মোঃ কামরুল হাসান
গন্তব্য চট্টগ্রামের আনোয়ারা পারকির চর সমুদ্র সৈকত। জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুন ফেনী’র আনন্দ ভ্রমনে এবারের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক লীলাভূমি পারকি বীচ। চাকুরীর সুবাদে আমি ঢাকায় অবস্থান করছি কিছুদিন ধরে।
২৪ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকালে কাজের ফাঁকে অফিসে বসে ভাবছি, ইস! নতুন ফেনী’র এবারের আনন্দ ভ্রমনটা মনে হয় মিস করে ফেলবো। কারণ অফিস থেকে সন্ধ্যায় বের হয়ে রাতে গাড়ির টিকেট পাবো কিনা এই ভেবে। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ির টিকেট পাওয়া আর সোনার হরিন এক নজর চোখে দেখার সমান। যাইহোক! সবশেষে অফিস থেকে বিকালেই ছুটি নিয়ে বের হয়ে পড়ি ফেনীর উদ্দ্যেশে।
চিটাগাং রোড় এসে এনা পরিবহনের একটা টিকেট কেটে নিলাম অনেক কষ্টে। রাস্তায় জ্যামের কারণে কোন গাড়ি আসছেনা। তিন ঘন্টা পর্যন্ত কাউন্টারে বসে রইলাম। হতাশা মনে ভাবছি! মনে হয় এবারের আনন্দ ভ্রমনটা সত্যিই মিস করে ফেলবো। নাহ! কাউন্টারে টিকেট ফেরত দিয়ে বাসায় ফিরে যাবো। আর যাবোনা ফেনীতে… জ্যাম ছাড়ার পর হঠাৎ দেখি এনা পরিবহনের সেই কাঙ্খিত গাড়িটি চোখের সামনে চলে এসেছে।
এরপর গাড়িতে উঠে নিজের আসনে বসে পড়লাম। রাত আটটায় গাড়িতে উঠলাম তিনটায় পৌঁছলাম ফেনীর ছাগলনাইয়ায়। এরপর বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে আর ঘুমাইনি আনন্দ ভ্রমণটা মিস হয়ে যাবে এই ভেবে। আগের দিন বিকালে নতুন ফেনী’র ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাইদুল হক সনেট ভাই কল দিয়ে বলেছিলেন সকাল সাতটায় স্টার লাইন’র গাড়িটা ফেনী থেকে পারকির চরের দিকে ছেড়ে যাবে। দুই ঘন্টা বাসায় রেস্ট নেওয়ার পর ভোর পাঁচটায় আবার বাসা থেকে বের হয়ে পড়লাম। বাজারে এসে একঘণ্টা অপেক্ষা করে একটা সিএনজি অটোরিকশা পেলাম। আর দেরী না করে সিএনজিতে উঠে গেলাম। চালক ভাইকে বললাম যতো তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। নতুবা মিস হয়ে যাবে কাঙ্খিত স্বপ্নের আনন্দ ভ্রমণ। ১৫ মিনিটেই পৌঁছে গেলাম সেই স্থানে। যেখানে যাওয়ার জন্য আগে থেকে ঠিক করা স্টার লাইন বাসটি দাঁড়িয়ে আছে। সবাইও আমার জন্য অপেক্ষা করছে। অবশেষে গাড়িতে উঠে চেপে বসলাম।
নতুন ফেনী’র সম্পাদক রাশেদুল হাসান, নির্বাহী সম্পাদক নুর উল্যাহ কায়সার ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাইদুল হক সনেট ভাইয়ের দিক নির্দেশনায় শুরু হলো জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুন ফেনী আনন্দ ভ্রমনের পথচলা। স্বপ্নের নগরী পারকি বিচের দিকে। আমাদের সাথে আনন্দ ভ্রমণে যুক্ত হলেন সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান ইসহাক খোকনসহ তার পরিবার। নিজস্ব প্রতিবেদক হুসাইন আরমান’র পরিচালনায় গাড়িতে গান আর কৌতুকের আড্ডায় মেতে উঠলো সবাই। প্রথম গান আরমান শুরু করলো তারপর আমিও একটা গেয়ে মাতিয়ে দিলাম সবাইকে। এরপর সনেট ভাইসহ একে একে সবাই গানে মত্ত হয়ে উঠলো। রাস্তায় পনের মিনিটের জন্য নাস্তা বিরতি দেওয়া হলো। সবাই নাস্তা ও প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আবার শুরু হলো পথচলা। গাড়িটা যখন সামনের দিকে এগুচ্ছে জানালার পাশে তাকানো পর দেখা যাচ্ছে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো মনে হয় শাঁ-শাঁ শব্দে তার বিপরীত দিকে ছুটছে। চলতি পথে গাড়িতে বিক্রি হলো লটারির টিকেট।
অবশেষে দুপুর সাড়ে বারোটায় পৌঁছলাম পারকি বিচে। সবাই গাড়ি থেকে হইহুল্লোড় করে নেমে বালুর মধ্যদিয়ে হাটা শুরু করলাম বীচের দিকে। প্রখর রোদ, সূর্যটা তখন ঠিক মাথার উপরে। সবাই বীচে নেমে কেউ এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করছে, কেউ সগরের ঢেউ খেলা দেখতে আর কেউবা সাগরের জলরাশির সাথে সখ্যতা করে সেলফি তুলতে মত্ত হয়ে আছে। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরির পর এবার লাঞ্চের পালা।
সম্পাদক রাশেদ ভাই দুপুরের খাবার খেতে সবাইকে ডেকে নিলেন। সবাই আনন্দ মাস্তি আর মজা করে খাবার খেয়ে আবার বেরিয়ে পড়লেন। এবার শুরু হলো মুল আয়োজন। ভ্রমনের ইভেন্টে ছিলো হাড়ি ভাঙ্গা, নারীদের বালিশ খেলা, বেলুন ফাটানো, ফুটবল, সুন্দর আচরণ, সেরা জুটি, সেরা হাসিসহ আরো কয়েকটি খেলা। প্রথমে হাড়ি ভাঙ্গা খেলা। নির্বাহী সম্পাদক নুর উল্যাহ কায়সার ভাই প্রতিযোগীদের নাম লিস্ট করে নিলেন। গামছা দিয়ে চোখবাঁধা হাড়ি ভাঙ্গা খেলাটি শুরু করা হলো। চোখ বেঁধে হাড়ি ভাঙ্গার জন্য একে একে সবাই গেলো একজন ছাড়া আর কেউ হাড়িটা ভাঙতে পারলো না। এরপর মহিলাদের বালিশ খেলা। এই খেলায় সবশেষে তিনজনকে বাছাই করা হলো। তারপর আবার শুরু হলো বেলুন খেলা। এটাতেও তিনজন বাছাই করা হলো। পরে ফুটবল, রেফারীর দায়িত্বে ছিলেন জিটিভির ফেনী জেলা প্রতিনিধি দিদার ভাই। দুই দলে নয় জন করে প্লেয়ার ভাগ করা হলো। রেফারীর বাশি বাজার সাথে সাথে শুরু হয়ে গেলো বাংলার ঐতিহ্যবাহী ফুটবল খেলা। এটাতে ড্র হলেও কোন দল জিততে পারেনি।
এবার সবকিছুর পুরস্কার দেওয়ার পালা… প্রথমে অতিথিবৃন্দের সংবর্ধনা, প্রতিনিধিদের সম্মাননা এবং বিভিন্ন খেলায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এরপর আসার পথে আবার গানের মধ্যদিয়ে শুরু হলো পথচলা। রাস্তায় আসার পথে নাস্তা বিরতি ও লটারির ড্র করে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার এবং সবাইকে শান্তনা পুরস্কার দেওয়া হয়। আমাদের পুরো আনন্দ ভ্রমনটা অনেক মজার হয়েছিলো। আমি জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুন ফেনী’র এই আনন্দ ভ্রমনে সহযাত্রী হতে পেরে নিজেকে অনেক গর্বিত ও ধন্য মনে করছি।
লেখক: সংবাদকর্মী।







