সাবেক সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি, পরবর্তী সময়ে সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে টিকে যাওয়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মৃত্যুর আগে তিনি জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এর আগে গতবার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। টানা ১৭ দিন রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এরশাদ শেষ ১০ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।
এ অবস্থায় গতকাল রবিবার সকাল পৌনে ৮টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। পরে এরশাদের আত্মীয় ও জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতিম-লীর সদস্য খালেদ আখতার তার মৃত্যুর খবর দেন।
এরশাদের বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি স্ত্রী ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ, এরশাদ-রওশন ঘরের এক সন্তান শাদ এরশাদ ও এরশাদ-বিদিশা ঘরের এক সন্তান এরিক এরশাদসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, শুভাকাক্সক্ষী রেখে গেছেন।
এই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত ও সমালোচিত এরশাদ অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। ব্যক্তিজীবন, ঘর-সংসার, কর্র্মজীবন, সেনাপ্রধান থেকে সামরিক শাসক, গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো, কারান্তরীণ, এমনকি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ব্যক্তি ও রাজনীতিতে নানা ঘটন-অঘটনের জন্ম দিয়েছেন তিনি। দলের ভেতর ও বাইরে এবং জাতীয় রাজনীতিতে মুহুর্মুহু সিদ্ধান্ত বদল; নানা ঘটনায় নাটকীয়তাÑ এসবের মধ্য দিয়ে এক রহস্যজনক ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তুলেছিলেন তিনি।
বিশেষ করে গত তিন দশকে ৪২টি মামলার দায় থেকে মুক্ত হতে পারলেও একটি হত্যা মামলার আসামি হয়েই চিরবিদায় নিলেন এই সাবেক সামরিক শাসক। মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলায় দোষীসাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ সাজার রায় আসতে পারত। অবশ্য তিনি সবসময় ওই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন।
সামরিক শাসক হিসেবে টানা নয় বছর দুর্দান্ত প্রতাপশালী ও পরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টপাল্টি রাজনীতির কারণে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকা এরশাদ শেষ জীবনে ভীষণ একা হয়ে পড়েছিলেন। অবিশ^াস জন্ম নিয়েছিল আশপাশের মানুষের ওপর। বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে থাকতেন এরিক এরশাদকে নিয়ে। স্ত্রী রওশন এরশাদ দীর্ঘ সময় ধরেই একা বাস করেন। ছাড়াছাড়ির পর আর এদিকটায় আসেননি বিদিশাও। কিছু গৃহকর্মীই ছিল তার দেখভালের শেষ ভরসা। ভয়ে প্রায়ই তার রাত কাটত হাসপাতালে। এমনকি মৃত্যুর আগেই তিনি তার সমস্ত সম্পত্তি ট্রাস্ট করে দিয়ে গেছেন। পার্টির কাউকেই গোপন কোনো কথা বলতেন না।
এরশাদের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। হাসপাতালে, বনানী চেয়ারম্যান কার্যালয়, কাকরাইল পার্টির কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের ভিড় জমে। কার্যালয়ে দলীয় পতাকা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। মৃত্যুর পরপরই বনানীর জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় শোকবই খোলা হয়। ১৮ জুলাই পর্যন্ত ওই কার্যালয়ে শোকবইটি থাকবে।
এদিকে এরশাদের মৃত্যুতে তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা জানান, সারা দেশে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা তিন দিন শোক পালন করবেন। নেতাকর্মীরা কালোব্যাচ ধারণ করবেন। দলীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকার সঙ্গে কালো পতাকা থাকবে।
এরশাদের মৃত্যুর খবরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নানা অঙ্গনে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলসহ বাংলাদেশের রাজনীতিতে নেতিবাচক অনেক ধারা সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এরশাদ। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের সময় তাকে নিয়েই ‘বিশ্ব বেহায়া’ চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন শিল্পী কামরুল হাসান। আর্থিক কেলেঙ্কারি, নারীদের নিয়ে কেলেঙ্কারি, রাজনীতিতে একের পর এক ‘ডিগবাজি’ দিয়েও আলোচিত ছিলেন তিনি। তবে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের কাছে এরশাদ ছিলেন নায়কসম; তারা ‘পল্লীবন্ধু’ হিসেবেই ডাকতেন তাকে। তার মৃত্যুর পর গতকাল ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলনের নানা আলোকচিত্র ও আন্দোলনকারীদের স্মৃতিচারণ ভেসে ওঠে।
এরশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা এক শোকবার্তায় বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে সংসদে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গঠনমূলক ভূমিকার কথা স্মরণ করেন। এছাড়া সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া শোক প্রকাশ করেছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। শোক জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন।
এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ সকালেই স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে সিএমএইচে ছুটে যান। তার সঙ্গে ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদও (শাদ এরশাদ) ছিলেন। এরশাদের আরেক ছেলে এরিক এরশাদ রয়েছেন বারিধারায় তার বাড়ি প্রেসিডেন্ট পার্কে। এরিকের মা বিদিশার সঙ্গে প্রায় দেড় দশক আগে এরশাদের বিচ্ছেদ ঘটে। গতকাল সেই বিদিশাও ফেইসবুকে ‘এই জনমে আর দেখা হলো না’ বলে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এরশাদের রোগমুক্তি কামনায় ভারতের আজমিরে গিয়েছিলেন তিনি; বর্তমানে সেখানেই রয়েছেন।
গতকাল রবিবার বাদ জোহর ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে এরশাদের প্রথম জানাজা হয়। জানাজার পর এরশাদের ছোট ভাই ও জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের ভাইয়ের মৃত্যুতে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন। তিনি বলেন, মানুষ মাত্রই ভুলত্রুটি হয়ে থাকে। তার যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, তার প্রতি যদি কোনো ক্ষোভ থাকে, সে ক্ষেত্রে তাকে ক্ষমা করে দেবেন।
জানাজায় সেনাবাহিনীপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমানবাহিনীপ্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, সাবেক সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহবুবুর রহমান, বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা, সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, এরশাদের ছোট ভাই এবং জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের এমপি, ছেলে শাদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপিসহ পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও এরশাদের প্রথম জানাজায় অংশ নেন।
এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সাহিদুর রহমান টেপা, হাবিবুর রহমান, এস এম ফয়সল চিশতী, আজম খান, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, আলমগীর সিকদার লোটনসহ জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা এ সময় জানাজায় অংশ নেন।
জানাজার পরপরই সেনাসদরের পক্ষ থেকে এক লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। সেখানে বলা হয়, সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সেনা তত্ত্বাবধানে এরশাদের দাফন সম্পন্ন হবে। জানাজা শেষে তার মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়েছে।
ঢাকা ও রংপুরে চার দফা জানাজা শেষে আগামীকাল মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় সেনাবাহিনীর কবরস্থানে এরশাদের মরদেহ দাফন করার কথা থাকলেও পরে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। এরশাদকে কোথায় দাফন করা হবে তার সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। গতকাল বিকেলে বনানীর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। রাঙ্গা জানান, এরশাদ চেয়েছেন সেনাবাহিনীর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হোক। কিন্তু দলীয় নেতাকর্মীদের দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করা হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে গতকাল সকালে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) সাবেক সামরিক শাসক এরশাদের মৃত্যুর ঘণ্টা তিনেক পর তার দলের মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা শেষকৃত্যের বিস্তারিত সূচি গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রবিবার রাতে এরশাদের মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা হবে। এ জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অংশ নেবেন বলে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রেস অনুবিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।
নেতাকর্মীসহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের মরদেহ দুপুর ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কাকরাইলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রাখা হবে। একই দিন বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় জানাজার পর এরশাদের মরদেহ আবারও সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হবে।
রাঙ্গা সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার এরশাদের মরদেহ তার নির্বাচনী এলাকা রংপুরে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা থাকলেও ‘প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে’ সম্ভব হচ্ছে না। বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির মরদেহ আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে রংপুরে নেওয়া হবে। সেখানে সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা শহরের ঈদগাহ মাঠে ‘পেয়ারা’ নামে পরিচিত রংপুরের সন্তান এরশাদের চতুর্থ জানাজা হবে বলে তার প্রেস সচিব সুনীল শুভ রায় জানিয়েছেন। হেলিকপ্টারে করে ঢাকার আনার পর ওই দিনই এরশাদের দাফন কোথায় হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে পার্টি। এছাড়া আগামী বুধবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে এরশাদের কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জন্ম ১৯৩০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটায়। তার বাবা মোহাম্মদ মকবুল হোসেন। ভারতের কুচবিহারের দিনহাটা থেকে মোহাম্মদ মকবুল হোসেন রংপুর শহরের সেনপাড়ায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এরশাদ রংপুর জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এবং ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
সংসার জীবনে দুই সন্তানের জনক তিনি। বর্তমান স্ত্রী রওশন এরশাদের ঘরে এক পুত্রসন্তান রাহগির আল মাহি এরশাদ (সাদ এরশাদ) ও সাবেক স্ত্রী বিদিশার ঘরে আরেক পুত্র সন্তান এরিক। শেষ জীবনে এরশাদ রাজধানীর বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ বাসভবনে ১৯ বছর বয়সী ছেলে এরিককে নিয়ে বাস করতেন। দীর্ঘদিন ধরেই রওশন এরশাদ গুলশানে বাস করছেন। তার ছেলে সাদ এরশাদ স্ত্রীকে নিয়ে মালয়েশিয়া প্রবাসী।
এরশাদ ১৯৫২ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬০-৬২ সালে তিনি চট্টগ্রাম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কেন্দ্রে অ্যাডজুট্যান্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর সময় এরশাদ ছুটিতে রংপুর ছিলেন। পরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে পাকিস্তান চলে যান। পাকিস্তান থেকে আটকে পড়া বাঙালিরা যখন ১৯৭৩ সালে দেশে ফিরে আসে তখন তিনিও প্রত্যাবর্তন করেন।
পাকিস্তান থেকে দেশে ফেরার পর ১৯৭৩ সালে তাকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১২ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে তিনি কর্নেল ও ১৯৭৫ সালের জুন মাসে ব্রিগেডিয়ার পদে পদোন্নতি পান। এরপর ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট ভারতে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি ও উপ-সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বরে এরশাদকে সেনাবাহিনীপ্রধান পদে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং ১৯৭৯ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৭১ থেকে ’৮০ সাল পর্যন্ত অনেকটা চুপচাপই ছিলেন এরশাদ। জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর এরশাদকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান করেন। এর কিছুদিনের মাথায় জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন এরশাদকে। ১৯৮১ সালে বিপথগামী সেনাসদস্যদের জিয়াউর রহমানকে হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এরশাদ, যদিও এরকম অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনৈতিক অভিলাষ প্রকাশ পায় এরশাদের। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদ রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেন। ওই দিন দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে নিজের অধিকারে নেন।
এরপর ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই দলের মনোনয়ন নিয়ে ১৯৮৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
ক্ষমতা হারানোর পর এরশাদ গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং রংপুরের পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। সে বছর বিএনপি ক্ষমতায় এলে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা করে। তার মধ্যে কয়েকটিতে তিনি দোষীসাব্যস্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত হন।
এছাড়া ১৯৯৬ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি পাঁচটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ছয় বছর অবরুদ্ধ থাকার পর ৯ জানুয়ারি ১৯৯৭ সালে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৪টি আসনে জয়ী হয়। এরপর তিনি ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল ২৭টি আসনে বিজয়ী হয়। এরপর দশম ও সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ হন। এর মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনে জয় পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে সেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পান এরশাদ। পরে চলতি জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের নেতা ছিলেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি