সোনাগাজীতে বাবার সাথে পুকুরে সাঁতার শিখার স্বপ্ন মূহুর্তেই শেষ মাইশা'র • নতুন ফেনীনতুন ফেনী সোনাগাজীতে বাবার সাথে পুকুরে সাঁতার শিখার স্বপ্ন মূহুর্তেই শেষ মাইশা'র • নতুন ফেনী
 ফেনী |
১১ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনাগাজীতে বাবার সাথে পুকুরে সাঁতার শিখার স্বপ্ন মূহুর্তেই শেষ মাইশা’র

আলমগীর রিপন, নিজস্ব প্রতিনিধিআলমগীর রিপন, নিজস্ব প্রতিনিধি
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ১০:৫৪ অপরাহ্ণ, ১৪ মে ২০২৪

জান্নাতুল মাওয়া মাইশা (৬) কুয়েত প্রবাসী সাইম উল্যাহ হাজারীর বড় মেয়ে। মাইশা সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সফরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। তার বড় শখ ছিলো বাবার সাথে পুকুরে সাঁতার শিখবে। কিন্তু প্রবাসী বাবা এসে দেখলো তার মরদেহ মৃত্যু সাগরে ডুবে আছে।

(১২ মে) রোববার দুপুরের দিকে মাইশা তার মা জান্নাতুল ফেরদৌস, দাদি সামছুন্নাহার সহ ফেনীর লেমুয়ায় নানার বাড়ীতে দাওয়াত খেতে যায়। দাওয়াত থেকে ফেরার পথে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়ার কাজীর দিঘী নামক স্থানে রাস্তা পারাপারের সময় বালুর ট্রাকের নিচে পৃষ্ঠ হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেঁতলে যায়। উপস্থিত জনতা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে৷ তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ায় এলাকায় শোকের মাতম নেমে আসে। মাইশার সাথে থাকা তার মামা মাদ্রাসা শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সজিবও (১০) গুরুতর আহত হয়। তাকেও ফেনী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

কুয়েত প্রবাসী সাইম উল্যাহ হাজারী তার মেয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে ভেঙ্গে পড়েন। এবং তাৎক্ষণিকভাবে ছুটি নিয়ে দেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে ১৩ মে সোমবার ভোরে গ্রামের বাড়ীতে এসে পৌঁছে। এরপর সকাল ১০টায় আমিরাবাদ ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের সফরপুর হাজারী বাড়ীর দরজায় জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মাইশাকে।

জান্নাতুল মাওয়া মাইশার জেঠা আজহার উল্যাহ হাজারী ফারুক মাইশার মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বালুর ট্রাকের চাকায় পৃষ্ঠ হয়ে আমার ভাতিজি মৃত্যু হয়। বাড়ীর সামনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। তিনি আরো বলেন, দাওয়াত খেতে নানার বাড়ীতে গিয়েছিল তারা। রাস্তা পারাপারের সময় বালুর ট্রাক এসে তাকে মেরে দেয়। তার হাত ধরে থাকা মামা মোহাম্মদ সজিবকেও (১০) মেরে দেয়। এবং দু’জনই মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরবর্তীতে চিকিৎসক মাইশাকে মৃত ঘোষণা করে।

মাইশার পিতা কুয়েত প্রবাসী সাইম উল্যাহ হাজারী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়ের অনেক শখ ছিলো আমি প্রবাস থেকে আসার পর পুকুরে সাঁতার শিখবে। মোবাইলে কথা হলে বারবার শুধু সাঁতার শিখবার কথা বলতো। আমিও তাকে দেশে আসলেই সাঁতার শিখানোর কথা বলতাম। কিন্তু তার অকাল মৃত্যুর সংবাদ মেনে নিতে পারছিনা। আমার কলিজার ধন মৃত্যুর সাগরে ডুব দিয়ে আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি। সাথে সাথে ছুটি নিয়ে টিকেট কেটে রাতেই রওয়ানা করি। এবং ভোরে বাংলাদেশ এসে পৌঁছি।

প্রত্যক্ষদর্শী মাইশার দাদি বয়োজ্যেষ্ঠ সামছুন্নাহার বলেন, আমার আদরের নাতিকে আমার চোখের সামনে ট্রাক মেরে দিয়ে চলে যায়। সেখানে সে চটপট করতে করতে মারা যায়। আমি আমার নাতিকে বাঁচাতে পারিনি।

ফাজিলপুর পুলিশ ফাঁড়ি হাইওয়ে থানার ইনচার্জ রাশেদুল ইসলাম একটি মেয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার ঘটনায় আজহার উল্যাহ হাজারী ফারুক বাদী হয়ে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান।

উল্লেখ্য, প্রবাসী সাইম উল্যাহ হাজারী ও জান্নাতুল ফেরদৌসের দুই কন্যার মধ্যে মাইশা বড়। তাদের দেড় রুবাইয়া তাসনীম রাইকা নামের আরেকটি শিশু সন্তান রয়েছে।

সম্পাদনাঃ আরএইচ/এএইচ

আপনার মতামত দিন

Android App
Android App
Android App
© Natun Feni. All rights reserved. Design by: GS Tech Ltd.