‘জি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ জেতায় সমান ৬ পয়েন্ট ছিল ইংল্যান্ড ও বেলজিয়াম। গোল ব্যবধানেও ছিল সমতা। তৃতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে এই দুই দল। তবে সেই ম্যাচটা জিতলে দুশ্চিন্তার কারণ ছিল। কারণ কোয়ার্টার ফাইনালে এই গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দলের মুখোমুখি হবে ব্রাজিল। তাহলে উপায়?
ইংল্যান্ড উপায় বের করে করে সেরা খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিল। কিন্তু বেলজিয়াম খেলল জয়ের জন্য এবং ম্যাচটা তারাই জিতল। তারপর শেষ ষোলোয় জাপানের বাধা পার হয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। বেলজিয়াম মুখোমুখি পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। বাকিটা ইতিহাস। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দলটিকে হারিয়ে বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্ম এখন সেমিফাইনালে।
বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ইউরোপ থেকে ৪টি দল কোনো ম্যাচ হারেনি। বেলজিয়াম সেই চার দলের একটি। ১০ ম্যাচে ৯ জয় আর ১ ড্র নিয়ে নিজেদের গ্রুপ থেকে শীর্ষ হয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্তপর্ব নিশ্চিত করে দলটি। শেষ ২৪ ম্যাচ ধরেই অপরাজিত বেলজিয়াম।
বেলজিয়াম ঐতিহ্যগতভাবে ভালো দল হলেও লম্বা দৌড়ের ঘোড়া কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল ফুটবলপ্রেমীদের। গত বিশ্বকাপেও প্রায় একই দল ছিল বেলজিয়ামের। কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে বিদায় নেয় তাঁরা। ২০১৬ সালে দলের কোচের দায়িত্ব নেন রবার্তো মার্তিনেজ। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে তাঁর প্রায় এক দশকের অভিজ্ঞতা কাজে দেয় জাতীয় দলেও। কারণ ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়দের অনেকেই যে বেলজিয়ামের।
বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে বেলজিয়ামের প্রতিপক্ষ ছিল র্যাঙ্কিংয়ে ৫৫তম পানামা। ৩-০ গোলের সহজ জয় তুলে নেয় মার্তিনেজের শিষ্যরা। জোড়া গোল করেন স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকু। সে ম্যাচে ৬২ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ৫৬৮টি পাস খেলেছিল বেলজিয়াম। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ পাসই সফল।
দ্বিতীয় ম্যাচে তিউনিসিয়াকে ৫-২ গোলে উড়িয়ে দেয় তাঁরা। এ ম্যাচেও লুকাকু জোড়া গোল করেন। দলের আরেক তারকা খেলোয়াড় এডেন হ্যাজার্ডও জোড়া গোল করেন। গ্রুপ পর্বের তৃতীয় ম্যাচে বেলজিয়ামের দেখা হয় ইংল্যান্ডের সঙ্গে। আদনান ইয়ানুজাইয়ের গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রবার্তো মার্তিনেজের শিষ্যরা।
৩ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ‘জি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে বেলজিয়াম। শেষ ষোলোয় তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিল জাপান। সবার ধারণা ছিল, ম্যাচটি সহজ হবে তাঁদের জন্য। কিন্তু ৫২ মিনিটের মধ্যে দুই গোল হজম করে বিদায় দেখছিলেন হ্যাজার্ড-লুকাকুরা। এখান থেকে ৭৪ মিনিটের মধ্যে সমতায় ফেরেন তাঁরা। আর যোগ করা সময়ের ৪ মিনিটে জয়সূচক গোলে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে যায় বেলজিয়ামের। অনেকের মতেই, এ ম্যাচটা ছিল এই বিশ্বকাপের সেরা ম্যাচ।
কোয়ার্টার ফাইনালের আগে বেলজিয়াম কোচ মার্তিনেজ স্বীকার করে নিলেন, ব্রাজিল এবার সেরা দল। কিন্তু কথাটা যে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে এগিয়ে থাকার জন্য বলেছিলেন, তা বোঝা গেল ম্যাচের প্রথমার্ধে। খেলা দেখে বোঝার উপায় ছিল না, কারা বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবে এসেছে। বেলজিয়ামের প্রতি আক্রমণ, ডি ব্রুইনার দুর্দান্ত এক গোল আর কোর্তোয়ার অসাধারণ সব সেভ বিশ্বকাপের ফেবারিট দলটিকে বিদায় করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।
১৩ মিনিটে কর্নার থেকে ফার্নান্দিনহোর আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বেলজিয়াম। ৩১ মিনিটে নিজেদের ডি বক্সের কিছু সামনে বল পান রোমেলু লুকাকু। বল নিয়ে দিলেন টান। কয়েকজনকে কাটিয়ে মাঝমাঠ পার হয়ে বল বাড়িয়ে দিলেন ডি ব্রুইনাকে। ডি ব্রুইনার ঠাণ্ডা মাথার দুর্দান্ত এক শট। দুই গোল ব্যবধান এগিয়ে গেল বেলজিয়াম। পরে এক গোল হজম করলেও সেমিতে ওঠায় ১৯৮৬ বিশ্বকাপের পর বেলজিয়ামের এবারের পারফরম্যান্সই সেরা।
সেমিফাইনালে আজ ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে বেলজিয়াম। র্যাঙ্কিংয়ে বেলজিয়ামই এগিয়ে। ফ্রান্সকে হারাতে পারলে প্রথমবারের মতো তাঁরা উঠে যাবে বিশ্বকাপের ফাইনালে। ডি ব্রুইনা, হ্যাজার্ড, কোর্তোয়াদের আশা করতেই পারেন বেলজিয়াম ভক্তরা।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি