। এ কারণেই মূলত কৃষকরা এ ধানের আবাদে ঝুঁকছে।
সম্পাদনা: আরএইচ/ এএইচআর