ফেনীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে গত দুই মাসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৫ জন, দাগনভূঞা উপজেলায় দুই জন, সোনাগাজী উপজেলায় দুই জন ও পরশুরাম উপজেলায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে এদের বেশিরভাগের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হলে করোনা নেগেটিভ আসে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।
সর্বশেষ ৩০ মে শনিবার ফেনী সদর উপজেলায় করোনা উপসর্গ নিয়ে দুই জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে এক ব্যক্তি (৬২) ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হন।এর কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। তিনি উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। একই দিন ধলিয়া ইউনিয়নের আলিপুর গ্রামের এক বৃদ্ধা (৮০) ডায়েরিয়া নিয়ে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি পক্রিয়া শেষ হবার আগেই তিনি মারা যান।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া দুই জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, করোনা উপসর্গ থাকায় তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এরআগে গত ২৮ মে বৃহস্পতিবার জ্বর ও কাশি নিয়ে সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের পাইক পাড়া গ্রামের এক যুবক (৩০) মারা যান। মৃত্যুর কয়েকদিন আগে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল ও নিজ বাড়িতে চিকিৎসা নেন।
করোনার উপসর্গ নিয়ে ২৪ মে রোববার সোনাগাজী উপজেলার চর মজলিশপুর ইউনিয়নের চান্দলা গ্রামের মসজিদের ঈমাম (৭৫) মারা যান। পরে তাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমাহিত করা হয়।
দাগনভূঞা পৌরশহরের ভাড়া বাসায় জ্বর-সর্দি শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৬ এপ্রিল রোববার মারা যান এক চা দোকানী (৪৫)। তিনি ফেনী শহরের লাভ মার্কেটের সামনে ফুটপাতে চায়ের দোকান করতেন। তার বাড়ি উপজেলার রাম নগর ইউনিয়নের সেকান্তরপুর গ্রামে।
জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের সোনাপুরগ্রামের নিজ বাড়িতে মারা যান এক ব্যক্তি (৬৮)। তিনি স্থানীয় একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন ছিলেন।
ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়নের আবুপুরের এক নারী (৬০) রাজধানীর জাতীয় কিডনী ডায়ালাইসিস ইনস্টিটিউটে মারা যান। ১৩ এপ্রিল সোমবার করোন সন্দেহে স্থানীয়রা নিজ গ্রামে কবর দিতে বাধা দিলে পরে ফেনী পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
১১ এপ্রিল শনিবার পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া গ্রামের এক মাদরাসা ছাত্র (২০) জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যায়। সে পরশুরাম ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্র। করোনার শুরু থেকে সে ত্রান বিতরণ কার্যক্রমের সাথে জড়িত ছিলো।
ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুরের দক্ষিণ শিবপুর গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার এক ব্যক্তি (৬০) মারা যায়। তিনি নারায়নগঞ্জের একটি মাছের আড়তে চাকরি করতেন।
১ এপ্রিল বুধবার ফেনী সদর উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সিলোনিয়া গ্রামের যুবক (৩০) জ্বর-শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান। ওই যুবক ফেনী শহরের একটি গ্রিল ওয়াকর্সপে কাজ করতেন।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা বিএমএর সভাপতি ডা. সাহেদুল ইসলাম কাওসার বলেন, পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য প্রশাসনসহ সবাই সতর্ক হলে এ ধরণের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। সমন্বিত উদ্যোগে প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ শয্যার জন্য সেন্ট্রাল সাপ্লাইসহ হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যাবস্থা করা গেলে উপজেলা পর্যায়ে রোগীদের সেবা অনেকটা নিশ্চিত হবে। একইভাবে জেলা পর্যায়ে অধিক সংখ্যক রোগী সেবার আওতায় আসলে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় পর্যায়ে রোগীর চাপ কমবে। এ ক্ষেত্রে ক্রিটিকাল রুগীর সেবায় চিকিৎসকগণ অধিকতর মনোনিবেশ করতে পারবেন।
জেলা করোনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সম্বয়ক ডা. শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, শনিবার ১৪১ জনের নমুনা সংগ্রহ কওে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পর্যন্ত ১ হাজার ৫শ’ ৩৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি), চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং নোয়াখালী আবদুল মালেক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ১ হাজার ৪শ’ ১৮ জনের প্রতিবেদন আসে।
তিনি আরো জানান, ফেনীতে চিকিৎসক, পুলিশ, সরকারী কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিসহ এখন পর্যন্ত ১শ ৫৪ শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ফেনী সদরের ৫৯ জন, ছাগলনাইয়ায় ২১ জন, দাগভূঞায় ৩৭ জন, সোনাগাজীতে ১৯ জন, ফুলগাজীতে ৫ জন, পরশুরামে ৮ জন ও অন্যান্য আরো ৫ জনের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ৫৫ জন সুস্থ ও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সম্পাদনা: আরএইচ/এনজেটি







