ফেনীতে নতুন কারাগানে বন্দিদের স্থানান্তর করা হয়েছে। শনিবার ভোর থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে ৫টি ভ্যানে করে ৮ শতাধিক বন্দিকে শহরতলীর রানিরহাটে সুপরিসরে নবনির্মিত কারাগারে নেয়া হয়।
কারা সূত্র জানায়, শনিবার ভোর ৫টা থেকে বন্দী স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার মধ্যে সম্পন্ন হয়। প্রতি গাড়ীতে ৪০ জন করে ৫টি ভ্যানে করে তাদের রানিরহাট সংলগ্ন নতুন কারাগারে নেয়া হয়েছে। দুপুরের মধ্যে বন্দি স্থানান্তর কার্যক্রম শেষে হয়েছে।
পুরান কারাগারটিতে গাদাগাদি করে ১৭২ জনের স্থলে বর্তমানে কারাগারে ৮৯৩ জন বন্দি থাকায় তারা নানা ধরনের সমস্যায় দিনাতিপাত করতে হতো। বর্তমানে কারাগারটিতে ১৭০ জন পুরুষ বন্দির স্থলে ৮৭২ জন ও ২ জন মহিলা বন্দির স্থলে ২১ জন বন্দি রয়েছে। যাদের সবাইকে নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, বন্দি স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। কারারক্ষী ছাড়াও পুলিশের ১শ’ সদস্য, র্যাব, সাদা পোষাকে পুলিশ ও গোয়েন্দা নজরদারীর মধ্য দিয়ে তাদের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।
ওই সূত্র আরো জানায়, যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এছাড়াও বন্দী স্থানান্তর প্রক্রিয়া তদারকি করেন চট্টগ্রাম বিভাগের ডিআইজি প্রিজন এ.কে.এম ফজলুল হক।
এর আগে গত বছরের ১ নভেম্বর নব নির্মিত নতুন কারাগার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন এ কারাগারটি পুরাতন কারাগার থেকে নতুন কারাগার আয়তনে ৫ গুন বড়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে শহরতলীর কাজিরবাগ মৌজায় সাড়ে ৭ একর জায়গায় নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে তা থেমে যায়। ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসলে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়। ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৮টি ভবন নির্মিত হয়েছে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত এ কারাগারে ২টি ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা, ২.৫০ কেভি এ বিদ্যুৎ সাব-স্টেশন, ১০ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ, ২০ কেভি জেনারেটর ছাড়াও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, অভ্যর্থনা মঞ্চ, প্যারেড গ্রাউন্ড, আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার রিজার্ভার রয়েছে। এ কারাগারে বন্দী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৩শ’ ৫০ জন।
ফেনী জেলা কারাগার সূত্রে জানা যায়, ১৯১৫ সালে শহরের মাস্টার পাড়ায় মাত্র দেড় একর জায়গার ওপর প্রথমে উপ-কারাগার (সাব-জেল) হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বন্দি ধারণ ক্ষমতা মাত্র দুইজন নারী ও ১৭০ জন পুরুষ মিলে মোট ১৭২ জন। ১৯৯৮ সালে উপ-কারাগার থেকে এটি জেলা কারাগারে উন্নীত হয়।
তবে জেলা কারাগারে উন্নীত হলেও বাড়েনি কোনো সুযোগ-সুবিধা। শত বছরের পুরনো অবকাঠামো, অন্যদিকে অপ্রতুল জায়গায় ধারণ ক্ষমতার তিন-চারগুণ বেশি বন্দি নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হতো। গাদাগাদি করে শোয়া, থাকা-খাওয়া, গোসলসহ নানা সমস্যায় বন্দীদেরও দুর্ভোগের যেন নেই শেষ। বন্দীদের চিকিৎসায় কারাগারে ছিলোনা হাসপাতাল।
ফেনী কারাগারের সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, নবনির্মিত নতুন কারাগার স্থানান্তরের মাধ্যমে বন্দিদের দূর্ভোগ লাগব হবে। পুরাতন কারাগারে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত বন্দি থাকায় হিমশিম খেতে হতো। এখানেও বন্দিদের তুলনায় পর্যাপ্ত জায়গা কম তারপরও বন্দি ও কারাকর্মকর্তাদের কিছুটা স্বস্তি মিলবে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এইচআর