সরিষার হলুদ ফুলে ভরে গেছে ফেনী জেলার মাঠের পর মাঠ। মৌমাছিরা ভীড় করেছে হলুদ ফুলের রাজ্য। হলদে রাঙ্গা মাঠে হারিয়ে যেতে মন চায় । ফেনীতে এবার গতবারের চেয়ে সরিষার আবাদ বেড়েছে ২২৭ হেক্টর। ভালো ফলনের আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর ও কৃষকরা। চলতি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলায় মোট সরিষা চাষ হয়েছে ১ হাজার ৯শ ৭ হেক্টর জমিতে। দিন দিন সরিষা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে এ জেলার কৃষকদের।
কৃষি অধিদপ্তর জানায়, এ বছর জেলায় বারী-৯, বারী-১৪, বারী-১৫, বারী-১৭ এবং সম্পদ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন ফেনীর কৃষকরা। চলতি বছর প্রতি হেক্টর জমি থেকে ১ দশমিক ৩৫ মেট্টিক টন সরিষা উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগ প্রত্যাশা করছে। এ বছর ফেনী জেলায় সরিষা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মোট ২ হাজার ৭শ ২৭ মেট্টিক টন ।
সরিষা চাষে উৎসাহিত করতে সরকারিভাবে প্রণোদনা হিসেবে জেলার ৫শ জন কৃষককে ইউরিয়া সার, বীজ ইত্যাদি বিনামূল্যে বিতরণ করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী এ বছর সদর উপজেলায় ১২০০ হেক্টর, ছাগলনাইয়ায় ১২৫ হেক্টর, ফুলগাজীতে ১৪৪ হেক্টর, পরশুরামে ১৬৮ হেক্টর, দাগনভূঞায় ৪৮ হেক্টর ও সোনাগাজীতে ৩শ ৩৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এবার জেলায় মোট ১ হাজার ৯শ ৭ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে।
কৃষক রতন চন্দ্র দাস বলেন, বিগত ১৫ বছর ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়ার উত্তর কাশিমপুর গ্রামের মাঠটি পতিত ছিল। সরকারি প্রণোদনা পেয়ে এবং কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় ২০১৯ সালে দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। ভালো ফলন পাওয়ায় এবার এর পরের বছর থেকে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এবছর ৮ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেন।

কৃষক আবদুর রহিম জানান, গত ৫ বছর আগে থেকে আমরা সরিষা চাষ শুরু করি। অনান্য ফসলের চেয়ে সরিষাতে লাভ বেশি। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর আমাদেরকে সব সময় পরামর্শ দেন ।
ফেনী সদর উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব চন্দ্র মজুমদার নতুন ফেনীকে বলেন, রবি মৌসুমে পতিত জমিতে সরিষা আবাদ করলে নিবিড়তা বাড়ে এবং এরপর বোরো ধান চাষ করলে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে। আগে এই অঞ্চলে শুধু আমন এবং বোরো ধান চাষ হতো এখন সরিষার চাষের প্রতি মানুষ ঝুঁকছে। কৃষি অধিদপ্তর সার, কীটনাশক, বীজ, পরামর্শ দিয়ে কৃষকদের সব সময় সহযোগিতা করে আসছেন। আবহাওয়া অনুকূলে আছে আশা করি এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুহাম্মদ শহীদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, সরকার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ফেনীতে তেল ও ডাল ফসল আবাদ বাড়ছে। এতে করে পতিত জমি আবাদি জমিতে পরিণত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি পতিত জমিগুলোকে চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কৃষকরা দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে । এর কারন সয়াবিনের প্রতি মানুষের অনীহার কারনে সরিষার চাহিদা বাড়ছে। উৎপাদন খরচ কম, লাভ বেশি, সল্প দিনে ফসল হওয়ায় সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৭৫-৮০ দিনের মধ্য সরিষার আবাদ সম্পন্ন হয়। সরিষা কেটে সাথে সাথে বোরো আবাদ করতে পারে এতে করে জমি পতিত থাকেনা।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







