আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে সাত দিনের লকডাউন। এ উপলক্ষে ফেনীর বাজারে বেড়েছে ক্রেতাদের চাপ । উপচে পড়া ভীড় মুদি দোকানগুলোতে। এই সুযোগে দোকানিরাও বাঁড়িয়ে দিয়েছে নিত্য পন্যের দাম। শহরের বড় বাজার, পৌর হর্কাস মার্কেট, মহিপাল কাঁচা বাজার, সিও অফিসবাজার ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাবসায়ী ও সাধারন মানুষ দোকন এবং সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য চাল, ডাল, তেল, নুন, পেঁয়াজ, আলু ইত্যাদি কিনছেন। বাড়তি মানুষের চাপে শহরে বিভিন্ন সড়কে যানজট ছিলো রাত পর্যন্ত।

লকডাউন মানেই যেন বাজার করার উৎসব। ঈদের বাজারের মতই সদাই কিনছেন মানুষ। অনেকে আবার ১০-১৫ কেজিতে সীমাবদ্ধ নেই। কিনছেন আলু, চাল, পেয়াজ, আটার বস্তা। উপজেলার হাটবাজারের ব্যাবসায়ীরাও মজুদ করার জন্য সব কিছু নিয়ে যাচ্ছেন বেশি বেশি করে।
এক সপ্তাহে লকডাউনের খবরে ফেনীর ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া, মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন বাজারে আতঙ্কের কেনাকাটা বা প্যানিক বায়িং শুরু হয়ে গেছে। মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাজারে ভিড় করছে। কেউ কেউ একসঙ্গে বাড়তি পরিমাণ পণ্য কিনে ঘরে ফিরছেন।
রবিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার অন্যতম বড় বাজারে ক্রেতাদের ভিড় দেখে মনে হতে পারে করোনা নয় ঈদ এসেছে। সেই ঈদকে উদযাপনের জন্য চলছে ব্যাপক কেনাকাটা। বেশির ভাগ মানুষ সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ডাল, তেল, পেঁয়াজ ও আলু কিনছিলেন। তবে মাছ, গোশত, সবজির বাজারে ভীড় ছিল অন্যদিনেইর মতই।
বড় বাজারের রাবেয়া বাণিজ্য বিতানের মালিক জানান, সাধারণত ঈদের পূর্বে এমন ভিড় দেখা যায়। লকডাউনের খবর শুনেই ক্রেতারা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বাজারে আসছেন। লকডাউনে পন্যর দাম বেড়ে যায় আবার যাতায়াতে অসুবিধা তাই এক সাথে নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে ক্রেতা, বিক্রেতাদের বলছেন, একদিকে মাসের প্রথম শনিবার, অন্যদিকে সামনের সপ্তাহ থেকে রোজা। অনেকেই মাসের ও রোজার বাজার একসঙ্গে করছেন। তাই ক্রেতা কিছুটা বেশি।

কালিদহরে ক্রেতা আবুল কালামের হাতে মোটামুটি লম্বা ফর্দ দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘রোজার বাজার গতকাল শুক্রবার করেছি। লকডাউনের খবর শোনার পর আবার বাড়তি কিছু কিনে রাখার জন্য বাজারে এসেছি। তবে এক দিনের ব্যবধানে পণ্যের দাম কেজি প্রতি ৪/৫ টাকা হারে বেড়ে গেছে। এমনকি একই পণ্যের দাম একেক দোকানে একেক রকম চাচ্ছে।
পরশুরামের সাকিব জানান, ‘লকডাউন’ কত দিন থাকে, বলা তো যায় না। তা ছাড়া এই সময়ে বাজারে যত কম আসতে হয় ততই ভালো। তাই যতটুকু সম্ভব বাজার করলাম।
সিন্দুরপুর বাজারের ব্যাবসায়ী আশরাফ জানান, ৭ দিনের লক ডাউন কতদিন থাকে জানিনা। লকডাউনে ভাড়া বেশি, জিনিসের দাম বেড়ে যায় তাই এখন বেশি করে বাজার নিয়ে যাচ্ছি।
শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী বলেন, এমনিতে করোনা বিপর্যয়ের কারণে বিগত সময়ের ক্ষতি এখনো পুষিয়ে আনতে পারেননি তারা। বর্তমানে ব্যবসায়ীরা ঋণ, ধার দেনায় জর্জরিত আছেন। তবু সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
এদিকে জেলা পর্যায়ে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার (৪ এপ্রিল) সকালে নিজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজজামান। সভায় জেলায় করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি ও সংক্রমণের বিস্তার রোধে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
করোনা ভাইরাস উপসর্গ দেখা দিলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা এবং বিদেশ ফেরতদের বাধ্যতামূলক ১৪ দিন নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এছাড়া মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের বিষয়ে সভায় উপস্থিত সকলের একমত পোষণ করেন। এটি বাস্তবায়নে জেলার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভূমি কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াদিুজ্জামান বলেন, এ সময় হোটেল, রেস্টুরেন্ট বসে খাওয়া যাবে না। পার্সেল যোগে বিক্রি করা যাবে। এছাড়া মসজিদসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসহ সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইমাম ও পুরোহিতগণকে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে বলা হয় এবং বিষয়টি তদারকি করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেয়া হয়।
সম্পাদনা:আরএইচ/এইচআর







