সঞ্চিতা বনিক। একজন দক্ষ বিউটি আর্টিস্ট এবং নারী উদ্যোক্তা। শখের বসে কাজ করছেন বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে। ক্লাইন্ট’র চাহিদা অনুযায়ী মনের মাধুরি মিশিয়ে নারীদের ভিতরের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলেন চোখে, মুখে, কানে, নখে, বাহুতে, চুলে তথা সমস্ত মানবাকৃতিতে। নান্দনিক কাজের ছোঁয়া ও দক্ষতা দিয়ে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন এই প্রজন্মের তরুণীদের কাছে। এবং অল্প সময়ের মধ্যে তাদের কাছে হয়ে উঠেন খুবই জনপ্রিয় একজন বিউটি এক্সপার্ট হিসেবে। এগিয়ে যাচ্ছেন তার কাজের দক্ষতা, উপস্থাপনের নান্দনিকতা, গুণগত মান, সততা ও পরিশ্রমকে পুঁজি করে। এসব নিয়ে কথা বলেছেন নতুন ফেনী’র সাথে। তার কিছু অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
নতুন ফেনী: আপনি কখন এবং কিভাবে পার্লারের কাজ শুরু করলেন?
সঞ্চিতা: ২০১০ সালের আমি পার্লারের কাজের সাথে যুক্ত হই। স্বামী থাকে প্রবাসে, বিয়ের পর শশুর বাড়িতে পারিবারিক কাজের পর বাকী সময়টা একাকী কাটাতে হয়। ভাবলাম পারিবারিক কাজের পাশাপাশি অলস সময়ে বসে না থেকে নিজে কিছু একটা করি। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো কিছু একটা করার জন্য সবসময় আমার মাথায় ঘুরফাঁক করতো। মেয়ে হিসেবে আমাকে স্বাবলম্বী হওয়া দরকার। কিছু একটা করার বাসনা থেকে পার্লারের কাজের সাথে যুক্ত হওয়া। ২০১০ সালে প্রথমে আমি ফেনীর একটি স্থানীয় পার্লারে একটানা দুই বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছি, তারপর ২০১২ সালে ছাগলনাইয়াতে যৌথভাবে একজনের সাথে একটি প্রতিষ্ঠান দেই এখন ২০১৯ সালে নিজে সেঁজুতি বিউটি ওয়ার্ল্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছি।
নতুন ফেনী: কেন এই পেশায় এসেছেন, আরো অনেক কিছুই তো ছিল?
সঞ্চিতা: শখের বসেই মূলত এ পেশায় আসি। শৈশব থেকে সাজসজ্জার প্রতি আমার আগ্রহ ছিলো। পার্লারের কাজটাকে আমি এত ভালোবাসি ও গুরুত্ব দিয়ে থাকি তাই অন্য কোন পেশার কথা ভাবতে পারিনি বা ভাবনায় আসেনি। পেশা ও নেশা হিসেবে এটাকে আমি বেঁচে নিলাম। তাছাড়া এটা একটা শিল্পও বটে। বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সৌন্দর্যকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এটি আমাদের জন্য নি:সন্দেহে একটি আনন্দের সংবাদ।
নতুন ফেনী: আপনি কি কি কাজ করেন?
সঞ্চিতা : আমি যেহেতু একজন মেক-আপ আর্টিষ্ট। সে হিসেবে বিয়ে, বৌ সাজ, হেয়ার স্টাইল, রিবোন্ডিং, ফেসিয়াল, ব্রু ফ্লাগ, চুল কাটিং, চুল কালার, নাক-কান ফোঁড়ানো, মেহেদী, গায়ে হলুদসহ একটা মেয়ের সৌন্দর্য ফুঁটিয়ে তোলার জন্য যা আছে সবগুলো করার চেষ্টা করি।
সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তোলাই আপনার কাজ, এক্ষেত্রে কোন বিষয়কে আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন?
সঞ্চিতা : প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টিকর্তার বিশেষ একটি দান। আমরা তার আদলেই বাহ্যিকভাবে মানুষের ভিতরের সৌন্দর্যটাকে ফুঁটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। সে ক্ষেত্রে আমি ক্লাইন্টের চাহিদাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এবং সবসময় কাজের মধ্যে ন্যাচারালিটি রাখার চেষ্টা করি। সর্বোপরি চেষ্টা করি একটা মানুষকে কিভাবে সৌন্দর্য দিয়ে ফুঁটিয়ে তোলা যায়।
নতুন ফেনী: বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে আপনি এ পর্যন্ত কয়টি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং প্রশিক্ষণে কে আপনাকে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন?
সঞ্চিতা : আমি এ পর্যন্ত ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ৮ টি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। কারো উৎসাহে নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং ইউটিউব দেখে আমি নিজেই প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে তা গ্রহণ করি। যেহেতু কাজ করার জন্য প্রথমে আমি নিজেকে দক্ষ করে তোলা দরকার। নিজেই যদি নিজেকে তৈরি করতে না পারি তবে মানুষকে কি দিব?
নতুন ফেনী: এই কাজের মধ্যে আপনার পরিবারের কেউ কি উৎসাহ যুগিয়েছেন?
সঞ্চিতা : উৎসাহের কথা বলতে গেলে পরিবারের কারো কাছ থেকে প্রথমে আমি তেমন কারো উৎসাহ বা সাপোর্ট পাইনি। আমার এখনো মনে আছে, আমার দু:সম্পর্কের এক ভাগিনা-রুপম বণিক। আমার শশুর বাড়িতে এক রাতে খাওয়ার সময় উপস্থিত পরিবারের সবার সামনে বলল- মামি, আপনি বসে না থেকে কিছু একটা করতে পারেন। আমি তাকে বললাম যে, তোমার মামাকে বলে দেখ। তো সে আমার স্বামী রাজিব বণিককে বলল যে, মামি যেন কিছু একটা করে। তখন এটা আমার স্বামী আমার বাবাকে জানায়। পরে আমার বাবা নিমাই রায় আমাকে বলল একটা সেলাই মেশিন কিনে দিবে। কিন্তু সেলাইয়ের প্রতি আমার কোন আগ্রহ ছিল না। যেহেতু সাজসজ্জার কাজ আমার পছন্দ সে হিসেবে আমি এটাকে বেঁচে নিই। ধীরে ধীরে আমার বাবা, আমার স্বামীসহ পরিবারের সবাই আমাকে সাপোর্ট দেয়।
নতুন ফেনী: কোন বাঁধাবিপত্তি হয়েছে কি?
সঞ্চিতা : সব কাজেই ছোট খাটো বাঁধা থাকাটা স্বাভাবিক। বাঁধা না থাকলে সাফল্য আসে না। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। আমি এটাকে পজেটিভলি দেখি। ছোট খাটো বাঁধাগুলো চাপা পড়ে গেলো ক্লাইন্টদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়ে। তারাই আমাকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করেছেন।
নতুন ফেনী: আমরা জানি যে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি অনেকটা সফল, কিন্তু সেটি কিভাবে?
সঞ্চিতা : আসলে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে কতটুকু সফল হতে পেরেছি সেটা আমি জানি না। তবে চেষ্টা করছি সফলতা অর্জন করার সিঁড়িগুলো বেয়ে উঠার জন্য। পরিবারের সবার আশীর্বাদ এবং ক্লাইন্টদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর।
নতুন ফেনী: যারা এ পেশায় আসতে চায় তাদের কি পরামর্শ দেবেন?
সঞ্চিতা : পরামর্শ দেয়ার জন্য আমি নিজেকে এখনো যোগ্য মনে করি না। আমি এখনো প্রতিনিয়ত শিখছি। এই পেশায় শেখার কোন শেষ নেই। তবুও যদি বলতে হয় তাহলে মেয়েদের মধ্যে যারা এ পেশায় আসতে চান তাদের স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু তার আগে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করে লক্ষ্য ঠিক রেখে কাজটা সঠিকভাবে শিখতে হবে। নি:সংকোচে আগ্রহ নিয়ে কাজ করে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- প্রত্যেকটা মেয়ের কিছু না কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে নিজের জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য। এ মনোভাব নিয়ে কাজে আসতে হবে। তবেই তাদের এ পেশায় আসা স্বার্থক হবে।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
সঞ্চিতা : আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বলতে নিজেকে আরো দক্ষ বিউটিশিয়ান হিসেবে গড়ে তোলা। এ পেশায় সমাজে ভালো একটা অবস্থান তৈরি করা। পাশাপাশি কিছু সোস্যাল কাজ করার আগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়া লাইফস্টাইল, বিনোদন সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখির পরিকল্পনা রয়েছে।