রফিকুল ইসলাম
দশ বছর আগে কক্সবাজারে একটি আদালত যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামির (হুজি) ফেনীর তিন সদস্যকে আজিজ উল্যাহ, গিয়াস উদ্দিন ও জসিম পাটোয়ারী। দন্ডিত মামলার আপীল চলাকালীন উচ্চ আদালত থেকে ওই তিন জঙ্গীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দা তাদের অপর ৩৫ দন্ডিত সঙ্গী জামিনে বের হয়ে যায়। এর পর থেকে তারা পলাতক রয়েছে ।
বর্তমানে পলাতক এই জঙ্গীরা কোথায়, কী করছেন এ সর্ম্পকে কোন তথ্য নেই পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা কাছে। তবে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ধারণা করছেন, পলাতক জঙ্গিরা পরিচয় গোপন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
সূত্র জানান, ১৯৯৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার থাইংখালী বনবিটের ল-াখালীর জঙ্গলে প্রশিক্ষণ শিবির খুলে ভারী অস্ত্র পরিচালনাসহ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছিল হুজি। এমন অভিযোগে ওই প্রশিক্ষণ শিবিরে অভিযান চালিয়ে ওখান থেকে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৪১ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন পুলিশ ওসি ছগির আহমদ বাদী হয়ে একইদিন উখিয়া থানায় আটক ৪১ জঙ্গির বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে একটি মামলা দায়ের করেন এবং একই বছর ৪১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট প্রদান করেন। কক্সবাজার প্রথম বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে ১৯৯৮ সালের ৩ জুন আটক হুজি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন সাজা প্রদান করেন। পরে ওই জঙ্গিরা সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করে। ২০০২ সালে আপিল চলাকালীন জঙ্গিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে আত্মগোপনে চলে যান। ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি আপিল রায়ে হাইকোর্ট ৪১ আসামির যাবজ্জীবন দন্ড কমিয়ে প্রত্যেককে ১২ বছর করে কারাদন্ড দেয়। এরপর জামিনে মুক্তি লাভের পর থেকে ৩৫ জঙ্গী পলাতক রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
ফেনীস্থ র্যাব-৭ এর একটি সূত্র জানান, পলাতক জঙ্গী ফেনীর আজিজ উল্যাহ, গিয়াস উদ্দিন ও জসিম পাটোয়ারী ছাড়াও নরসিংদীর মোস্তফা কামাল, মানিকগঞ্জের আবুল খায়ের মাশরুর, ময়মনসিংহের আবুল কাশেম, মৌলভীবাজারের আব্দুল হক, গোপালগঞ্জের বোরহান উদ্দিন ওরফে মামুন, খালেদ সাইফুল ও আবুল হোসেন ওরফে আবুল হাশেম, বাগেরহাটের মমতাজ উদ্দিন, খুলনার হাফেজ আবু তাহের, রাজবাড়ির হাফেজ আলী ইয়াজ আহমদ, যশোরের শেখ আনিসুর রহমান, দিনাজপুরের রাশিদুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জের শরীয়ত উল্লাহ, হবিগঞ্জের নুরুল হক, আবু তাহের ও মুহিবুর রহমান, পটুয়াখালীর মো. ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, চাঁদপুরের আবু জিহাদ মুসা, কুমিল্লার ইউনুছ ওরফে ইউসুফ ও মাওলানা আব্দুস সোবাহান এবং চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারীর আব্দুল আজিজ ওরফে আব্দুল হালিম ওরফে সেলিম, নুরুল আলম, বাহা উদ্দিন, রাওজানের রেজাউল করিম, মিরসরাইয়ের দিদারুল আলম, সন্দ্বীপের কামরুল ইসলাম ওরফে শামসুল ইসলাম, বাঁশখালীর আব্দুল্লাহ আল হোসাইন ওরফে আব্দুল্লাহ, হালিশহরের শাখাওয়াত হোসেন, কক্সবাজারের চকরিয়ার রেজাউল করিম, আনোয়ার বিন জাবের, হাফেজ সিরাজুল কবির ওরফে টিপু, উখিয়ার থাইংখালী গ্রামের হাফেজ রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক উদ্দিন রয়েছেন । তাদেরকে গ্রেপ্তারে বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালায় ।
এই ছাড়া অপর সাজাপ্রাপ্ত ৬ আসামী মিয়ানমারের বুচিদং জেলার টংবাজার এলাকার নুরুল ইসলাম, যশোর জেলার ভবানীপুর এলাকার শেখ মো. লাল মিয়ার ছেলে মুহাজির আবুল আব্বাস, যশোরের দক্ষিণ চাঁদপুর বাঘারঘোনা গ্রামের আমিনুর রহমান, মাগুরার শ্রীপুর কামারপুরের ছোবাহান ওরফে আবু সুফিয়ান, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি কল্যাণপুরের আব্দুল মান্নান ওরফে আব্দুল হান্নান ও পটুয়াখালীর বাউফলের নুরাইনপুর গ্রামের আবু জাফর বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়ে বিভিন্ন কারাগারে সাজাভোগ করছে বলে সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে আজিজুল হকের গ্রামে বাড়ি ফেনী সদরের ধর্মপুরে ও গিয়াস উদ্দিন ও জসিম পাটোয়ারীর গ্রামের বাড়ির ফেনী সদরের বারাহীপুরে শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গেলে এই প্রতিনিধিকে গ্রামবাসী জানা যায়, ওই ঘটনার পর থেকে পলাতক জঙ্গীরা পরিবার পরিজন নিয়ে নিজ নিজ গ্রাম থেকে উধাও হয়ে গেছে। তাদের গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানায়, পলাতক জঙ্গীরা আফগানিস্তানে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। পলাতক জঙ্গিরা বর্তমানে ছদ্মবেশে মসজিদ ও হেফজতখানার মুয়াজ্জিন অথবা ইমামতি ও শিক্ষকতায় নিয়োজিত থেকে পরিচয় গোপন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জঙ্গি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে গ্রামবাসী ধারণা করছেন ।
এই ব্যাপারে ফেনীর পুলিশের এসবি শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এএসপি আমিনুল ইসলাম জানান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে পুলিশ তৎপর রয়েছে। লন্ডাখালীর জঙ্গলে আটক জঙ্গিদের মধ্যে ফেনীর যে তিন জন জঙ্গির নাম রয়েছে তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি এও বলেন, ওই জঙ্গিরা এখন বিদেশে অবস্থান করছে বলে একাধিক সোর্স জানিয়েছেন।
সম্পাদনা: আরএইচ/আরই
ফেনীর দণ্ডিত তিন জঙ্গীসহ ৩৫ সহযোগী এক দশক ধরে পলাতক







