উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া ফেনীর সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৮ সালে ফেনী জেলার দাগনভূঞার আনোয়ার হোসেন খোকন নামের এক সৌদি প্রবাসী রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর মুঠোফোনে এসএমএস করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাত্র চার কর্মদিবসের মধ্যে স্কুল ভবন পেয়েছে ফেনী সদর উপজেলার রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্কুলটির জন্য পাঁচ শ্রেণিকক্ষবিশিষ্ট একটি বহুতল ভবনের চূড়ান্ত বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। বর্তমানে সেই ভবনে বিদুৎ সংযোগ ব্যাতিত সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালে ভবন বরাদ্দ হলেও সেই স্কুলের পাশে হাজী সৈয়দের রহমান উচ্চ বিদ্যালয় সাথে জমি নিয়ে বিরোধ থাকায় দেরীতে কাজ শুরু হয় । পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামানের হস্তক্ষেপে জমি বিরোধ সমাধান হলে ২০১৯ সালে ভবন নির্মাণ শুরু হয়।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এটি নির্মাণের দায়িত্ব পান জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সেতু এন্টারপ্রাইজ’। শুসেন জানান, ভবনটি নির্মাণে ৬৯ লাখ টাকা বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চারতলা ভীত বিশিষ্ট ৫ রুমের ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কাছে তা হস্তান্তর করা হয়।
বিদ্যালয়ের সাবেক সহ-সভাপতি পেয়ার আহাম্মদ জানান, ১৯৭২ সালে বাড়ির পাশেই ৪০ শতাংশ জমিতে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তখনকার ইউপি মেম্বার আফজালুর রহমান(প্রবাসী আনোয়ারের বাবা) । ৭৪ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। ওই স্কুলে আধাপাকা টিনশেড ভবনের তিনটি কক্ষে পাঠদান চলত। ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরে ৩ রুমের আরেকটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হলেও সেটিতেও শিক্ষার্থীদের জায়গা হতোনা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মারজাহান আক্তার জানান, ভবনের কাজ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। এখনো বিদুৎ সংযোগ দেয়া হয়নি। করোনার কারনে শ্রেনী কার্যক্রম বন্ধ থাকার ফলে বিদুৎ সংযোগের প্রয়োজন হয়নি। যেহেতু এখন কোন ক্লাস হয়না ভবনে বিদুৎ সংযোগ দিলে স্কুলের বারান্দায় বখাটে ছেলেরা রাতে আড্ডা দিবে।
বিদ্যালয়ে সামনে প্রতিষ্ঠাতা আফজালুর রহমানের বাড়িতে গেলে কথা হয় প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের পরিবারের সাথে। বিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন কমিটির সভাপতি (আনোয়ারের স্ত্রী) কহিনুর জানান, তার শশুরের প্রতিষ্ঠিত স্কুলের টিনের ঘরের জায়গায় দালান দেখে অনেক ভালো লাগে। তাদের পরিবার সব সময় চেস্টা করেছে এই বিদ্যালয়ের জন্য ভালো কিছু করতে।
তিনি জানান, তার ৩ মেয়ে ১ছেলে এই স্কুল থেকে পড়ালেখা করেছে। এখান থেকে ফাইভ পাস করে বড় মেয়ে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করছে। মেঝো মেয়ে ইসরাত জাহান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং এ পড়ছে। সেজো মেয়ে আয়েশা ছিদ্দিকা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্নালিজমে পড়ছে। একমাত্র ছেলে ২০১৯ সালে বৃত্তিসহ সমাপনী শেষ করে এখন ফেনী শিশু নিকেতনে অধ্যয়ন করছে।

সৌদী প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের (৬০) সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য ডিসি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, উপজেলা শিক্ষা অফিসার সকলের কাছে গিয়েছেন। তৎকালীন জেলা ডিসি আমিন উল আহসান বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসবে বললে এর কিছুদিন তার বদলি হয়ে যায়। সব দিক থেকে নিরাশ হয়ে পরবর্তীতে তিনি এক সরকারি কর্মকর্তার পরামর্শে প্রধানমন্ত্রীর নাম্বার সংগ্রহ করে এসএমএস পাঠান। তার কস্ট স্বার্থক হয়েছে তিনি অনেক খুশি। এলাকাবাসীও এখন তাদরেকে আগের চেয়ে বেশি মূল্যায়ন করেন।
এলজিইডি ফেনী সদর উপজেলারি উপ-সহকরী প্রকৌশলী মোঃ বেলায়েত হোসেন জানান, ভবনটির অসম্পূর্ণ কাজ দ্রুত শেষ করে এক মাসের মধ্য এটি উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুাব করা হবে।
উদ্বোধন প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এলজিইডি আমাদেরকে কাজ সমাপ্তের রিপোর্ট প্রদান করলে মন্ত্রনালয়ে জানানো হবে। হয়তো ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী ভবনটির উদ্বোধন করতে পারেন।
উল্লেখ্য এর আগে ২০১৮ সালের ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরব থেকে মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা পান। খুদে বার্তাটি পাঠান সৌদি আরবপ্রবাসী আনোয়ার হোসেন খোকন। তিনি প্রধানমন্ত্রীকে স্কুলটির কোড নম্বর পাঠিয়ে লেখেন, এই স্কুলটি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আফজালুর রহমানের জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারছে না। একটি স্কুল ভবন করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন তিনি।
খুদে বার্তা পাওয়ার পর এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর একান্ত সচিব (১) তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে নির্দেশ দেন। স্কুলটির কোড নম্বর মিলিয়ে একান্ত সচিব নিশ্চিত হন স্কুলটি হচ্ছে ফেনী সদর উপজেলার রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পৌঁছে দেন। এরপর ২৬ জুন বিকেলে পাঁচ শ্রেণিকক্ষবিশিষ্ট একটি ভবনের চূড়ান্ত অনুমোদন পায় রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







