জীবন-জীবিকার তাগিদে সূদুর প্রবাসে পাড়ি জমান সাজিদ রুবেল। কিন্তু সাফল্য তাকে ধরা দেয়নি বিদেশের মাটিতে। ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরে এলেও দমে যাননি রুবল। ছোটবেলা থেকে পশুপাখি ও হাঁস-মুরগী পালনের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। আবারো হাঁস পালনে আবারো উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন। হাঁস পালনে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন সফলতার।
এলাকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শ ও ইউটিউব থেকে কলা কৌশল শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে শুরু করেন হাঁস পালন। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বড় দেখা পান সফলতার হাতছানিত। সাজিদ রুবেল’র হাঁস পালন প্রকল্পটি এলাকায় ব্যপক আলোড়ন সৃষ্টি করে এবং অন্য উদ্যোক্তাদের মাঝে অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে।
ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের নিজপানুয়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের ছেলে সাজিদ রুবেল। উদ্যোগী এ তরুণ ব্যবসার পাশাপাশি আত্মমানবতার সেবায় কাজ করছেন। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজ এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘অনুসন্ধান ব্লাড ব্যাংক’ নামে একটি সংগঠন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার নাসিরা দিঘি সংলগ্ন ‘সাজিদ ডাক ফার্ম এন্ড হ্যাচারিতে’ হাঁস পালনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। পুরো খামার ঘুরে দেখতে দেখতে এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় সাজিদ রুবেলের।
তিনি বলেন, ছয় মাস আগে বাড়ির পাশে তার বাবার ৪০ শতক জায়গার উপর ১৫শ’ হাঁস বাণিজ্যিকভাবে পালন শুরু করেন। আগে থেকে পোল্ট্রি ফার্মের উপর কিছু অভিজ্ঞতা থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব দেখে আরো অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। পরে সিরাজগঞ্জ ও খুলনা থেকে প্রথমে সাত শতাধিক এবং পরে আরো আট শতাধিক খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের বাচ্চা সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে তার খামারে ১৫শ’ হাঁস রয়েছে। বাচ্চা ক্রয় থেকে শুরু করে ঘর নির্মাণ, জলাশয় তৈরিসহ সবকিছু মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় সাত লাখ টাকার মতো।

রুবেল বলেন, এগুলো দেখাশোনা করার জন্য ১২ হাজার টাকা বেতনে একজন কর্মচারীও রেখেছেন। বর্তমানে তার খামারে প্রায় চার লাখ টাকার মতো খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস আছে। পালিত হাঁসের স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের জন্য স্বল্প গভীর একটি জলাশয় তৈরির পাশাপাশি কিছু উঁচু মাটির টিলা সৃষ্টি করেন। এসব স্থানে কয়েকটি ছোট টিনের ঘরও নির্মাণ করেন তিনি। জলাশয়ের পানিতে ছোট-বড় মাছের চাষ করলেও তা মূলত হাঁসের জলকেলি এবং এগুলোর খাদ্য হিসেবে ব্যাবহারের জন্য করা হয়।
এ তরুণ বলেন, খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস সাড়ে ৪ মাস বয়স থেকেই ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে প্র্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। বর্তমানে তার এই খামারের হাঁস ডিম পাড়া শুরু করেছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিন পর থেকে প্রতিদিন ৬০০ এর বেশি ডিম পাওয়া যাবে। উৎপাদন ভালো হলে প্রতিদিন ছয় হাজার টাকা করে প্রতি মাসে এক লাখ আশি হাজার টাকা থেকে দুই লাখ টাকার মতো আয়ের আশা প্রকাশ করেন।
তরুণ এ উদ্যোক্ত বলেন, এ জাতের হাসের ডিমের আকারও অপেক্ষাকৃত অনেক বড়। এটি টানা এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত ডিম পাড়ে। পরে ডিম পাড়া শেষ হয়ে এলেও তা দেশি হাঁসের তুলনায় অনেক বেশি। এই হাঁসের মাংসও মুরগির মতোই পুষ্টিকর। ডিম পাড়ার পর স্ত্রী হাঁসকে মাংস হিসেবে ব্যাবহার করা যায়। খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস বেশ কষ্টসহিষ্ণু। এই হাঁস পালনে বেশি পানিরও প্রয়োজন হয়না। কেবল খাবার ও গলা ডোবানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেলেই এরা সহজ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তাই পুকুর বা অন্যান্য জলাশয় ছাড়াই এই হাঁস পালন সম্ভব।
রুবেল আরো বলেন, ডিম উৎপাদনের জন্য খাকি ক্যাম্পবেল জাতের ক্ষেত্রে পুরুষ হাঁসের উপস্থিতি প্রয়োজন হয় না। কিন্তু দেশি হাঁসের ক্ষেত্রে পুরুষ হাঁসের প্রয়োজন হয়। বাচ্চ তোলার পর প্রথম ২৫ দিনে ডাক প্লেগ নামক একটি টিকা দিতে হয়। এর ১৫ দিন পরে ব্লু-স্টার ডোজ এবং ৭০ দিন বয়সে বাচ্চাকে ডাক কলেরা দিতে হয়। খাদ্য হিসেবে প্রথম ১৫ দিন বয়লার স্ট্রাটার, ১৫ থেকে দেড় মাস পর্যন্ত সোনালী গ্রোয়ার। এরপর থেকে ডিম পাড়া পর্যন্ত সয়ামিল, বুসি, গম, ভুট্টা ভাঙ্গা, শামুক, শুটকির গুড়া ইত্যাদি খাদ্য খাওয়ানো হয়।

তিনি আরো বলেন, আর্থিকভাবে সফলতার জন্য এলাকায় বেকারত্ব দূর এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যেই হাঁস পালন করা। প্রথম ক’দিন হাঁসের ডিমগুলো সংরক্ষণ করে বিভিন্ন জায়গায় এতিমদেরকে দেওয়া হয়। তার খামারে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য আগামী মাসে একটি ইনকিভিউটর মেশিন স্থাপন করা হবে। তিনি সরকারী পৃষ্ঠ-পোষকতা পেলে এবং হাঁস পালনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এ খামার থেকে প্রচুর মুনাফা অর্জনের আশা প্রকাশ করেন।
আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের এক নতুন উদ্যোক্তা নতুন ফেনী’কে বলেন, রুবেল’র হাঁস পালনে দ্রুত উন্নতি ও সফলতা দেখে আমিও আর্থিকভাবে সাবলম্বী হওয়ার আশায় হাঁস পালন করার উদ্যোগ নিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল নতুন ফেনী’কে বলেন, সাজিদ রুবেলের এমন উদ্যোগ এখানকার বেকার যুবকদের মাঝে আশার আলো সৃষ্টি করেছে। তাকে অনুকরণ করে হাঁস পালন করলে আর্থিক সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও এই তরুণ উদ্যোক্তাকে উপজেলা প্রশাসন থেকে সরকারীভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে তিনি জানান।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমকেএইচ/এসএইচসি







