ফেনীর আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে সহস্রাধিক শ্রমিক। দুই শিফটে দিন-রাত করে তারা এ কারখানায় চাকুরী হারানোর ভয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। চলমান পরিস্থিতিতে এ নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষের পাশাপাশি স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ও ক্ষোভের দেখা দিয়েছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত নিরাত্তার ব্যবস্থা রয়েছে দাবী করলেও শ্রমিক ও স্থানীয়রা বলছে তা অপ্রতুল।
জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের সকল সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনসমাগম হয় এমন সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তুু ফেনী শহরতলীর ছাড়িপুর এলাকায় স্থাপিত আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরীতে এখনো চলছে কর্মযজ্ঞ। এখনো সকাল-সন্ধ্যা শ্রমিকদের ব্যস্ততায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। কারখানায় শিফট চালু ও শেষ হওয়ার সময় মানুষের গাদাগাদি যেন নিত্য নৈমিত্তিক দৃশ্য। এ নিয়ে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দেখা দিলেও কর্ণপাত করছেনা কেউ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী শ্রমিক জানান, কারখানাটিতে তারা কম মজুরীতে কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতির খবরা-খবর শুনে পরিবার ও স্বজনরা তাকে কাজে আসতে বাধা দিচ্ছেন। কিন্তু কারখানা থেকে বলে দেয়া হয়েছে এখন ছুটির আবেদন করলে তাকে আর কাজে নেয়া হবেনা। তাই কাজ হারানোর ভয়ে শ্রমিকরা ছুটি নিতেও সাহস পাচ্ছেনা। এমতাবস্থায় বাধ্য হয়েই তারা জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি জানান, কারখানায় প্রবেশ মুখে ৫টি হাত ধোয়ার বেসিন স্থাপন করা হলেও তা শ্রমিকতুলনায় অপ্রতুল।
ফেনী চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্টির সভাপতি আইনুল কবির শামীম জানান, স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে কারখানাটি চালু রয়েছে বলে আমি জেনেছি। এ নিয়ে স্থানীয়রা আতঙ্কিত ও অস্বস্তিতে রয়েছে। আমার জানামতে, চলমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের কারখানা চালু রাখার কোন সুযোগ নেই। আমরা এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে বিস্তারিত কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা বলা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে ম্যাচ ফ্যাক্টরী চালু রাখার সুযোগ নেই। তাছাড়া এরকম কারখানা চালু রাখলে আশপাশের লকডাউন হওয়া জেলাগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সেজন্য জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ফেনীর বিসিক ক্ষুদ্র কুঠির শিল্প কর্পোরেশনের এজিএম অরবিন্দ দাস জানান, ফেনীর ছাড়িপুরস্থ আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরীটি একটি বৃহৎ শিল্প কারাখানা। এটি আমাদের আওতাভূক্ত প্রতিষ্ঠান নয়। তারপরও করোনা ঝুঁকি এড়াতে চলমান পরিস্থিতিতে এটি বন্ধ রাখা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
এ ব্যাপারে ফেনীস্থ আবুল খায়ের ম্যাচ ফ্যাক্টরীর ব্যাবস্থাপক মো: আজাদ ভূইয়া জানান, আমাদের কারখানাটিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ম্যাচ তৈরী হয়। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য কারখানা চালু থাকা দোষনীয় নয়। এছাড়াও কারাখানার শ্রমিকরা হাত-পা ভালোভাবে পরিস্কার করে কাজে যোগ দেন। আমরা তাদের প্রণোদনা হিসেবে প্রতিদিন তিন বেলা এখানে খাবারের ব্যবস্থা করেছি। তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ টোবাকো ও জাপান টোবাকো কারাখানা চলমান রয়েছে। আমাদের এটিও সে হিসেবে চলমান থাকলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করে কোন প্রতিষ্ঠান উৎপাদন রাখতে চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই। তারপরও বিষয়টি যেহেতু আমি জানতে পেরেছি, বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদনা: এনকে/আরএইচ







