ফেনীর আলোচিত জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বেন্ডু হাজারী হত্যা মামলাটির দীর্ঘ দুই যুগেও বিচার হয়নি। এ নিয়ে পরিবার ও স্বজনদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। তদন্তকর্মকর্তাদের সাক্ষির জন্য আটকে আছে আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়।
জানা যায়, ১৯৯৬ সালের ৬ জুন জাতীয় নির্বাচনের দুইদিন আগে ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তার দক্ষিণ পার্শ্বে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বেন্ডু হাজারীর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে ফেনী সদর হাসপাতাল ও পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় তার ভাই মীর হোসেন হাজারী বাদী হয়ে ফেনী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিভিন্ন পর্যায়ে এসআই অরুণ কুমার চন্দ্র, পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ ও কামরুল হাসান মামলার তদন্ত করেন। ১৯৯৭ সালের ২৬ এপ্রিল পরিদর্শক কামরুল হাসান ২৬ জনকে আসামী করে ফেনীর আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করেন। ১৯৯৮ সালের ১৯ আগস্ট এ মামলায় অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহন শুরু হয়। ১৯৯৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় প্রথম সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়।
আদালতের বেঞ্চ সহকারি রাজেন্দ্র কুমার ভৌমিক জানান, এ মামলায় ১৬জন সাক্ষীর মধ্যে ১৪ জন সাক্ষ্য প্রদান করেন। মামলার তিন তদন্তকারী তিন কর্মকর্তার মধ্যে পুলিশ পরিদর্শক মোস্তাক আহমেদ সাক্ষ দিলেও কামরুল হাসান ও এসআই অরুণ কুমার চন্দ্র এখনো সাক্ষ্য দেননি। সর্বশেষ ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ তারিখে এ মামলায় সাক্ষ গ্রহন হয়েছে। চলতি বছরের ১০ মার্চ এ মামলায় দুই তদন্তকর্মকর্তার সাক্ষ্য প্রদানের ধায্য দিনে কেউ না আসায় ২৫ এপ্রিল পূনরায় দিন ধায্য করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ মো: কায়সার মোশারফ ইউসূফ। বর্তমানে পুলিশ পরিদর্শক কামরুল হাসান ও এসআই অরুণ কুমার চন্দ্রের সাক্ষের জন্য মামলাটির নিষ্পত্তি করা যাচ্ছেনা।
ফেনী জেলা জর্জ কোর্টের পিপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি হাফেজ আহাম্মদ জানান, আলোচিত এ মামলায় ২৬ আসামীর মধ্যে ১ জন কারাগারে, ৯ জন জামিনে ও ১৩ জন পলাতক রয়েছেন। মামলার ৩ জন আসামী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সাক্ষের জন্য মামলাটি নিষ্পত্তি করা যাচ্ছেনা।
নিহতের স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা হাসনা আক্তার বানু ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, স্বামী হত্যার বিচারের দাবীতে অনেক দৌড়েছি। বয়সের ভারে এখন আর পারছিনা। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দুইবার দেখা করেছি। আর্থিক সহযোগিতা পেলেও স্বামী হত্যার বিচার পাইনি। এখন বিচারের বিষয়টি ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি। এ জগতে না পেলে পরকালে আমার স্বামীর হত্যাকারীদের বিচার অবশ্যই হবে।
নিহতের বড় ছেলে এসআই বিপ্লব হাজারী জানান, আমার বাবা দুইবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ৯০ এর ছাত্র আন্দোলনের সময় ফেনী জেলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। বৃহত্তর নোয়াখালী ছাত্রআন্দোলনের অন্যতম রূপকার ছিলেন। জীবনে প্রায় অর্ধশতবার গ্রেফতার হয়ে একযুগেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকার সময় বাবাকে হত্যা করা হয়। এ হত্যা আমাদের পুরো পরিবারকে নি:স্ব করে দিয়েছে।







