ফেনীতে বিআরডিবির এক নারী কর্মকর্তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাতে ফেনী সদরের বারাহিপুরের ভাড়া বাসা থেকে ফুলগাজী বিআরডিবির মাঠ কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগমের (৫২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় দেহের কাছ থেকে একটি আত্মহত্যাপত্র (সুইসাইড নোট) উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রামের পায়েরখোলা এলাকার প্রবাসী মো. এয়াছিন মজুমদার দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে বর্তমানে ফেনী পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন। তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম গত প্রায় ২৫ বছর ধরে ফেনীর ফুলগাজী বিআরডিবির (বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড) এর মাঠ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে তার শয়নকক্ষের ছাদের সাথে দড়িতে দেহ ঝুলতে দেখে স্বামী এয়াছিন চিৎকার করে উঠলে আশপাশের লোকজন সেখানে গিয়ে ফেনী মডেল থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে আনোয়ারার নিথর দেহ উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
ফেনী মডেল থানা পুলিশের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, লাশের পাশ থেকে পুলিশ একটি আত্মহত্যাপত্র বা সুইসাইড নোট উদ্ধার করে। সেখানে ফেনীতে কর্মরত বিআরডিবির উপ পরিচালক শংকর কুমার পাল ও ফুলগাজী উপজেলা বিআরডিবির সহকারী পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা কৃষ্ণ গোপাল রায় এর নাম উল্লেখ করে এ ঘটনার জন্য তাদের দায়ী করা হয়। তাতে বলা হয়, তারা আনোয়ারার চার মাসের বেতন দেননি এবং একটি ঋণ দানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার উপর তারা নানা মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন এবং মুচলেকা আদায় করেন। এসব কারণে আনোয়ারা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক যাতনায় ভুগছিলেন।
চিরকুটে নিহত আনোয়ারা বেগম ফেনী-২ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য বিআরডিবি ফেনী সদর এর ডিডি শংকর কুমাল পাল ও ফুলগাজীর এআরডিও কৃষ্ণ গোপল রায় দায়ী। তারা দু’জনে গত চার মাস ধরে আমাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি চার মাস আমাকে বেতন-ভাতা দেয়নি। এর মধ্যে গত ৩১শে জানুয়ারি আমি ঋণ নিয়েছি মর্মে জোর করে আমার থেকে স্বীকারোক্তি ও অঙ্গীকারনামা লিখিয়ে নেন ডিডি শংকর কুমার পাল। এরপর আমি স্ট্রোক করলে আমাকে ঢাকা নেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে ৭ দিন পর আমি বুধবার ফেনী ফিরে আসি’।
নিহতের ভাতিজা মিজানুর রহমান জানায়, জানুয়ারীর শেষ সাপ্তাহে তিনি (আনোয়ারা বেগম) স্ট্রোক করেন। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে ৭ দিন পর আমিসহ স্বজনরা বুধবার ফেনী ফিরে আসি। তিনি আরো জানান, আনোয়ারার একমাত্র ছেলে এয়ামিন মজুমদার পলাশ রাজধানীতে একটি বেসরকারী বিশ^বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। একমাত্র মেয়ে শারমিন আক্তার নুপুর চট্টগ্রামে স্বামীর সংসারে আছেন।
এদিকে বিআরডিবির দুই কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে বার বার চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
ফেনী মডেল থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ দেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে লিখিত এজাহার দেয়া হলে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি/এইচআর







