এক সপ্তাহের ব্যাবধানে ফেনীতে করোনা রোগী বেড়েছে তিনগুণের বেশি। গত এক সপ্তাহে ফেনীতে ৩৬৭ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে একজনের। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৯৬ জনে ও ৪৮ জনের মৃত্যুর হয়েছে। অপরদিকে টিকা পেতে ফেনীতে নিবন্ধন করেছেন ৫৯ হাজার ৮শ ১০ জন। টিকা নিয়েছেন ৪৮ হাজার ৯শ ১ জন। নিবন্ধন করেও টিকা নেনিনি ১০ হাজার ৯শ ৯ জন। মোট সুস্থ হলেন ২ হাজার ২৫৬ জন। বুধবার বিকালে এসব তথ্য জানায় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে নোয়াখালী আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাব ও ফেনী বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে গত এক সপ্তাহে (০১-০৭ এপ্রিল) ফেনীর ৮২৭ টি নমুনা পরিক্ষা করা হয়। এতে ৩৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর আগের সপ্তাহে (২১-২৮ মার্চ) ৪১৯ জনের নমুনা পরিক্ষা করা হলে ১০০ জনের করোনা সনাক্ত হয়। এ হিসেবে গত সপ্তাহের তুলনায় করোনা সনাক্তের হার তিন গুণের বেশি এবং নমুুনা পরিক্ষার হার দ্বিগুন।

সর্বশেষ বুধবার ০৭ এপ্রিল ১২৪ জনের নমুনা পরিক্ষা করা হলে ৪১ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়। মঙ্গলবার জেলায় সর্বোচ্চ ১০৮ জনের করোনা সনাক্ত হয় এবং একজনের মৃত্যু হয়। সোমবার ১০৩ জনের মধ্য ০৭ জন, রবিবার ১০১ জনের মধ্য ৫৮ জন, শনিবার ১২৭ জনের মধ্য ৬৬ জন, শুক্রবার ১২৫ জনের মধ্য ৬৬ জন ও বৃহঃস্পতিবার ১৩২ জনের নমুনা পরিক্ষা করলে ২১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এছাড়া আজ আরও ১৫ জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হলেন ২ হাজার ২৫৬ জনে।
নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ফেনী সদরে ২২ জন, ছাগলনাইয়ায় ৩ জন, দাগনভূঞায় ৯ জন, সোনাগাজীতে ১ জন, পরশুরামে ৩ জন, ও ফুলগাজীতে ৩ জন রোগী রয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত তথ্যমতে, পরীক্ষার জন্য মোট প্রেরিত ১৬ হাজার ৯৪৮ টি নমুনার মধ্যে প্রাপ্ত ১৬ হাজার ৫৯৫টি নমুনার ফলাফলে উক্ত সংখ্যা শনাক্ত করা হয়। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার প্রায় ১৭.৪৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ফেনীতে শনাক্ত ২ হাজার ৮৯৬ জন রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ শনাক্ত হয়েছে ফেনী সদরে ১ হাজার ২৭২ জন। শনাক্তের সংখ্যায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভূঞা উপজেলা। এ উপজেলায় মোট শনাক্ত করা হয়েছে ৫০৫ জন। এরপরে রয়েছে ছাগলনাইয়ায় ৩৭৮জন, সোনাগাজীতে ৩৪১ জন, পরশুরামে ১৯৩ জন ও ফুলগাজীতে ১৭০ জন। এছাড়া ফেনীর বাইরের ৩৬ জন রোগী রয়েছে।
শনাক্তকৃত মোট করোনা রোগীর ৪৩.৯২ শতাংশ রোগীই ফেনী সদরের। আক্রান্তদের মধ্যে আজ পর্যন্ত জেলায় ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৮ জন পুরুষ ও ৭ জন নারী রয়েছে। ফেনী সদরে সর্বোচ্চ ১৯জন, সোনাগাজীতে ১১জন, দাগনভূঞায় ৮জন, ছাগলনাইয়ায় ৬জন, পরশুরামে ৩জন ও ফুলগাজীতে ১ জন রয়েছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে ২০জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে। এর মধ্যে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জন, ছাগলানইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩জন, দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন ও ফেনীর মেডিনোভা হাসপাতালে ৩ জন রোগী রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫৩ হাজার ৪৫০ রোগী টেলিমেডিসিন সেবা নিয়েছেন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ৫৬ জন রোগী, যাদের মধ্যে ৩৭জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী। গত ২৪ ঘন্টায় ১৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া ৭জন পুরুষ ও ৬ জন পজিটিভ রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তিনি আরও জানান, গতকাল হাসপাতাল হতে প্রেরিত ৫৮টি নমুনার মধ্যে ২৫টি পজিটিভ এসেছে। অর্থাৎ প্রতি দুইটি নমুনার মধ্যে
একটি পজিটিভ।
এদিকে ফেনীতে করোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন নিতে নিবন্ধন করেও প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ টিকা নেননি। এ তথ্য জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. এসএসআর মাসুদ রানা। তিনি জানান, টিকা পেতে এ পর্যন্ত ফেনীতে নিবন্ধন করেছেন ৫৯ হাজার ৮শ ১০ জন। টিকা নিয়েছেন ৪৮ হাজার ৯শ ১ জন। নিবন্ধন করেও টিকা নিতে বুথে আসেননি ১০ হাজার ৯শ ৯ জন। মোট টিকা গ্রহীতার মধ্যে ৩০ হাজার ৭শ ২০ জন পুরুষ এবং ১৮ হাজার ১শ ৮১ জন নারী। টিকা গ্রহীতা ২৬ জনের মধ্যে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিলো। নিবন্ধনকৃত ব্যক্তিদের তাগাদা দিতে ইতোমধ্যে একাধিক সভা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, টিকা কার্যক্রমের শুরুতে জেলায় মোট ১৯টি বুথ স্থাপন করা হয়েছিলো। এরমধ্যে ২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আটটি, পাঁচটি উপজেলায় দুইটি করে ১০টি ও ফেনী পুলিশ লাইনে একটি বুথ স্থাপন করা হয়েছিলো। টিকাদান কার্যক্রমের জন্য ৩৫ জন চিকিৎসক, ৬ জন করে ২৪টি দলে মোট ১শ ৪৪ জন টিকাদানকারী নিয়োজিত করা হয়েছিলো।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







