মিরসরাই প্রতিনিধি>>
২০১১ সালের ১১ জুলাই। চার বছর পূর্বে মিরসরাইয়ের আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ে এক আচমকা ঝড় এসে কেড়ে নেয় ৪৫টি স্কুলছাত্রের জীবন। আজও সেই নির্মমতা আবুতোরাব জনপদের বাতাসকে ভারি করে রেখেছে। আর্তনাদ আর শোকের মাতম থামেনি। এখনও স্কুলের আঙ্গিনায় আর খেলার মাঠে বন্ধুদের খুঁজে ফেরে আবুতোরাব স্কুলের সহপাঠিদের মন।
১৯১৪সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরনের এবার আরো জোরদার হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ও নির্মম ট্রাজেডী বিশ্ববাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। দুর্ঘটনার পর সেখানে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া, সাবেক রাষ্টপ্রতি বদরুদৌদ্দা চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, শিক্ষা সচিব আবু নাছের কামাল চৌধুরী সহ দেশের প্রথম সারির প্রায় সবগুলো রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংস্থা। নিহতদের স্মরণে সেসময় সরকারের পক্ষ থেকে আবুতোরাব স্কুলকে সরকারী করনের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল দফায় দফায়। যদিওবা তখন দেশে সরকারীকরনের প্রক্রিয়া স্থগিত ছিল।
চলতি বছরে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত দেশের প্রত্যেক উপজেলায় একটি স্কুলকে সরকারী করনের পরিকল্পনায় আবারও মিরসরাইয়ের আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরনে জোরদাবী জানিয়েছেন ট্রাজেডীতে নিহতদের পরিবার, শোকাহত শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী। সম্প্রতি আবুতোরাবে এক জনসভায় গৃহায়ন ও গনপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরনের আশ্বাস দেওয়ায় সরকারীকরনের প্রক্রিয়ায় আরো গতি পেয়েছে। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১২শ ছাত্র-ছাত্রী জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। প্রতিবছর জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলে সুনাম বয়ে আনছে।
এদিকে, আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারী করনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সুপারিশ করা লিখিত দাবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর পাঠিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ডিও দিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ট্রাজেডীর দ্বিতীয় বছর উপজেলা মাসিক সমন্বয় সভায় মায়ানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির নিজামী উপস্থাপন করলে সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরনে জন্য রেজুলেশন করা হয়। চোখের সামনেই সহপাঠী হারানোর সেই শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্য মনে পড়লে এখনও গা শিউরে উঠে সঠপাঠীদের। এছাড়া আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরনের দাবীতে গনস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে ‘হিতকরী’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন।
ট্রাজেডীরতে সহপাঠী হারানো তৎকালীন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং বর্তমানে ১০ম শ্রেণীতের পড়–য়া তানজিলা আক্তার লিজা, মিতা নাথ, সালা উদ্দিন, ইসমাঈল হোসেন রাসেল জানান, দূর্ঘটনার চার বছর পার হয়ে গেলেও আজো একদিনের জন্যও ভুলতে পারিনি সে দু:সহ স্মৃতির কথা গুলো। আমরা দাবী জানালে সেসময় শিক্ষামন্ত্রী-শিক্ষা সচিব আমাদের স্কুলকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিলেন। বন্ধুদের স্মৃতিরক্ষায় আবুতোরাব স্কুলকে সরকারীকরনের জোর দাবী জানিয়েছে ট্রাজেডীতে নিহত স্কুল ছাত্রদের সহপাঠীরা।
আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আজম খান বলেন, ট্র্যাজেডিতে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা কোন দিন পুরণ হওয়ার নয়। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় সরকারী করনের দাবী জানান। আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর সাদেক বলেন, ‘দুর্ঘটনায় আমাদের স্কুলের অনেকগুলো কচিপ্রাণের ইতি ঘটেছে। তাদের শূন্যতা কখনো পূরন হবার নয়। এখনো মনে হচ্ছে তারা আমার আশেপাশে ঘুরাফেরা করছে। তিনি আরো বলেন, ‘ট্র্যাজেডির সময় শোকে প্রকাশ করতে এসে শিক্ষা মন্ত্রণালায় সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এসে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারীকরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন তা বাস্তবায়ন করার সময় এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রাণালয়কে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয় সরকারী করনের জোর দাবী জানিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জাফর সাদেক, সহকারী প্রধান শিক্ষক রতন কুমার দাশ, রবিউল হোসেন নিজামী, মমিনুল হক, জাহাঙ্গীর আলম, মহরম আলী, আবু বক্কর সিদ্দীকি, সমীরণ বড়–য়া, সাইফুল ইসলাম, জামাল উল্লাহ চৌধুরী, মিহির চক্রবর্তী, মোহাম্মদ ইউসুস, ফরিদা আক্তার, মোঃ নুরুজ্জামান, নুরের ছাপা, মোঃ শাহজাহান, গোপাল চন্দ্র দাস, রেজাউল করিম, ইয়াছমিন বেগম, রাহেলা আক্তার।
সম্পাদনা: আরএইচ/এমইউ
মিরসরাইয়ের আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারী করণের দাবী
