ফেনী দাগনভূঞা উপজেলার, রাজাপুর ইউনিয়নের সমাসপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। রনাঙ্গনে জীবনবাজি রেখে সম্মুখ সমরে অংশ নিলেও ৫০ বছরেও মেলেনি মুক্তিযোদ্ধার খেতাব। ভাতাসহ কোন রকম সুযোগ সুবিধা পাননি। অভাবে অনাহারে দিন কাটছে তার।
১৯৪২ সালে ১০ জানুয়ারি জন্ম গ্রহন করেন রাজ্জাক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন ২৯ বছরের তাগড়া জোয়ান। তখন চট্রগ্রাম-নোয়াখালি রুটে বাসের হেল্পারি ছেড়ে ভারতের পালাটোনা হিরো ক্যাম্প থেকে থ্রি নট থ্রি, রাইফেল, স্টেন গান, গেনেট এবং ডিনামাইট এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যখন পাক হানাদার বাহিনী চট্টগ্রাম দখল করে নেন, তখন সে হরিনা ক্যাম্পে অংশ গ্রহন করার মাধ্যমে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। বিলোনিয়া চেকপোস্ট, বন্দুয়া, ফুলগাজি এবং চিথলিয়া, মুন্সির হাট, ময়না মতি,সেনবাগেও সক্রিয় ভাবে সম্মুখ সমরে অংশ নেন তিনি। ২নং সেক্টরে জাফর ইমাম বীর বিক্রম, ৩ নং সেকশন প্লাটুন কমান্ডার শেখান্তর মিয়ার নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারন করতে গিয়ে রাজ্জাক বলেন, একদিন আমাদের ক্যাম্প সহ আমি যখন সরাসরি যুদ্ধ করছিলাম তখন হানাদার বাহিনী আমাদের দিকে বোম মারা শুরু করলো, তখন আমাদের সবাই গাড়িতে উঠে খুব তাড়াতাড়ি গাড়ী চালিয়ে চলে যাচ্ছিলাম। অতিরিক্ত গাড়ির ঝাকুনির ফলে গাড়ির রড়ের সাথে মাথা বাড়ি খেয়ে কিছু অংশ ভিতরে ঢুকে যায় তা এখন ও আছে। আমি এই ঘটনার কথা কখনো ভুলতে পারিনি এবং পারবোনা।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হাউজ বাংলা ভবনে আমি লাইট মেশিন গান,এস এম জি অস্ত্র সহ সমর্পন করি। আমার ট্রপসে যুদ্ধকরা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হায়দার হাদি, আব্দুল কাদের, ওস্তাদ মন্নান তাদের নাম লাল মুক্তি বার্তায় আছে এবং তারা সুযোগ সুবিধাও পান।
দাগনভূঞা উপজেলার ডিপুটি কমান্ডার জাফর মিয়া বলেন, আবদুল রাজ্জাক একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধের শেষে সে চট্টগ্রামে তার শশুর বাড়িতে বসবাস করেছেন। তখন থেকে আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না। তারপর পরে সে এখানে আসে আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য কাগজপত্র দেখান। আমি এটা নিয়ে আজ কয়েক বছর কাজ করতেছি কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।

আবদুল রাজ্জাক চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি কিন্তু কিছুই পাইনি। এখন ও আমাকে না খেয়ে ভিক্ষুকের মত খুঁজে খুঁজে জীবন চালাতে হয়। আমার ১ ছেলে ২ মেয়ে ছিল। ছেলে দুর্ঘটনায় মারা যায়। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে বড় মেয়ের স্বামী মারা গেছে। সেও আমার সাথে থাকে। অভাবে -অযত্নে কঠিন ভাবে পার হচ্ছে আমার জীবন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ আমাকে প্রয়োজনে সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই করা হোক। তবুও মরার আগে যেন দেখে যেতে পারি আমি দেশের জন্য লড়েছি আজ দেশ আমাকে সম্মান করলো।
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে আবেদনের বিষয়ে বলেন, একবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা অফিসে ডেকেছিল কিন্তু তারা আমার কথা না শুনে আমাকে না মঞ্জুর করে দিয়েছেন। আমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা, আমি সঠিক প্রমাণ দিতে পারবো। প্রয়োজনে আমাকে যাচাই করা হোক।
দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা আক্তার তানিয়া বলেন, তিনি যদি উপজেলা অফিসের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ে আবেদন করেন আমরা সব রকম সহযোগিতা করবো। যদি উপজেলা অফিসের মাধ্যমে না করে সরাসরি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন তাহলেও আমাদের যতটুকু সহযোগিতা করার সুযোগ আছে আমরা করবো।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







