ফেনীতে করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও চলছে রমরমা বানিজ্যমেলা। ফলে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মানোন্নয়ন, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শহরের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা। এতে করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিপাকে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনায় স্বাস্থবিধি ও সামাজিক দুরত্ব না মেনে শহরের ওয়াপদা মাঠে প্রতি বছরের মতো এবারো ৮০ টি স্টল নিয়ে চলছে মাসব্যাপী শিল্প ও বানিজ্য মেলা। প্রবেশমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে জনপ্রতি ১৫ টাকা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ২০ টাকা করে নির্ধারিত হয়েছে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চলা এই মেলায় ক্রেতাদের আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে পন্য ক্রয়ের উপর র্যাফেল ড্র, কসমেটিকস, গার্মেন্টস সামগ্রী, প্রসাধনী, ব্যাগ সহ আরো অনেক আইটেমের পন্য। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, নৌকার বোট। এতে করে আয়োজকরা হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। প্রতিনিয়ত ফেনী সহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মেলায় ভীড় করছে নারী, শিশু ও কিশোর। স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু কিশোরদের উপস্থিতি একটু বেশি। সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও চলছে মেলা রমরমা করার কার্যক্রম। এতে করে বানিজ্য মেলায় গিয়ে শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশংকায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

সম্প্রতি মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে শহরের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী ও সচেতন মহল মানববন্ধন করেছে। অতিস্বত্তর মেলা বন্ধের বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসন ও পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী ও সচেতন মহল অভিযোগ করে বলেন, যেখানে করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে ফেনীতে একুশে বই মেলার অনুমোদন দেয়নি সেখানে ওয়াপদা মাঠে এই ধরনের রমরমা বানিজ্য মেলার আয়োজন সত্যিই বিস্ময়কর। এমনই প্রশ্ন ঘুরফাক খাচ্ছে জেলার সর্বত্র মহলে। কোনরকম অনুমোদন ছাড়াই তারা মেলা শুরু করে দিয়েছে। মেলায় নিন্মমানের পন্য বিক্রি করে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। এতে শহরের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে হঠাৎ করেই সারাদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফেনীরেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। চলতি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সরকারি নির্দেশনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও এর মেয়াদ আরো বাড়তে পারে বলে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। কারন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হলে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি করোনা আক্রান্ত হবে।
শরীফুর রহমান আদিল নামের এক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে সরকারি সিদ্ধান্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, সেখানে এই ধরনের বানিজ্য মেলার অনুমতি পায় কিভাবে? এটি খুবই ন্যাক্কারজনক। তিনি এই মেলা বন্ধের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

তাহমিনা আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, মেলাতে বেশি ভীড় করছে নারী ও শিশুরা। কারণ মেলায় নারীদের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে কসমেটিকস সামগ্রি। দেশে দিন দিন যেভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই বানিজ্য মেলার কারণে শিশুরা যেকোনো সময় আক্রান্ত হতে পারে। এখনি যদি মেলা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া না হয় তাহলে করোনা আক্রান্ত হয়ে নিভে যেতে পারে আমাদের শিশুদের আগামী ভবিষ্যত। সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানা এই মেলা বন্ধে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।
করোনা ও বানিজ্য মেলা প্রসঙ্গে ফেনীর ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা বলেন, ফেনীতে গত সপ্তাহে করোনাক্রান্ত হয়েছে ৪৭ জন, মোট করোনাক্রান্ত ২ হাজার ৪’শ ১৩ জন, মৃত্যু বরন করেছেন ৪৫ জন, সুস্থ্য হয়েছেন ২ হাজার ১’শ ৫৪ জন, চিকিৎসাধীন ২১৪ জন, নমুনা সংগ্রহ ২১১ জনের। ফেনীর স্বাস্থ্য বিভাগ বরাবরই করোনা সচেতনতায় সচেষ্ট। আমরা সে লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ফেনীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্বি পেলে সবাই স্বাস্থ্য বিভাগের দিকে আঙুল তুলবে। করোনার মধ্যে মেলার আয়োজন খুবই দুঃখজনক বলে সিভিল সার্জন মনে করেন।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







